ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুব্রতা রায়

বন্ধুত্ব ও ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৫ আগস্ট ২০১৬

বন্ধুত্ব ও ভালবাসা

মানুষের সুন্দর মন যতদিন থাকবে ততদিন মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে। গ্রামেগঞ্জে, ছোট শহরে সাধারণ মানুষ আজও মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ত্বকির জন্য-তনুর জন্য তো সারা বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছিল। তবে সম্প্রতি সমাজের বিরাট একটা অংশ প্রতিবেশীর বাড়িতে, রাস্তায় নানান দুর্ঘটনাসহ চোখের সামনে ঘটতে দেখা বড় আকারের খুনের ঘটনায়ও নির্বিকার থাকছে। অথচ মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই যদি ধর্ম হয় তাহলে এর ব্যত্যয়ের চরম প্রকটতা কেন? বিশেষ একটি বা দুটি কারণে নিশ্চয়ই নয়, তারপরও মোটাদাগে সামাজিক টানাপোড়েন ও অবক্ষয়ের জন্য বাণিজ্যিক রাজনীতি, পুঁজিবাদের চরম বিকাশসহ প্রত্যেক মানুষের মানবিক ভূমিকার নির্লিপ্ততা দায়ী বলে আমি মনে করি। দেশপ্রেম বোধহীন জীবন মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে, মানুষটি নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, ক্ষমতা, শ্রেষ্ঠত্বের বাসনা ছাড়া অন্যের ভাল থাকবার কথা নিয়ে ভাবতেই পারে না, যেখানে আমি ছাড়া আমরা ও আমাদের শব্দটির কোন ঠাঁই হয় না। অথচ একজন সত্যিকার দেশপ্রেমী মানুষ দেশের প্রতিটি মানুষের উন্নত জীবনের জন্য ভাববেন- ভালবাসবেন প্রতি নাগরিককে। যেভাবে তিনি তাঁর বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ ও কাজে সাহায্যকারী মানুষটির নাগরিক ও মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকারকে সুনিশ্চিত করবেন, তেমনিভাবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার সকল মানুষই হবে তাঁর আপনজন, তাদের প্রতি বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়ানো নিশ্চিত একটি কাজ হয়ে যায়। আমরা দেখেছি দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, স্বজনপ্রীতি, সুশাসনের অভাব ও সর্বোপরি দুর্নীতির জয় জয়কার অভিযাত্রা মানুষকে কর্মবিমুখ করে তুলেছে, স্বার্থপর করে তুলেছে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছেটাকে গলাটিপে হত্যা করেছে। তারপরও কিছু মানুষ বিপদে এগিয়ে আসেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেন বিপদে পাশে দাঁড়ানোর যন্ত্রণাদায়ক ও করুণ পরিণতির। তাইতো মানুষ নিজেকে বিপদে ফেলতে আর অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে চায় না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাকারী ব্যবস্থাপনা বা মানুষ আগামীতে আরও সমস্যায় পড়বে বলে মনে হয়। এখন প্রয়োজন পরিবর্তন ও সংস্কারের। স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতি মানুষ, প্রতি পরিবারের ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে প্রথমে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া দরকার সকল রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রপরিচালকগণের। হলিস্টিক এ্যাপ্রোচে সরকারের প্রতিটি সেক্টরকে দক্ষতার সঙ্গে নিজ দায়িত্বটুকু পালন করে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখা আজ সময়ের দাবি। যেদিন অফিস বা অন্যত্র লাইট, ফ্যান, এসি অপ্রয়োজনে চলতে দেখলে দেশের সম্পদ অপচয় হচ্ছে ভেবে সুইচটি বন্ধ করে দেব, পৌরসভার পানির ট্যাপটির অবিরাম পানিপড়া দেখে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হব, গ্যাস ব্যবহারে সচেতন হব, খাবার অপচয় থেকে বিরত থাকব সেদিন নিশ্চয়ই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে শিখব। বিশ্বাস করতে চাই, মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, সমাজে একা বড় হলে সেবা-সুবিধা পাওয়া যায় কিন্তু বন্ধুত্ব ও ভালবাসা নয়। বন্ধুত্ব ও ভালবাসায় রয়েছে অনাবিল আনন্দ- উচ্ছ্বাস- ভাল লাগা যা শুধু অন্যের পাশে দাঁড়ালে লাভ করা যায়। কুড়িগ্রাম থেকে
×