ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম

পরোপকারের ব্রত

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৫ আগস্ট ২০১৬

পরোপকারের ব্রত

পিরামিডকে পিথাগোরাস ও ইউক্লিড জ্যামিতিতে কাজে লাগিয়েছেন। পিরামিডকে রাষ্ট্ররূপে কল্পনা করলে রাষ্ট্র শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করলে পিরামিডের পাদদেশে পরিবারের অবস্থান। যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পিরামিড অনন্য পুরাকীর্তির জানান দেয় বিশ্ববাসীকে তাহলে রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত পরিবারের অবস্থানটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা কি অনেকেই খেয়াল করেছেন? আগে আমরা বড় পরিবারে বড় হতে গিয়ে মনটাও বড় তথা উদার হয়েছে সমাজ-পরিবারের অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু বড় পরিবার ভেঙ্গে আত্মকেন্দ্রিক একক পরিবার সৃষ্টি হয়েছে প্রয়োজনের তাগিদেই নয় বরং আত্মসুখের সন্ধানে, একথা অনস্বীকার্যও বটে। শিক্ষার আদি ক্ষেত্রই যদি পরিবার হয়ে থাকে তাহলে সন্তান-সন্তুতিরা আত্মকেন্দ্রিকতাই শিখল প্রথম পাঠে। তাহলে সমাজ নামক পিরামিডের অর্ধাংশ ভগ্নাংশ হতে বাধ্য জ্যামিতির অঙ্কন শৈলী তা বলে। আগে বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে পরীক্ষার সময় নিজ নিজ সন্তানকে অভিভাবক তথা মা-বাবারা উপদেশ দিতেন ভালভাবে প্রশ্ন পাঠ করত সঠিক ও যথাযথ উত্তর দিতে। তখন অভিভাবকরা নির্দ্বিধায় বলে থাকেন পাশের বাড়ির সহপাঠী থেকে অধিকতর ভাল ফলাফল করতে হবে। সন্তান এখন ঐশ্বর্য অর্জনের সোপান বলে আনমনে বিড়বিড় করে বলে থাকে। পরিবার যখন স্টার জলসা নামক ভোগবাদী কর্তৃত্বে মগ্ন থেকে দিবা স্বপ্ন দেখে তখন বাংলার সমাজ ব্যবস্থা হঠাৎ পাল্টে যেতে বাধ্য। অপসংস্কৃতি তথা বিদেশী সংস্কৃতি পারিবারিক সদস্য-সদস্যার মাথা খেয়ে সমাজ ব্যবস্থায় ধাক্কা মেরেছে এতে অবাক হওয়ার কি আছে। সবাকচিত্রই যদি একলা চলো নীতিতে উদ্বুদ্ধ করে মানবমানবীকে এক সময় পাড়ার ছেলে মেয়েরা যারা অবস্থাসম্পন্ন তারা বিগত বছরের বই দিয়ে পরবর্তী ক্লাসের পড়ুয়া গরিব শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করত অনায়াসে। এখন ভাবনা পাল্টে গেছে। অদম্য ঐশ্বর্যপ্রেমী প্রেমিক প্রেমিকাগণ আত্মলিপ্সা মগ্নে বিভোর। তাহলে কিভাবে ‘পরোপকার’ নামক সামাজিক প্রধান ব্রতটি অতি সহজে দেখা মেলা ভার আত্মতৃপ্তিই পূর্ণ তৃপ্তি। ‘পাশের বাড়ির ভাবনা আর না’ বলে যদি আমরা আগামী প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়ে থাকি তাহলে সমাজ ব্যবস্থা কোথায় পাব। পাখি ড্রেস কিনতে না পেরে বাংলার পাখি যদি আত্মহননে জীবন নিপাত করে তাহলে বাকিরাও আমাদের ‘সমাজ ব্যবস্থা’ নামক শৃঙ্খলাকে অর্ধেক হনন করে চলেছে, এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শরৎ বাবুর কথায় বলতে হয়, ‘সবাই চলে গেল পরের স্টেশনে, আমি পড়ে রইলুম এথা।’ পরিবার যদি ক্ষুদ্রতম সংখ্যা হয়, তাহলে তা থেকে বৃহত্তম সংখ্যা খুঁজে বের করতে যাদব বাবুর কাছে গেলেও পাব না, পাটিগণিতের নিয়ম অন্তত তাই বলে। তাই সমাজ নিয়ে ভাবনা আর না, আর না। আনোয়ারা, চট্টগ্রাম থেকে
×