ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মাষ্টমীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ঢাকেশ্বরীতে গীতাযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৬ আগস্ট ২০১৬

জন্মাষ্টমীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ঢাকেশ্বরীতে গীতাযজ্ঞ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা আয়োজনে পালিত হলো মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। দিনটি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনাসভা, র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ছিল বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা। রাজধানীতে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে দুইদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উৎসবের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে সকল মানুষের মঙ্গল কামনায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত গীতাযজ্ঞে হাজারো ভক্তের সমাগম ঘটে। বিকেলে মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমীর মিছিলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যোগ দেন লাখো ভক্ত। রাতে ছিল শ্রীকৃষ্ণ পূজার আয়োজন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঢাকেশ্বরীতে গীতাযজ্ঞ ॥ শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শ্রী শ্রী গীতাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে এ গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। যজ্ঞ পরিচালনা করেন সীতাকু-ের শংকর মঠ ও মিশন। আগামীকাল ২৭ আগস্ট শনিবার মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান হবে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সন্ধ্যায় থাকছে পুরস্কার বিতরণ ও বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ॥ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে বিকেলে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর পলাশী হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবন, গোলাপ শাহ মাজার থেকে নবাবপুর হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। পলাশীর মোড়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং উদ্বোধক ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিচিত্র সাজে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। অনেকে ধারণ করেছেন হরিণের প্রতিকৃতি। হাতি আর ঘোড়ার ওপর আরোহণ করে পতাকা হাতে উৎসব পালন করতে দেখা গেছে অনেককে। ঢোলের বোল, ব্যান্ডের বাজনা নিয়ে নেচে গেয়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন পালন করেছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে শত শত ট্রাকে ভক্তরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রা শুরুর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এই ব্রত নিয়ে আসেন শ্রীকৃষ্ণ। যুগে যুগে এসব মহাপুরুষদের আবির্ভাব হয় যারা সমাজে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দেশে ধর্মান্ধতা ও জঙ্গীবাদের জন্ম দিয়েছে। এ অপশক্তি দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে জঙ্গী হামলাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং জঙ্গীবাদের মূল উৎপাটনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা সকল অপশক্তিকে রুখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও চার মূলনীতিকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে আমু বলেন, তা পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতে শ্রীকৃষ্ণের যেমন এ মর্তে আবির্ভাব ঘটেছিল, তেমনি দেশকে দুষ্ট জঙ্গীবাদ মুক্ত ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে আল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বেছে নিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাই সব ধর্মের মানুষের প্রতি তিনি শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করারও আহ্বান জানান। আলোচনা পর্ব শেষে ঢাকেশ্বরী পলাশী প্রাঙ্গণ থেকে জন্মাষ্টমীর ঐতিহাসিক শোভাযাত্রাটি বের হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা ধর্মীয় নানা সাজ-সজ্জাসহ বাহারি সাজে সেজে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ প্রাঙ্গণ হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবন, গোলাপ শাহ মাজার গুলিস্তান ও নবাবপুর দিয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। ঢাক, ঢোল, বাঁশি ও মৃদঙ্গের তালে তালে নানা বয়সী নারী-পুরুষ বাহারি সাজে সেজে এবং নেচে-গেয়ে সুসজ্জিত রথ, হাতি, ঘোড়া, গাড়ি, ভ্যানগাড়ি ও শতাধিক ট্রাকে করে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। উদ্বোধন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসবে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেøাগান ধর্ম যার যার উৎসব সবার একথা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোঃ সেলিম, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল। আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব) সি আর দত্ত। সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার রায়। হিন্দু মহাজোট ॥ বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কৃষ্ণপূজা, আলোচনাসভা ও রমনা কালী মন্দির থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। পলাশীর মোড় হয়ে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে ভিক্টোরিয়া পার্কে এসে র‌্যালিটি শেষ হয়। শোভাযাতা পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হিন্দু মহাজোটের সহ-সভাপতি ও জন্মাষ্টমী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুভাষ সাহা। আলোচনায় অংশ নেন নির্বাহী সভাপতি দিনবন্ধু রায়, মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, কপিল কৃষ্ণ ম-ল, দেবাশীষ ম-ল, সাধন লাল দেবনাথ, মণিশঙ্কর হালদার, সুমন কুমার রায়, দেবাশীষ সাহা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন এর জন্য ভগবান বিষ্ণু বার বার এই ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে মানুষকে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন বিষয়ে শিক্ষা দেন। আজ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দুষ্টের অত্যাচারে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির মুখে।
×