ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধের অপেক্ষায় জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব!

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৬ আগস্ট ২০১৬

নিষিদ্ধের অপেক্ষায় জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব!

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পাকিস্তানী জামায়াতের প্রেতাত্মা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত থাকেনি, মুক্তিকামী জনতার ওপর নির্বিচারে নানামুখী বর্বরতা চালিয়েছে জামায়াত। তারা পাক বাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করেছে। সেই জামায়াতকে বর্তমান সরকার নিষিদ্ধ করবে কী করবে না, তা নিয়ে রাজনীতিকসহ সচেতন মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সরকারের বিরোধিতায় রাজনীতির মাঠে বিএনপির শক্তি হচ্ছে জামায়াত। আর রাজনীতিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে বিএনপির ছায়াশক্তি হিসেবে কাজ করছে তারা। একে অপরের পরিপূরক হয়ে দীর্ঘ সময়জুড়ে রয়েছে এ দুটি দল। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতিতে বইছে নতুন হাওয়া। জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়লে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কোন ধরনের সাইড দিতে নারাজ। আবার জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপি চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতেও অনেকটাই অসহায়। এ অবস্থায় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ দুটি দলের পুরনোরা একে অপরকে মোটেও ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকরা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রাজনীতিতে পদার্পণ করেছে তাদের চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন। যেহেতু জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে দেশ-বিদেশে চিহ্নিত হয়েছে এবং সে অপরাধের দায়ে এদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিচার চলছে, কারও কারও মৃত্যুদ- ও আমৃত্যু কারাদ- এবং যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায়ও হয়েছে। সুতরাং যুদ্ধাপরাধীর দায় থেকে জামায়াত কখনও রেহাই পাবে না। জামায়াতের এ অপরাধের দায়ভার নিতে বিএনপির বড় একটি অংশ রাজি নয়। অনুরূপভাবে জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে যারা এ প্রজন্মের তারাও পুরনো নেতাদের এ অপরাধ নিজেদের কাঁধে নিতে অনিচ্ছুক। তাই বর্তমান সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তারা খুব বেশি হতবাক হবে না। প্রয়োজনে নতুন নামে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়ে রেখেছে। এছাড়া এরই মাঝে গোপন ব্যালটে নতুন আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কাকে শীর্ষস্থানীয় পদটি দেয়া হচ্ছে, তা এখনও জানা যায়নি। সূত্র জানায়, ভারতে জন্ম নেয়া সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা। তার দর্শন নিয়েই পাকিস্তান জামায়াত ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনৈতিক তৎপরতা চলে আসছে। দলটি ব্রিটিশ আমলে পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করেছে। অনুরূপভাবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের বিষয়েও বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল। জেনারেল জিয়ার বদৌলতে প্রতিকূলতা কেটে যাওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের শীর্ষ নেতার পদে আবির্ভূত হন গোলাম আযম। যিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারে আমৃত্যু কারাদ- পেয়েছেন। জেলখানায় তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জামায়াতের আরেক নেতা একেএম ইউসুফও আমৃত্যু কারাদ-ে দ-িত হয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া বিচারে ফাঁসিতে ঝুলেছে নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান ও মুজাহিদ। আলবদর নেতা টাকার কুমির হিসেবে চিহ্নিত মীর কাশেম আলীও ফাঁসির দ-ে দ-িত হয়েছেন। সুপ্রীমকোর্টের এ রায় নিয়ে এখন রিভিউ চলছে। সরকার পক্ষ আশা করছে রিভিউতে মীর কাশেম আলীর রেহাই পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি যে অপরাধ করেছেন সেজন্য তাকে ফাঁসির যে দ- দেয়া হয়েছে সে দ- বহালই থাকবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর বিএনপি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের পক্ষাবলম্বন করলেও পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে কিছুটা গা-ছাড়া ভাব। এ নিয়ে জামায়াত বড্ড নাখোশ। কিন্তু বিএনপির বর্তমান প্রজন্মের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা খোশ মেজাজেই রয়েছেন। কারণ জামায়াতের জন্য বিএনপির রাজনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। যে দলটি এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি উল্টো পাক বাহিনীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে এ দেশের স্বাধীনতাকামীদের ওপর হামলে পড়েছে, মানুষ মেরেছে, মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছে, তাদের সঙ্গে বিএনপির একজোট হয়ে রাজনীতি করাটা অনাকাক্সিক্ষত। কিন্তু এরপরও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে জামায়াতকে নিয়ে তারা রাজনীতির মাঠ গরম করে রেখেছিল বছরের পর বছর। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার পরপর দুই দফায় ক্ষমতায় আসার পর যে নীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীবাদীদের শক্তি নিয়েই বিএনপির যেহেতু অবস্থান, সেক্ষেত্রে এই দুই অঙ্গ একধরনের অকার্যকর হতে চলতে থাকায় দলটির অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। এ নিয়ে দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও জামায়াতের পাশাপাশি জঙ্গীবাদীদের মদদ দিতে রাজি নয় দলটির বিরাট একটি অংশ। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি সমর্থন দিলেও জঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। সূত্র জানায়, বিষয়টি জামায়াতের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে সমর্থক পর্যায় পর্যন্ত এখন পরিষ্কার। সঙ্গতকারণে তারা শুধু অপেক্ষায় রয়েছে কখন জামায়াতকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেই তারা নতুন নামে রাজনীতির ময়দানে নামবে। যেখানে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কোন স্থান হবে না। বর্তমানে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা একাধিক। সঙ্গতকারণে সহজভাবে এরা রাজনীতিতে নতুন করে মাঠে নামার সুযোগ নিতে পীড়াদায়ক হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
×