ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশের আকুতি...

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৬ আগস্ট ২০১৬

আকাশের আকুতি...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দরিদ্র পরিবারের ছেলেটির দুচোখে স্বপ্ন ছিল ফুটবল খেলে সংসারের অভাব দূর করবে এবং দেশের জন্য সাফল্য কুড়িয়ে আনবে। কিন্তু অনাকাক্সিক্ষত ইনজুরির কাছে হার মেনে তার সব স্বপ্নই এখন সুদূর পরাহত। যার কথা বলা হচ্ছে তার নাম আশিকুল ইসলাম আকাশ। বয়স ১৮। বাংলাদেশ জাতীয় অনুর্ধ ১৩ এবং অনুর্ধ ১৪ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আকাশ। তার প্লেয়িং পজিশন ফরোয়ার্ড। বাবা মোঃ আজিম। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় একটি গামেন্টসে প্রোডাকশনে কাজ করেন। তার ২ ছেলে। আকাশ ছোট। বড় ছেলে পারভেজ গামেন্টসের কন্ট্রাক্টর। আকাশের বাবা মাসে যা পান, তাই দিয়েই ৪ জনের সংসার চলে টেনেটুনে। পাড়া মহল্লায় খেলতে খেলতে আকাশ একসময় নজরে পড়ে যায় নারায়ণগঞ্জ ফুটবল একাডেমির কোচ দোলনের। তিনি তার একাডেমিতে নিয়ে অনুশীলন করার ব্যবস্থা করে দেন। কিছুদিন পর ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা দলের হয়ে অ-১৩ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলে আকাশ। এই আসরে খেলেই আকাশ নজরে পড়ে জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকা বাফুফে কোচদের। এর কিছুদিন পরই বাংলাদেশ অ-১৩ দলে ডাক পেয়ে মূল দলে সুযোগ পায় সে। ওই বছরই অ-১৩ দলের হয়ে ইরান সফর করে আকাশ। ওই সফরে ২ গোল করে সে। এরপর ২০১২ সালে অ-১৪ দলের নেপাল সফরে ৪ গোল করে। ওই বছরেই সে নারায়ণগঞ্জ ফুটবল একাডেমির হয়ে ঢাকায় পাইওনিয়ার লীগে অংশ নিয়ে ৩ ম্যাচে ১ গোল করে। ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় বিভাগেও খেলে। ২০১৪ সালে বাফুফে আয়োজিত অ-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের হয়ে ২ ম্যাচে গোল করে ১টি। চলতি বছর ঢাকার তৃতীয় বিভাগের দল নারায়ণগঞ্জের রেইনবো এ্যাথলেটিক ক্লাবের হয়ে খেলে ৩ ম্যাচে ১ গোল করে সে। এরপরই ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি। এ বছরের এপ্রিলে একদিন প্র্যাকটিসের সময় ডান পা থেকে বল নিয়ে তা বাঁ পায়ের মাধ্যমে পাস দিতে গিয়ে হঠাৎ করে বাঁ পায়ের হাঁটুতে প্রচন্ড ঝাঁকি লাগে। তীব্র ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয় আকাশ। হাঁটু ফুলে যায়। সাধারণ চিকিৎসার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার তাকে এমআরআই করতে বলেন। রিপোর্টে ধরা পড়ে মারাত্মক ইনজুরির বিষয়টি। বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। লিগামেন্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এম আলী জানান খুব দ্রুতই অপারেশন করতে হবে। ভারতের কোলকাতায় গিয়ে অপারেশন করালে খরচ কম পড়বে। খরচ লাগবে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো। যে ক্লাবের হয়ে খেলতে গিয়ে ব্যথা পেল আকাশ, সে ক্লাব আকাশের চিকিৎসার খরচ দেয়ার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু গত পাঁচ মাসেও নানা টালবাহানা করে আশ্বাসের বাস্তবায়ন করছে না! আকাশের আকুতি, ‘আমি আবার মাঠে ফিরতে চাই। বাবা-মায়ের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে চাই। আমার চিকিৎসার জন্য সমাজের ক্রীড়ানুরাগী সবার সাহায্য চাই।’
×