ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্মরণীয় যত মুহূর্তে মোড়ানো রিও অলিম্পিক...

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৪ আগস্ট ২০১৬

স্মরণীয় যত মুহূর্তে মোড়ানো রিও অলিম্পিক...

সিমোনদের উত্থান এবার অলিম্পিকে সিমোন নামের দুই ক্রীড়াবিদ নজর কেড়েছেন নিজেদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে। মার্কিন জিমন্যাস্ট সিমোন বিলেস ৪ স্বর্ণ ও ১ ব্রোঞ্জ জিতেছেন নিজের প্রথম অলিম্পিকে অংশ নিয়েই। প্রথম মার্কিন জিমন্যাস্ট হিসেবে এক অলিম্পিকে ৪ সোনা জয়ের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। আর সিমোন ম্যানুয়েল প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান সাঁতারু হিসেবে অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছেন। শনে মিলার্সের ঝাঁপ অভূতপূর্ব একটি ঘটনার জন্ম দিয়েছেন শনে মিলার্স। মহিলাদের ৪০০ মিটার দৌড়ের ফাইনালে শেষ দাগটা অতিক্রমের জন্য তিনি ঝাঁপ দেন এবং মাথা দিয়ে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করেন সবার আগে। এভাবেই তিনি ফেবারিট এ্যালিসন ফেলিক্সকে হারিয়ে স্বর্ণ জয় করেন। এটিই রিও অলিম্পিকের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, আলোচিত ও স্মরণীয় মুহূর্ত। অনেকে অবশ্য এ জয়টাকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন। লিলেসার ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ ইথিওপিয়ার সবচেয়ে বড় সম্প্রদায় ওরোমো। এই সম্প্রদায়ের অন্তত ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে দেশটির সরকার গত বছর নবেম্বর থেকে। এ কারণে পুরুষদের ম্যারাথনে রৌপ্য জয়ের পর ইথিওপিয়ার ফেয়িসা লিলেসা মাথার ওপর দুই হাত তুলে ‘ক্রস’ চিহ্ন প্রদর্শন করে সরকারের প্রতিবাদ করেছেন। যুগে যুগেই অলিম্পিকে এমন ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ অনেকেই করেছেন আগে। ছক পাল্টালেন পুইগ মহিলা টেনিসে বর্তমান বিশ্বে যারা একক আথিপত্য যারা করছেন তাদের তালিকায় কোনভাবেই নাম আসেস না মোনিকা পুইগের। বিশ্বের ৩৪ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী এ পুয়ের্তো রিকোর তরুণী টেনিস তারকা এবার অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সবাইকে পেছনে ফেলে। অলিম্পিক ইতিহাসে তার কারণেই প্রথম স্বর্ণপদক জেতার গৌরব অর্জন করেছে। এর আগে বিশ্বের শীর্ষ দশে থাকা কাউকে একবারই হারাতে পেরেছিলেন পুইগ। ভারমুক্ত ভারোত্তোলক এলিজাবেথ ২০০০ সালের পর থেকে আর কোন আমেরিকান ভারোত্তোলক অলিম্পিকে স্বর্ণ জিততে পারেননি। বিষয়টি যুগে যুগে অলিম্পিকের সেরা দল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশাল ভার হয়ে চেপে ছিল। সেই ভারমুক্ত করেছেন এবার সারাহ এলিজাবেথ রোবলস। মহিলাদের ভারোত্তোলনে স্বর্ণ জিতেছেন। তাই বিশেষভাবে এখন স্মরণীয় হয়ে গেলেন এ ভারোত্তোলক। পুলে মার্কিন দাপট