ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিক ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে ব্রাজিল?

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৫ আগস্ট ২০১৬

অলিম্পিক ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে ব্রাজিল?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেক শঙ্কা ও বিতর্কের মাঝেও শেষ পর্যন্ত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে রিও অলিম্পিক গেমস। এখন চলছে সাফল্য-ব্যর্থতার হিসেব-নিকেশের পালা। কতটুকু সফল হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ যজ্ঞ, আর ব্যর্থতার পাল্লাই বা কেমন? গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল। অথচ অলিম্পিক আয়োজনে বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে দেশটিকে। কোন কোন বিশেষজ্ঞর ধারণা, অংকটা ১২০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এই বিশাল ব্যয়ের একটা বড় অংশ বহন করতে হচ্ছে জনগণকেই। এ কারণেই প্রশ্নটা সামনে এসেছে, অলিম্পিক থেকে আসলে পেল কি ব্রাজিলের জনগণ। এটা প্রমাণিত, দেশটির অনেক মানুষের মনে আজ স্বস্তি নেই। অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশটি। এতসব সমস্যার কারণে দেশটির বিশাল জনগোষ্ঠী চাইনি অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হোক। তাদের মতে, এতে কোন লাভ নেই। বিশেষ মহল শুধু সুবিধা ভোগ করবে। এসব কারণে গেমস চলাকালীন সময়েই প্রতিবাদ হয়েছে রিওতে। অবশ্য ২০০৯ সালে অলিম্পিক আয়োজনের স্বাগতিকদের লড়াইয়ে রিও ডি জেনিরো জিতেছিল বিশাল ব্যবধানে। শেষ রাউন্ডে স্পেনের মাদ্রিদকে দ্বিগুণেরও বেশি ভোটে হারানোর পর আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন ব্রাজিলের ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ব্রাজিলকে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর সারিতে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ব্রাজিলের যে সুসময় আসছে, আজ সারা পৃথিবী তার স্বীকৃতি দিয়েছে।’ অলিম্পিকের সৌজন্যে ব্রাজিলে সুশাসন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন তিনি। সাত বছর আগে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) বিশেষ সভায় বলা লুলা দা সিলভার কথাগুলো এখন ফাঁকা বুলি বলে মনে হতে পারে অনেক ব্রাজিলিয়ানের! অনেক সমস্যা, বাধা-বিঘœ, প্রতিকূলতা ছিল। এরপরও অবশ্য অলিম্পিক মোটামুটি ভালভাবেই আয়োজন করেছে ব্রাজিল। সবচেয়ে বড় সাফল্য, অলিম্পিক চলাকালীন সময় কোন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। ৮৫ হাজার পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে গড়া বিশাল বাহিনী নিñিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে রেখেছিল গেমস ভিলেজকে। অথচ দুই বছর আগে আইওসির একজন সিনিয়র সদস্য জানিয়েছিলেন, অলিম্পিক আয়োজনের জন্য ব্রাজিলের মতো এত খারাপ প্রস্তুতি তিনি আর দেখেননি। রিও ডি জেনিরো ঠিকমতো অলিম্পিক আয়োজন করতে পারবে কিনা, সেই শঙ্কা অবশ্য তার আগেই দেখা দিয়েছিল। তবে অলিম্পিক পার্কের ভেতর দিয়ে নতুন মেট্রোলাইন নির্মাণসহ অনেক কাজ শেষ হয়েছে যথাসময়ে। সব মিলিয়ে আয়োজনের দিক দিয়ে রিও অলিম্পিককে সফল বলছেন অনেকেই। এরপরও অনেকের কাছে প্রশ্ন আছে, আসলেই সফল কিনা রিও অলিম্পিক। এই যেমন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অলিম্পিকের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে একটি বইয়ের লেখক জুলস বয়কফ বলেন, এটা ঠিক যে কোন বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়া সফলভাবেই অলিম্পিক সম্পন্ন হয়েছে। তবে রিওর সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ধরলে এই অলিম্পিককে সফল বলা যাবে না। বিশাল এক সুযোগের অপচয় হয়েছে। ২৫ বছর বয়সী ছাত্রী লুসিয়ান কাব্রালের মতে, অলিম্পিকের অবকাঠামো নির্মাণে মোট কত খরচ হয়েছে আমরা তা জানি না। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমি বলতে চাই না যে পুরো আয়োজন ব্যর্থ ছিল। তবে এমন অনেক কিছু ছিল যা ভাল হতে পারত। অলিম্পিকের সমাপনীর রাতেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। ওই রাতে রিওর অনেক এলাকায় ছিলনা বিদ্যুত। এ কারণে রাতের অন্ধকারে আতশবাজির আলোর রোশনাই দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয় শহরটির অনেক নাগরিককে। এসব কারণেই প্রশ্ন অনেকর, অলিম্পিক তাদের জীবন থেকে অন্ধকার দূর করবে, নাকি আরও দুর্দশা বয়ে আনবে?
×