ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হিলারি কি নিশ্চিত বিজয়ের পথে

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৪ আগস্ট ২০১৬

হিলারি কি নিশ্চিত বিজয়ের পথে

আগামী নবেম্বরের ৮ তারিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থী ডেমোক্র্যাট দলের হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প যে যার নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল এবারের নির্বাচনী লড়াইটা হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক। বলা যেতে পারে হাড্ডাহাড্ডি। সেখানে কে জেতে বলা মুশকিল। কিন্তু এখন দিন যতই যাচ্ছে ততই মনে হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমন হবে না। নির্বাচনে হিলারি জিতবেন। তার এই জয় অনিবার্য মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই নির্বাচনে তিনি অপ্রতিরোধ্য। তাকে হারাবার কেউ নেই। এ অবস্থার জন্য কৃতিত্ব দিতে হয় অবশ্যই একজনকে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প- রিপাবলিকান প্রার্থী। তিনি এ পর্যন্ত যা যা করেছেন, যা যা বক্তব্য দিয়েছেন তাতে নিজের হিতের বিপরীত হয়েছে তার বিনিময়ে শক্তিশালী হয়েছে হিলারির অবস্থান। সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে যে হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে পড়ে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভানিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে দু’জনের এই ব্যবধান মোটামুটি কাছাকাছি। ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যে এই ব্যবধান হিলারির অনুকূলে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কলেজ শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গদের যে গ্রুপগুলো কয়েক দশক ধরে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেয়নি তারা এখন দলে দলে তার পক্ষে এসে ভিড়েছে। তেমনি ভিড়েছে কিছু কিছু রিপাবলিকানও যাদের মধ্যে আছে ৫০ জন রিপাবলিকান নিরাপত্তা গুরুর বেশ কয়েকজন। এরা ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের ঘোরতর নিন্দা করেন যেখানে তিনি বলেছিলেন যে হিলারিকে মেরে ফেলা উচিত। হিলারির সমর্থকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা হলো আরেক মাপকাঠি যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় তিনি এগিয়ে আছেন এবং কতটা এগিয়ে আসেন। ৫১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলে থাকেন যে তারা নির্বাচন নিয়ে খুবই উৎসাহিত বোধ করছেন। এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ৪১ শতাংশ রিপালিকান। তথাপি এই শব্দটার মধ্যে হিলারি সমর্থকদের সবার অনুভূতির প্রতিফলন পাওয়া যায় না। এই সমর্থকরা তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাঁর নীতি ও বক্তব্যের ওপর তাদের প্রত্যয় আছে। একটি প্রতীকী দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় যে কিসিমিতে বেশ কিছু সমর্থক এক সাক্ষাতকারে জানায় যে তারা হিলারির গুণমুগ্ধ যদিও তাদের কারও কারও তার ব্যাপারে বিরূপ ধারণাও আছে। তথাপি তাদের এই আস্থা আছে যে হিলারি ট্রাম্পকে পরাজিত করবেন। ট্রাম্পকে তাদের ঘোরতর অপছন্দ। হিলারির মধ্যে বিশেষ কি গুণ আছে যার জন্য তার প্রতি তাদের এত জোরালো সমর্থন আছে। