ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এবার সরকারী হাইস্কুলে শিক্ষক অসন্তোষ, আজ ঢাকায় সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৫ আগস্ট ২০১৬

এবার সরকারী হাইস্কুলে শিক্ষক অসন্তোষ, আজ ঢাকায় সমাবেশ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রাপ্য টাইম স্কেল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সরকারী হাই স্কুলগুলোতে। সঙ্কট সমাধানের দাবিতে আজ সরকারী ছুটির দিনেই রাজধানীতে জমায়েত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন সারাদেশের সরকারী হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা। শিক্ষকরা অভিযোগ তুলেছেন, শিক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতায় জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণার এক বছর আগেই যোগ্যতা পূর্ণ হলেও প্রাপ্য টাইম স্কেল তারা এখন পর্যন্ত পাননি। সঙ্কটের সমাধান না হলে ভবিষ্যতে পেনশন পেতেও সমস্যা হবে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলছেন, আন্দোলন ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। আজ বৃহস্পতিবার ধানম-ি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে জমায়েত হবেন শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক ও সরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির অন্যতম নেতা মোঃ ইনছান আলী বলেছেন, আজকের জমায়েত তাদের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে হচ্ছে না। সারাদেশের শিক্ষকরা নিজেদের উদ্যোগেই প্রতিবাদ জানাতে, দাবি তুলতে জড়ো হচ্ছেন। হয়ত সেখান থেকে বৃহত্তর কর্মসূচীও দেবেন। এই শিক্ষক নেতা শিক্ষকদের সঙ্কটের কথা তুলে ধরে বলেন, আসলে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাটি ঝুলে আছে। এর সমাধান না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষক সমাজ। সরকারের এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। অষ্টম বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে, যেখানে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়েছে। আর সহকারী শিক্ষকরা টাইম স্কেল পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন ২০১৪ সালে। এ হিসেবে এসব শিক্ষকের এক বছর আগেই টাইম স্কেল সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু দুই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতা, সমন্বয়হীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে গাফিলতিতে হাই স্কুলের শিক্ষকরা এ আর্থিক ও মর্যাদার সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এজন্য তারা এখন লাগাতার আন্দোলন, বিশেষ করে কর্মবিরতি পালনের চিন্তাভাবনা করছেন। বকেয়া সুবিধা পাওয়ার জন্য মামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত সরকারী হাই স্কুলের শিক্ষক নেতারা। শিক্ষকদের এ সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানীর নারিন্দা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জালাল উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, শিক্ষকরা তাদের বহু দিনের বকেয়া টাইম স্কেল নিয়ে উদ্বেগে আছেন। সারাদেশের শিক্ষকদের ভয় এ টাকা কি তারা আদৌ পাবেন, নাকি পাবেন না। শিক্ষকরা তাদের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবেন। সারাদেশের শিক্ষকরাই সমস্যায় আছেন। এদিকে শিক্ষক অসন্তোষের কারণে সারাদেশের সরকারী হাই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, তারা সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন। তবে এখনও সমাধানে পৌঁছতে পারেননি। জানতে চাইলে ‘টাইম স্কেল প্রদান’ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ও মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখনও ফাইনাল (চূড়ান্ত) হয়নি। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। না হলে ভবিষ্যতে শিক্ষকদের পেনশন পেতে সমস্যা হবে। তবে আশা করছি শীঘ্রই এ জটিলতা কেটে যাবে। জানা গেছে, গত ৭ আগস্টের সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। তবে তার আগের সভায় অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। এমন সমন্বয়হীনতায় দ্রুত চেষ্টা করেও কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ জটিলতার নিরসন করতে পারছে না বলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা মনে করছেন। জানতে চাইলে সরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইনছান আলী বলেন, সর্বশেষ সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিষয়টির সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। তাছাড়া অষ্টম বেতন কাঠামোয় টাইম স্কেল সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরা মনে করেন এভাবে আর কালক্ষেপণ চলবে না। দেশের সকল শিক্ষককে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামব। কারণ এটা শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা। গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের এক শিক্ষক তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, নতুন পে স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের পাওনা বহু আগের। শিক্ষকরা টাইম স্কেলের যোগ্য হয়েছেন অনেক আগে। তারপরও দুই মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে আজ জটিলতা। এই শিক্ষক জানান, এবার প্রয়োজনে লাগাতার ধর্মঘট ডাকা হবে। সকল বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে। তবু দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা কাজে ফিরবেন না। মাউশি সূত্র জানায়, অতীতের নিয়মানুযায়ী শিক্ষকদের চাকরির আট বছর পূর্ণ হলে প্রথম টাইম স্কেল (জাতীয় বেতন কাঠামোর নবম গ্রেড), ১২ বছর পূর্ণ হলে দ্বিতীয় টাইম স্কেল (অষ্টম গ্রেড) এবং ১৫ বছর পূর্ণ হলে তৃতীয় টাইম স্কেল (সপ্তম গ্রেড) পেতেন শিক্ষকরা। কিন্তু হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা এই তিন স্কোরের ‘টাইম স্কেল’ সুবিধা থেকেই বঞ্চিত রয়েছেন। জাতীয়করণ ও নতুন স্থাপিত প্রতিষ্ঠানসহ বর্তমানে দেশে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৩৩৫। এসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ১০ হাজার ২০৪। এর মধ্যে কর্মরত শিক্ষক আছেন আট হাজার ৪৬০। আর শূন্য রয়েছে এক হাজার ৭৪৪। এ অবস্থায় টাইম স্কেল বঞ্চিত শিক্ষকরা লাগাতার আন্দোলনে গেলে সব সরকারী হাই স্কুলেই একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মাউশি কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত মাউশির সহকারী পরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস। যদিও তিনি আশা প্রকাশ করেন শিক্ষকদের প্রাপ্য অধিকারের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় অবশ্যই দেখবে এবং শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি বলেছে, শিক্ষকরা টাইম স্কেল পাবেন। কারণ তাদের প্রাপ্যতা হয়েছে ২০১৪ সালে নতুন বেতন স্কেলেরও এক বছর আগে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত দেখে নিশ্চিত করবে শিক্ষকরা আসলে এ সুবিধা পাবেন নাকি পাবেন না। পেলেও কতটুকু সুবিধা পাবেন। ইউজিসিতে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ ॥ ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ কমনওয়েলথ স্কলারশিপ প্রাপ্তদের যুক্তরাজ্য গমনের প্রাক্কালে বুধবার ইউজিসি মিলনায়তনে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান স্কলারশিপ প্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলেন। চেয়ারম্যান কমনওয়েলথ স্কলারশিপ প্রাপ্তদের দেশের সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান। তিনি স্কলারশিপ প্রাপ্তদের যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নকালে তাদের অর্থবহ, শান্তিপূর্ণ এবং সুখী জীবন কামনা করেন। এবছর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে মাস্টার্স, এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য ৫৬ বাংলাদেশী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পেয়েছেন।
×