ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই সমাধানের আশা

নৌশ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষই অনড়, ধর্মঘট চলছে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৬ আগস্ট ২০১৬

নৌশ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষই অনড়, ধর্মঘট চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৌধর্মঘটে দুই বন্দর স্থবির হয়ে পড়লেও একাধিকবার আলোচনায় বসেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না সরকার। নৌ এবং শ্রম মন্ত্রণালয় যৌথভাবে চেষ্টা করেও শ্রমিক-মালিকদের সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে পারছে না। শ্রমিকরা ঘোষণা অনুযায়ী বেতন না পাওয়ার অভিযোগ করছে। বুধবার রাতে শ্রমিক এবং বৃহস্পতিবার সকালে মালিকদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে শ্রমপরিদফতর এবং মন্ত্রণালয়। এতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনে সরকার। কিন্তু উভয় পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় ছিল। যাতে সঙ্কটের সমাধান হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। তবে শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে বলেন মনে করছেন শ্রম পরিদফতরের পরিচালক এফ এম আশরাফুজ্জামান। রাজধানীর শ্রম পরিদফতরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে ‘শীঘ্রই সমাধান হওয়ার’ আশা প্রকাশ করেন তিনি। শ্রম পরিদফতরের পরিচালক আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে বৈঠকে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন ভূইয়া, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল ও উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন। বৈঠক শেষ দুপুর সোয়া ১টার দিকে শ্রম পরিদফতরের পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গত রাতে শ্রমিকদের সঙ্গে বসেছিলাম। আজ মালিকদের সঙ্গে বসেছি। আশা করি, শীঘ্রই এর একটা সমাধান হবে। পরবর্তী উদ্যোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আবারও বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। মালিক সমিতি আমাকে পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক। বৈঠকের পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার সভাপতি মাহবুব বলেন, আমরা আলোচনা করেছি। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না, পরবর্তীতে জানাব। বৈঠকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আমিনুল ইসলামও ছিলেন। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় একই স্থানে সরকারের প্রতিনিধি এবং মালিক ও শ্রমিকদের সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হলেও মালিকরা যাননি। বুধবার রাতে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ‘কাক্সিক্ষত মজুরি’ না পেলে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অহেজুল ইসলাম বুলবুল। চট্টগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস জানায়, মজুরি বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটের তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। ঢাকায় সরকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিক পক্ষের আলোচনায় কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এ ধর্মঘট আর কতদিন অব্যাহত থাকে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহন এভাবে বন্ধ থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের বাজারেও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান এসেছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেডবডিগুলোর পক্ষ থেকে। এদিকে লাগাতার ধর্মঘটের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে। লাইটার জাহাজ বন্ধ থাকায় বড় জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না। এতে করে ওই জাহাজগুলোকে যেমন ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে আমদানিকারকরাও হয়েছেন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবারও বহির্নোঙরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ থাকে। ফলে মাদার ভেসেলগুলোকে অলস ভেসে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সাগরে আমদানির পণ্যবাহী জাহাজের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। আমদানিকারকরাও উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলীর ১৬টি ঘাটে এখন নেই শ্রমিকদের হাঁকডাক। লাইটার জাহাজগুলো অলস থেমে আছে। ৬ শতাধিক লাইটার জাহাজ অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহন থেকে বিরত থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে যেমন খাদ্যপণ্য, সার, সিমেন্ট ক্লিঙ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের জট বাড়ছে তেমনিভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা পণ্যের সরবরাহ পাচ্ছে না। এতে করে এক ধরনের সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তবে তেলবাহী অয়েল ট্যাঙ্কারগুলোর চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে নৌযান ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষসংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বেতন বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকদের দাবির ন্যায্যতা থাকতে পারে। কিন্তু এভাবে সবকিছু অচল করে দাবি আদায়ের যে আন্দোলন তা ক্ষতিকর। তিনি এ ব্যাপারে একটি সমাধানে আসার জন্য সরকার, জাহাজ মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত, মজুরি বৃদ্ধি ছাড়া শ্রমিকদের বাকি তিনটি দাবি হচ্ছে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ, নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও দস্যুতা বন্ধ এবং জলপথের নাব্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। মংলা ॥ মংলা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিরপূরণ পুনর্নির্ধারণ, নদীর নাব্য রক্ষা ও নৌপথে সন্ত্রাসী-ডাকাতি বন্ধের দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও মংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নৌযান শ্রমিকদের এই কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ওয়েজুল ইসলাম বুলবুল। বরিশাল ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, নৌযান শ্রমিকদের তৃতীয় দিনের অব্যাহত ধর্মঘটে অচল রয়েছে বরিশাল নৌবন্দর। সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ কোথাও ছেড়ে যায়নি। পাশাপাশি তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার নৌ-বন্দরে যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। এদিকে বাড়তি পুলিশের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে এমভি সুরভী-৯, সুন্দরবন-৭, পারাবত-৯-১১সহ ৪টি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দরে বার্দিং করেছে। এ লঞ্চ চারটি আবার যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নৌবন্দর এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
×