বরাবরের মতোই এবারও সাঁতারে আধিপত্য দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিংবদন্তি মাইকেল ফেলপস ৫ স্বর্ণ ও ১ রৌপ্য এবং কেটি লিডেকি ৪ স্বর্ণ ও ১ রৌপ্য জিতে দেশের বাকি সাঁতারুদের অনুপ্রাণিত করেছেন। আর আলো ছড়িয়েছেন তরুণ উদীয়মান তারকা লিলি কিং। সবমিলিয়ে রিও অলিম্পিকের পুলেও ঝড় তুলেছেন মার্কিন সাঁতারুরাই। অন্যরা টিকিটাও ছুঁতে পারেনি। থম্পসনের ডাবল-ডাবল উসাইন বোল্ট গড়েছেন ‘ট্রিপল ট্রিপল’। তারই স্বদেশী নারী স্প্রিন্টার এ্যালাইনি থম্পসন অল্পের জন্য একই কীর্তি গড়তে পারেননি। তবে গড়েছেন ‘ডাবল ডাবল’। জিতেছেন ১০০ এবং ২০০ মিটার দৌড়ের স্বর্ণ। আর ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলে দৌড়ে জিতেছেন দলীয় রৌপ্যপদক। স্বাগতিকদের ‘প্রথম’ সাফল্য স্বাগতিক ব্রাজিল এবারই তাদের অলিম্পিকের ইতিহাসে সবচেয়ে ভাল ফল করেছে। হয়েছে ত্রয়োদশ। এক আসরে এবারই তারা সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ জিতেছে (৭টি)। অথচ আসর শুরুর প্রথম দু’দিন অন্য পদক জিতলেও কাক্সিক্ষত সোনার পদকটা জিততে পারছিল না। অবশেষে ৮ আগস্ট ফেলে সোনার পদক। আর সেটা জেতেন নারী জুডোকো রাফায়েলা সিলভা, মাইনাস ৫৭ কেজি শ্রেণীতে। আনন্দের বান ডেকে যায় গোটা ব্রাজিল জুড়ে। শরণার্থীদের অলিম্পিক এবারের অলিম্পিকে শরণার্থীদের নিয়ে গঠিত হয় ১০ সদস্যের একটি দল। দলটির সবাই বিশ্বের কয়েকটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ও অঞ্চলের নাগরিক। এই দলে ছিলেন সিরিয়ার ২ সাঁতারু, দক্ষিণ সুদানের পাঁচ দৌড়বিদ, কঙ্গোর ২ জুডোকা এবং ইথিওপিয়ার এক ম্যারাথনার। এই শরণার্থীদের কোন বাড়ি, দল, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত নেই। অলিম্পিকের ইতিহাসে এই ঘটনা প্রথম। হঠাৎই তারকা মধ্য আমেরিকার ক্ষুদ্র দ্বীপদেশ পুয়ের্তো রিকো। দেশটি এখন বিখ্যাত। ১৭ অলিম্পিক খেলেও যে দেশটি কখনও স্বর্ণ জেতেনি, সে দেশটিই এবার প্রথম স্বর্ণ জিতেছে। তা মনিকা পুইগের কল্যাণে। নারী টেনিসের একক ইভেন্টে তিনি জার্মানির এ্যাঞ্জেলিক কারবারকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েন। ক্যারিয়ারে কখনই কোন গ্র্যান্ডসøাম না জেতা মনিকা অলিম্পিকে বাজিমাত করবেন, তা কেউই ভাবেননি। শিরোপা জিতে মনিকা হঠাৎ করেই যেন বনে গেলেন তারকা। ফিজির প্রথম সোনা আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আগুনের লেলিহান শিখায় বিপর্যস্ত দেশ ফিজি। দীর্ঘদিন পর আনন্দে ভাসার মতো একটি সাফল্য ও গৌরব তারা পেয়েছে রিও অলিম্পিকে। সেই আনন্দটা উপহার দিয়েছে ফিজির রাগবি সেভেন দল এবার রিওতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। দেশের সরকার একদিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করে এবং আশা জানায় এই পদক জয়ের কারণে ফিজির পর্যটন ও বিনিয়োগ খাত ২০০ বিলিয়ন ডলার বয়ে আনবে। ইবতিহাজের ইতিহাস এই প্রথম কোন মার্কিন