ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাহিদা না থাকলেও শেয়ারের যোগান বৃদ্ধিতে তারল্য সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৫ আগস্ট ২০১৬

চাহিদা না থাকলেও শেয়ারের যোগান বৃদ্ধিতে তারল্য সঙ্কট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি বছরে পুঁজিবাজারে এসেছে পাঁচটি নতুন কোম্পানি। চাহিদা না থাকলেও বাজারে শেয়ারের যোগান বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নতুন কোম্পানিগুলো হলো : ড্রাগন সোয়েটার, ডরিন পাওয়ার জেনারেশন এ্যান্ড সিস্টেম লিমিটেড, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইভিন্স টেক্সটাইল ও একমি ল্যাবরেটরিজ। নতুন শেয়ার আসলেও বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়েনি। বরং গত ৮ মাসে ডিএসইর সার্বিক সূচকটি কমেছে ৬ পয়েন্ট। গত ১ জানুয়ারি ডিএসইর সার্বিক সূচক ছিল ৪ হাজার ৫৬০ পয়েন্ট। বুধবারে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৫৪ পয়েন্ট। এই সময়ের মধ্যে ডিএসইতে মোট ২৪ কার্যদিবসে ৫শ’ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারে শেয়ারের যোগান বাড়িয়েছে। ফলে বাজারে আরও নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। নতুন তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ড্রাগন সোয়েটার নামের কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া তথ্য কণিকায় ইপিএস গণনায় ভুল থাকলেও ঠিকই অনুমোদন পেয়ে যায়। কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে মোট ৪ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৪০ কোটি টাকা তুলে নেয়। এছাড়া টাকা উত্তোলনে সব কোম্পানিকে পেছনে ফেলেছে বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান সিনহার কোম্পানি একমি ল্যাবরেটরিজ। বুক বিল্ডিং আইনে কোম্পানিটি বাজার থেকে ৪০৯ কোটি টাকা তুলে নেয়। শুধু তাই নয়, তালিকাভুক্তির পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনায় থাকে কোম্পানিটি। প্রথম দিনে কোম্পানিটির নিজেরই লেনদেন ১শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু পরদিন থেকেই কোম্পানিটির জৌলুস কমতে থাকে। এখন প্রতিদিনই দর কমছে কোম্পানিটির। অন্যদিকে বীমা খাতের আলোচিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নামের কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন না নিয়ে আইপিওতে আবেদন করে। শুধু তাই নয়, মূলধন বাড়ানো নিয়েও কিছুটা জটিলতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জরিমানা করে কোম্পানিকে আবারও টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হয়। কোম্পানিটি বাজার থেকে অভিহিত মূল্যে ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা তুলে নেয়। এখন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ১২.৫০ টাকা। এছাড়া ইভিন্স গ্রুপের ইভিন্স টেক্সটাইলের কোম্পানিটি বাজার থেকে ১৭ কোটি টাকা উত্তোলন করে। ২০১৬ সালে জ্বালানি এবং শক্তি খাতের ডরিন পাওয়ার জেনারেশন এ্যান্ড সিস্টেম নামের কোম্পানি বাজার থেকে ৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটি বাজার থেকে প্রিমিয়াম বাবদ ৩৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে। টাকা উত্তোলনের পরেই কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে লোকসানে যায়। যদিও পরবর্তী প্রান্তিকে কোম্পানিটি লোকসান কাঠিয়ে ওঠে। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ৫৯.৪০ টাকা। এদিকে চাহিদা না থাকলেও এভাবে শেয়ারের যোগান বাড়ানোকে কোনভাবেই যুক্তযুক্ত নয় বলে মনে করছেন একাধিক বিনিয়োগকারী। সাইদুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, বাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়ানোর কোন পরিকল্পনাই কমিশনের নেই। তাদের কাজ শুধু বাজারে আইপিও অনুমোদন দেয়া। তবুুও আইপিওর মান খুবই খারাপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজার যখন পড়ছে তখন কোনভাবেই নতুন শেয়ার অনুমোদন যায় না। কারণ এতে বাজারে আরও তারল্য সঙ্কট বাড়ে। কারণ আইপিও শেয়ারধারীরা সাধারণত শেয়ার বিক্রি করে টাকা নিয়ে বের হয়ে যায়। ওই টাকা আরও বাজারে ফিরে আসে না।
×