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তাদের সিংহভাগকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। তবে তার স্বামী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের প্রতি তারা যথেষ্ট দুর্বল। ম্যাক্স নামে এক ডেন্টাল এ্যাসিস্টেন্ট তো সরাসরি বলেই বসেন যে আমেরিকা সেরা প্রেসিডেন্ট যে ক’জনকে পেয়েছে ক্লিনটন তাদের একজন। তবে এবারের নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে হিলারি যে সর্বোত্তম সে মন্তব্যও করেছেন গ্রেগ নামের এক অবসরপ্রাপ্ত মেকানিক। অন্যরা আবার হিলারির কিছু কিছু ব্যাপারে অস্বচ্ছতার দুর্নাম নিয়ে চিন্তিত। তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি নিয়ে। এ প্রসঙ্গে হ্যালি নামে এক অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্ভেন্ট বলেন ‘তাঁর এই আচরণে আমি খুবই হতাশ।’ তার এসব নেতিবাচক দিক সত্ত্বেও ট্রাম্পবিরোধী প্রার্থী হিসেবে হিলারির আবেদন অতি জোরালো। তার একটা কারণ তিনি নারী এবং ডেমোক্র্যাট হিসেবে সমকামিতার সমর্থক। যেমন আমান্দা নামে একজন রিপাবলিকান এবং ছাত্রী মন্তব্য করেছেন : ‘আমি সমকামী, বয়সে তরুণ এবং একজন নারী। হিলারিকে সমর্থন না দিয়ে পারব কি করে।’ আবার নীল নামে এক রিপাবলিকান সমর্থক ও অবসরপ্রাপ্ত ধাত্রীবিশারদ বলেন, ‘হিলারি ভাল প্রার্থী নন। তথাপি তার সঙ্গে চলা যায়।’ কিন্তু দুই প্রার্থী সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের ধারণা যে খুব উচ্চ তা নয়। প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটার বলেন যে, তারা উভয় প্রার্থীদের প্রতি অসন্তুষ্ট। কলেজ শিক্ষিত ৫৬ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ হিলারির প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন। প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার হিলারিকে বিশ্বস্ত মনে করে না। এই ব্যাপরগুলো হিলারির অনুকূলে যায় না। তার পরও সম্ভবত এসবে কিছু যায় আসে না। কারণ ভোটাররা হিলারিকে যতটা অপছন্দ করে ট্রাম্পকে করে তার চেয়েও বেশি। তথাপি হিলারির প্রতি ভোটারদের যতটুকু যা অপছন্দ আছে তার কারণে আগামী আড়াই মাস তার স্নায়ুর ওপর দিয়ে প্রচণ্ড চাপ যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ আগামী আড়াই মাসে ট্রাম্প জানপ্রাণ দিয়ে নিজের অবস্থান ফিরিয়ে এনে পাকাপোক্ত করতে চেষ্টা করবেন। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে হিলারির কতগুলো দুর্বলতা আছে। জনগণের সঙ্গে বিশেষত তৃণমূল পর্যায়ে তার যোগসূত্রটা দুর্বল। বক্তা হিসেবে মোটেই তেমন ভাল নন। অন্তত বক্তৃতা দিয়ে বিশাল লোক জড়ো করার মতো বাগ্মিতা তার নেই। তার অস্বচ্ছ কিছু কারবারের ইতিহাস আছে। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে তিনি বিভিন্ন দেশ, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তির কাছ থেকে শত শত কোটি ডলার নিয়েছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তাদের সুনির্দিষ্ট সুবিধাও দিয়েছিলেন। ল’ফার্ম থাকাকালে তিনি অসৎ পন্থায় ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এসব ইতিহাস ভোটাররা একেবারে ভুলে যায়নি। এই দুর্বল দিকগুলো কাটিয়ে উঠতে আগামী দুটো মাস তাকে ব্যাপক পরিসরে নিজের শক্তির পরিচয় দিতে হবে। তাঁর নির্বাচনী তহবিল যথেষ্ট শক্তিশালী- এ পর্যন্ত টিভি বিজ্ঞাপনে সোয়া ৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন যেখানে ট্রাম্প কিছুই ব্যয় করেননি। তার প্রচার কার্যক্রম সুসংগঠিত। তার দল ঐক্যবদ্ধ যেখানে প্রতিপক্ষ ঠিক উল্টোটি। তার ওপর জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ের বিভিন্ন জরিপে হিলারির রেটিং ট্রাম্পের তুলনায় যেভাবে বাড়ছে তাতে সামনের নির্বাচনে হিলারির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তার পরও ট্রাম্প জয়ী হতে পারেন- তবে সেটা হবে এক অস্বাভাকি ও ব্যতিক্রমী ঘটনা। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×