এ্যাথলেট হিজাব পরে অলিম্পিকে অংশ নিলেন। আবার পদকও জিতলেন। ইবতিহাজ মোহাম্মদ মহিলাদের ফেন্সিংয়ের স্যাবর ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্র ব্রোঞ্জ জয় করে ইতালির দলটিকে হারিয়ে। মার্কিনদের হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ইবতিহাজ। হিজাবি মুসলিম নারীদের প্রতি অন্য ধর্মের মানুষদের যে বিরূপ মনোভাব সেটাকে পাল্টাবে এ জয় এমনই প্রত্যাশা তার। এক ফ্রেমে গালিভার-লিলিপুট যুক্তরাষ্ট্র পুরুষ বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড় ২৮ বছর বয়সী ডিএ্যান্ড্রে জর্ডানের উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট (৬ ফুট ১১ ইঞ্চি)। অলিম্পিক চলাকালে তিনি একটি ডুয়েট ছবি তোলেন তার স্বদেশী ও ষোড়শী আর্টিস্টিক জিমন্যাস্ট রাঘান স্মিথের সঙ্গে। ছবিটিকে দেখে অনেকেই একে মজা করে বলেছেন ‘গালিভার-লিলিপুটের ছবি!’ পদকের মঞ্চেই বিয়ের প্রস্তাব চীনের মহিলা ডাইভার হে জি। এবার ৩ মিটার স্প্রিংবোর্ড ইভেন্টে জেতেন রুপা। পদক গ্রহণ করে মঞ্চ থেকে নেমে আসতেই এমন একটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন, যা তিনি আজীবন মনে রাখবেন। যার সঙ্গে প্রেম করছেন গত ছয় বছর ধরে, সেই চীনা প্রেমিক ও ডাইভার কিন কাই তার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বিয়ের প্রস্তাব দেন। হতভম্ব জি সায় দিতেই কিন তার অনামিকায় পরিয়ে দিলেন আংটি। পারস্পরিক সহযোগিতার অনুপম নিদর্শন যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাবি ডি’ অগোস্টিনো এবং নিউজিল্যান্ডের নিকি হ্যাম্বলিন। ৫০০০ মিটার দৌড়ের হিটের দৌড়ের একপর্যায়ে তারা দুজনেই দুর্ঘটনাবশত পড়ে যান। দুজনেই একে অপরকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেন, দৌড় শেষ করেন এবং হিটে বাদ পড়েন। আইওসি তাদের এই মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে তাদের ফাইনালে দৌড়াতে অনুমতি দেয়। যদিও চোটের কারণে ফাইনালে অংশ নেননি এ্যাবি। নিকি ফাইনালে অংশ নিয়ে সর্বশেষ স্থান লাভ করেন। তাদের দুজনকেই দেয়া হয় বিশেষ স্পোটর্সম্যানশিপ এ্যাওয়ার্ড। ইচোর বিরল কীর্তি কারোই ইচো। বয়স ৩২। জাপানী মহিলা কুস্তিগীর। বিরল এক কীর্তি গড়েছেন তিনি। ইতিহাসের প্রথম মহিলা ক্রীড়াবিদ হিসেবে যেকোন একক ইভেন্টে টানা চার অলিম্পিকেই স্বর্ণ জিতেছেন। ২০০৪ এথেন্স, ২০০৮ বেজিং, ২০১২ লন্ডন এবং ২০১৬ রিওতে পান এই সাফল্য। প্রথম তিন আসরে জেতন ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে। শেষেরটি জেতেন ৫৮ কেজি ওজন শ্রেণীতে। ‘বুড়ো’র কীর্তি বয়স হয়ে গেছে ৫৮। তারপরও অশ্বারোহী ক্রীড়ার শো জাম্পিং ইভেন্টে স্বর্ণ জিততে কোন সমস্যা হয়নি নিক স্কেলটনের। গ্রেট ব্রিটেনের এই এ্যাথলটের ফলে গড়েন দারুণ এক রেকর্ড। ১৯০৮ অলিম্পিকের পর তিনিই হন দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জেতা সবচেয়ে বেশি বয়সী এ্যাথলেট।
×