ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইব্রাহীম রাসেল

মানুষকেই মানুষের ভয়!

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৫ আগস্ট ২০১৬

মানুষকেই মানুষের ভয়!

মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে থাকবে, এমনটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখতে পাচ্ছি ‘মানুষকেই মানুষের যত ভয়’। আমরা যতটা না বন্যপশু বা হিংস্র জন্তু-জানোয়ার থেকে ভীত, তার চেয়ে অধিক ভীত বা আতঙ্কিত মানুষ থেকে। মানুষের নৈতিকতা আর মানবিকতার এতটা অবক্ষয় হয়েছে যে, পাশের মানুষটিকেও আজ আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। গ্রামে হয়ত এখনও মানুষে মানুষে কিছুটা নির্ভরতা রয়েছে। কিন্তু আমরা যারা শহরে থাকি, বিশেষ করে ঢাকা শহরে, তারা পরস্পর পরস্পরে ওপর এতটুকু নির্ভরতা বা আস্তা রাখতে পারছি না। যেটুকু রাখি তা হয়ত বাধ্য হয়েই। চলার পথে, হোটেলে, বাসে, কর্মস্থলে সবসময় একটা সন্দেহ-শঙ্কা শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকে। কথা ছিল মানুষ-মানুষের পাশে থাকবে, বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে। সকল ধর্মও তাই বলে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন- ‘গাহি সাম্যের গান-/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।/নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,/সব দেশে সবকালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’ ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে আমরা পড়েছিলাম বা এখনও যারা পড়ছে- কবি জসীমউদ্দীনের ‘সবার সুখে’ কবিতায়-‘সবার সুখে হাসব আমি/কাঁদব সবার দুখে,/নিজের খাবার বিলিয়ে দেব/অনাহারীর মুখে।’ কবি কামিনী রায়ের ‘সুখ’ কবিতার শেষ দুই চরণ- ‘সকলের তরে সকলে আমরা,/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’ বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখে মনে হয় আমরা শুধু পরীক্ষায় নম্বর পাবার জন্যই এসব পড়েছি। এর থেকে বাস্তব জীবনে শিক্ষার কিছু গ্রহণ করিনি। একটা সময় ছিল বাঙালীরা পরস্পরের বিপদে-আপদে ছুটে যেত। চলার পথে অপরিচিত জন কিংবা পরিচিত আত্মীয়স্বজন যে কারও বিপদে মানুষ মানুষের পাশে থাকত। আর্থিক, কায়িক, মানসিক সকল সঙ্কটে সর্বস্ব দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত। আজকাল কারও বিপদে কেউ সহজে এগিয়ে আসতে চায় না। মানুষ নিজে বিপদে পড়লে যখন কারও সহযোগিতা পাচ্ছে না, তখন নিজেও কারও বিপদে সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে না। মানুষের বিপদে উপকার করাটা এখন ‘ফাও ঝামেলায়’ পরিণত হয়েছে। এর জন্য একদিকে যেমন আমাদের যান্ত্রিক জীবনের রূঢ়তা, শহুরে জীবন-যাত্রার নির্মমতা অত্মকেন্দ্রিকতা, অনুদারতা দায়ী, ঠিক তেমনি দায়ী আমাদের দেশের আইনী জটিলতা আর আইন রক্ষাকারীদের পেশাদারহীনতা। একটা মানুষ বিপদে পড়ে পথের ধারে চিৎকার করে কাঁদছে। কেউ আগ বাড়িয়ে অজানা এক শঙ্কায় বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে যাচ্ছে না। একদিকে যেমন সংশয় থাকে বিপদগ্রস্ত মানুষটি ধূর্ত হতে পারে, অন্যদিকে শঙ্কা প্রশাসনিক ঝামেলার। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×