ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বলতায় ইন্টারনেট

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৫ আগস্ট ২০১৬

দুর্বলতায় ইন্টারনেট

ইন্টারনেট বাংলা পরিভাষায় অন্তর্জাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই জালে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশীসহ বিশ্বমানব। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে পাঁচ কোটি ঊনচল্লিশ লাখ। তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এ দেশের মোট জনসংখ্যার বিরান্নব্বই শতাংশ বা চৌদ্দকোটি আশি লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত। তাদের মতে, বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি বিশ লাখ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ। আর ইন্টারনেট বঞ্চিত একক জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পাঁচ নম্বর। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্যবহারে প্রায় সবার নিচে অবস্থান বাংলাদেশের। আর দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু আফগানিস্তানের আগে আছে বাংলাদেশ। নেট ব্যবহারকারী এক শ’ সাতষট্টিটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এক শ’ চুয়াল্লিশ। ভারত, পাকিস্তান, নেপালের মতো সার্কভুক্ত দেশগুলো নেট ব্যবহারে বাংলাদেশ থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে। পাঁচ বছরে নেট ব্যবহারে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে মাত্র চার ধাপ। একই সময়ে ভারত এক শ’ পঁচিশ থেকে ছয়ধাপ পিছিয়ে এক শ’ একত্রিশ এবং পাকিস্তান এক শ’ আটত্রিশ থেকে পাঁচ ধাপ পিছিয়ে একশ’ তেতাল্লিশ নম্বরে এসেছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যা সাত শ’ চল্লিশ কোটির মধ্যে সাত শ’ কোটিই মোবাইল প্রযুক্তির আওতায় রয়েছে। সারাবিশ্বে অনলাইনে যুক্ত ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন শ’ বিশ কোটি। এর মধ্যে উচ্চগতির নেট ব্যবহারকারী এক শ’ দশ কোটি মানুষ। আর নেটবঞ্চিত অফ লাইন জনগোষ্ঠী চার শ’ কোটি। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে ভারতে সবচেয়ে বেশি, এক শ’ ছয় কোটি মানুষ নেট বঞ্চিত। অবশ্য বাংলাদেশে মোবাইল বা সেলফোনে কথা বলার খরচ বিশ্বের অন্যদেশের চেয়ে কম। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা প্রথম এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে ইন্টারনেট খরচ অনেক বেশি। এদেশের মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী নেট প্যাকেজ কিনে ব্যবহার করেন। এ ব্যবহারকারীদের অনেকেই সব সময় নেটে যুক্ত থাকেন না। তিন মাসের মধ্যে একজন ব্যক্তি একবার ব্যবহার করলেই তিনি নেট ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত হন। সে হিসাবে বিটিআরসির পরিসংখ্যানে জনসংখ্যার পঁয়ত্রিশ শতাংশ নেট ব্যবহারকারী। আইসিটি খাতে ত্রিশ বছর আগেও বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থানে খুব একটা পার্থক্য ছিল না। আজ ভারত এক শ’ বিলিয়ন ডলার আয় করে। আর বাংলাদেশ এখনও মিলিয়নের ঘরেই পড়ে আছে। এমনকি জিডিপিও মাথাপিছু আয়ের উন্নতিতে আইসিটি খাতের অবদান সামান্য। এ ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কথা বলছেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ব্যাপক। এ খাতে অর্থায়নেও ঘাটতি নেই। তবে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে এই বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে অভিমত রয়েছে। এমনিতে দেশে ইন্টারনেটের গতি কম। তাছাড়া মূল সেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে গ্রাহকের কাছ পর্যন্ত নেটের সংযোগ পৌঁছতে মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপে দাম বেড়ে যায়, যা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল জনগণের ব্যাপক অংশের কাছে পৌঁছাতে হলে নেট ও প্রযুুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসমতা দূরসহ সকল প্রতিবন্ধকতার অপসারণ জরুরী। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা।
×