ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোর্চা ছেড়ে তৃণমূলে জিটিএ চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ২৫ আগস্ট ২০১৬

মোর্চা ছেড়ে তৃণমূলে জিটিএ চেয়ারম্যান

অনলাইন ডেস্ক ॥ মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন বিমল গুরুঙ্গ। তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টও করেন। গত কয়েক দিন ধরে নড়বড়ে প্রদীপ প্রধানের দলত্যাগ শেষ পর্যন্ত ‘গোল-লাইন সেভ’ করলেন গুরুঙ্গ, এটাই তার পর পাহাড়ে চাউর হয়ে যায়। কিন্তু সেই জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবারই মোর্চা ছাড়েন জিটিএ-র চেয়ারম্যান প্রদীপ। বুধবার তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরে মোর্চা নেতৃত্ব তাঁকে দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তত ক্ষণে ধাক্কা যা লাগার, লেগে গিয়েছে। কার্শিয়াং টয় ট্রেন স্টেশনের কাছে ভরা জনসভায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে শাসক দলে যোগ দেন প্রদীপ। আর তার পরেই আন্দোলনে নেমে পড়ে মোর্চা। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আলোচনা শুরু করার দাবিতে রিলে অনশন বসে যায় মোর্চার ছাত্র সংগঠন। নাটকের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। এর কিছু পরে দার্জিলিঙের চকবাজারে মোর্চা নেতা রোশন গিরির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে তাঁর কুশপুতুল পোড়ায় অস্থায়ী শিক্ষকদের একটি সংগঠন। যাকে তৃণমূলের পাল্টা চাপ বলেই মনে করা হচ্ছে। গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে ফের সামনে আনতে কয়েক দিন আগেই দলের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন গুরুঙ্গ। সেই সঙ্গে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করা যায় কি না, তা নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা চেয়েছেন তিনি। এ দিনই উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতা ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রদীপ প্রধানের তৃণমূলে যোগদানকে স্বাগত জানিয়ে তিনি শিলিগুড়ি ছাড়ার আগে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে যান মোর্চা নেতৃত্বকে। জানান, পাহাড়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা হলে গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে কড়া আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘‘পাহাড়ে শান্তি আছে। শান্তি থাকবে।’’ শান্তি বিঘ্নিত করতে দিল্লি থেকে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। এই নিয়ে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে পাল্টা কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হয়েই চলেছে। তাতেই অনেকের হিংসে হচ্ছে।’’ এ দিন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন প্রদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘মোর্চায় থেকে কিছু করতে পারছিলাম না। উল্টে ওদের দুর্নীতি দেখতে দেখতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলাম। তাই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত। এ বার কার্শিয়াঙের জন্য কিছু কাজ করতে পারব।’’ এর জবাবে গুরুঙ্গ বলেছেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ সব দেখছেন। সময় হলই জবাব দেবেন।’’ বিধানসভা ভোটের আগে মোর্চা ছেড়েছিলেন হরকাবাহাদুর ছেত্রী। তার ফলে কালিম্পঙে মোর্চা যে কমজোরি হয়েছে, সেটা বিধানসভা ভোটের ফলেই স্পষ্ট। এ বারে প্রদীপ প্রধান যোগ দেওয়ায় পাহাড়ের অঙ্কে আরও হেরফের হতে পারে বলে মনে করছেন এখানকার রাজনীতিকরা। আগামী জুলাইয়ে জিটিএ-র মেয়াদ ফুরোবে। তার আগে একাধিক পুরসভা ও পঞ্চায়েতে ভোট রয়েছে। সব কিছুর কথা মাথায় রেখেই পাহাড়ে ক্রমে গুরুঙ্গকে কোণঠাসা করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, বলছেন তাঁরা। একদা সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক, পরে জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিঙ্গের ঘনিষ্ঠ। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে কার্শিয়াং বাজারের সভা থেকে মোর্চার উত্থান। তখন থেকেই এই দলের সহ-সভাপতি। বরাবর পাহাড়ের রাজনীতিতে সামনের সারির মুখ প্রদীপের বিরুদ্ধে আবার একাধিক ফৌজদারি মামলাও ঝুলছে। মোর্চার আন্দোলনের সময় পুলিশ হেফাজত থেকে অভিযুক্তকে ছিনতাই করে গুম, হামলা, অবরোধ ছাড়াও মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে নাম রয়েছে প্রদীপের। তৃণমূল নেতারা অবশ্য বলেছেন, আইন আইনের পথে চলবে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×