ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাত বছরে এডিপির আকার বেড়েছে তিন গুণ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৬ আগস্ট ২০১৬

সাত বছরে এডিপির আকার বেড়েছে তিন গুণ

আনোয়ার রোজেন ॥ বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে গত সাত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার বেড়েছে তিনগুণ। যা আগের যে কোন সাত বছরের তুলনায় বেশি। এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হারও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও গত সাত বছরে এই হার ৯১ থেকে ৯৬ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এটিও আগের যে কোন সাত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে বাজেট বৃদ্ধির হার, বৈদেশিক প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি ধারবাহিকভাবে বেড়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব এডিপির ক্ষেত্রেও পড়েছে। তবে দ্রুত উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ডবল ফিগারে (১০) নিয়ে যেতে এডিপির আকার আরও বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে এডিপির শতভাগ যৌক্তিক বাস্তবায়ন ও গুণগত মান নিশ্চিত করাও এক্ষেত্রে জরুরী বলে মনে করছেন তারা। ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল- এই ২৬ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারই ক্ষমতায় ছিল। মাঝখানে পালাবদলের সূত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কয়েক বছর ক্ষমতায় ছিল। রাজনৈতিক দলের সরকার আমলে এডিপির আকার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এডিপির আকার বেশি বেড়েছে। এই সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে গত সাত বছরে এডিপির আকার তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। এই সাত বছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে যথাক্রমে ৯১ শতাংশ, ৯২ শতাংশ, ৯৩ শতাংশ, ৯৬ শতাংশ, ৯৫ শতাংশ, ৯১ শতাংশ এবং সাড়ে ৯২ শতাংশ। বছর শেষে এডিপির জন্য বরাদ্দ অর্থ যতটা খরচ করা যায়, সেটাই এডিপির প্রকৃত বাস্তবায়ন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন করা গেছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা (৯১ শতাংশ)। আর সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এডিপির জন্য প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা (সাড়ে ৯২ শতাংশ) খরচ করা গেছে। এ হিসেবে এই সময়ে টাকার অঙ্কে এডিপি বাস্তবায়নও হয়েছে তিনগুণের বেশি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ও অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি জনকণ্ঠকে বলেন, মূল্যস্ফীতি, টাকার মূল্যামান, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় এডিপির বাস্তবায়ন তিনগুণ হয়েছে- এমনটা বলার সুযোগ নেই। তবে তিনগুণ না হলেও এডিপির বাস্তবায়ন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে এডিপি বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাস্তবায়নের পরিমাপ কেবল টাকার অঙ্কে করলে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। সত্যিকার অর্থে কি চাওয়া হয়েছিল, আর প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে কী পাওয়া গেল সেটি বিবেচনায় আনা উচিত। এজন্য বিভিন্ন প্রান্তিকে এডিপির যৌক্তিক বাস্তবায়ন ও কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। এডিপির যথাযথ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে বলেন, এডিপির শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গতি আনার জন্য সংস্কার প্রয়োজন। এটি চলমান রয়েছে। আর প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য আইএমইডির সক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য আইএমইডির জন্য হেলিকপ্টার কেনার চিন্তাভাবনা চলছে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৫-১৬ এই সাত অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৭৮৭ টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। আর এই সময়ে একনেকের অনুমোদন পেয়েছে মোট ১ হাজার ৪৯৬ টি প্রকল্প। সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছরে এডিপির আকার খুব বেশি বাড়েনি। ক্ষমতায় এসে ২০০১-০২ অর্থবছরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ১৯ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচী নেয়। আর ক্ষমতায় থাকার শেষ বছরে অর্থাৎ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এর আকার হয় ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিএনপি আমলে এডিপি বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ হার ছিল ৯০ শতাংশ।
×