ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল নিয়ে খালেদার আন্দোলনের ডাক নতুন ভুলের সূচনা ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ আগস্ট ২০১৬

রামপাল নিয়ে খালেদার আন্দোলনের ডাক নতুন ভুলের সূচনা ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, খালেদা জিয়ার ভুলের কারণে বিএনপি আজ গণবিচ্ছিন্ন। দলটির ভেতরেও আজ বিদ্রোহ। তার ভুলেই দলটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার কমলাপুরে বিআরটিসি বাস ডিপোতে বিআরটিসি শ্রমিক লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তৃতা করছিলেন। অপর এক অনুষ্ঠানে দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্না সম্পর্কে বলেন, বিএনপি কান্নার দল না। তারা জাতিকে বারবার কাঁদিয়েছে। এ কান্না লোক দেখানো। জাতি এতে ভুলবে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বক্তৃতা করছিলেন। শ্রমিক লীগের আলোচনায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়াই পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের বেনিফিশিয়ারি। তারাই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রক্ষায় ইনডেমনিটি আইন ধারণ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, খুনীদের চাকরি দিয়ে বিদেশে পুনর্বাসনও করা হয়। খালেদা জিয়াই ঘাতকদের সংসদে বসিয়েছিল। একাত্তরের গণহত্যাকারীদের, পঁচাত্তরের খুনীদের, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের রক্ষায় যে নেত্রী সচেষ্ট থাকে তার মুখে মানবতার কথা মানায় না। গণহত্যাকারীদের রক্ষাকারীর মুখে দেশ রক্ষার কথা শোভা পায় না। তিনি বলেন, রামপাল ইস্যু নিয়ে তার আন্দোলনের ডাক নতুন ভুলের সূচনা মাত্র। তিনি নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছেন, আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমায় নিরীহ নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষ হত্যা করে ভুল করেছেন, দলের কমিটি করতে গিয়ে ভুল করেছেন। তার নতুন আন্দোলনের ডাকে জনগণ আবারও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে, মানুষের মন থেকে আজও সেই আগুন সন্ত্রাসের বীভৎস চিত্র মুছে যায়নি। আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়ার জামায়াত-শিবির কর্মীরা সারাদেশে লাখ লাখ গাছ কাটার উৎসবে মেতে উঠেছিল, আজ তিনি যখন পরিবেশ রক্ষার কথা বলেন তখন হাসির উদ্রেক হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণ জানে যে দল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল সেই দলের হাতে সুন্দরবন ধ্বংস হতে পারে না। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতামত নিয়ে কয়েক বছর আগেই রামপাল চুক্তি করা হয়েছে। এতদিন পর মাসীর দরদ দেখাতে উনার ঘুম ভেঙ্গেছে। এ প্রকল্পের বিরোধিতা আসলে তার রাজনৈতিক কারণে বিরোধিতা ছাড়া কিছু না। আর রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন তিনি দেশের উন্নয়ন চান না। আসলে তিনি রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছিল তখনও বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাকি বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ভারতের সঙ্গে যখন পানি চুক্তি করা হচ্ছিল তখন বলা হলো দেশ মরুভূমি হয়ে যাবে। আর আজ উত্তরবঙ্গের মাটিতে বছরে কয়েকবার ফসল ফলে, মঙ্গা শব্দটাই ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেছে। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সরকার ৬২ বছরের পুরনো ছিটমহলের সমস্যার সমাধান করেছে। তাদের দখলে থাকা লাখ লাখ একর জমি আলোচনা করে বাংলাদেশের দখলে নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা। বিআরটিসি শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি আমীর হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের আলোচনায় মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ জাতিকে কাঁদিয়েছিল দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর ১৯ বার হামলা করেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে দেশের মানুষকে আবারও কাঁদায় দলটি। তারা হত্যাকারীর দল। আর হত্যাকারীদের চোখে অশ্রু মানায় না। মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে হানিফ বলেন, ২০০১ সালে আপনাদের দল যখন ক্ষমতায় এসছিল আপনি মন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু তখন যে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই সময় আপনার আবেগ অনুভূতি কোথায় ছিল? এখন আপনার দলের একজন সন্ত্রাসী ঢাকায় রিক্সা চালাচ্ছে দেখে আপনি কান্না করছেন। আপনাদের আমলে তো আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী মানবেতর জীবনযাপন করেছিল। কই সে সময় তো তাদের জন্য আপনার অনুভূতি আসেনি। আপনার মনে তখন আনন্দ ছিল। তাই আপনার দল এ দেশে কান্না করেনি কখনও, দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে সবসময়। বঙ্গবন্ধু হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কী কারণে আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল তার কারণ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করা দরকার। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের মহাসচিব মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
×