ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বহুতল ভবনের সুরক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৪ আগস্ট ২০১৬

বহুতল ভবনের সুরক্ষা

বহুতল ভবন নির্মাণের সময় বিজ্ঞানসম্মত বিধিমালা মেনে চলা এবং নির্মাণ শেষে রক্ষণাবেক্ষণ- এসব শর্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ না করা হলে বিপদ ঘটার আশঙ্কা থেকে যাবে। ঢাকায় বহুতল ভবনের কমতি নেই, তা আবাসিক হোক, কিংবা হোক বাণিজ্যিক। ভূকম্পনে কোন ভবনে ফাটল দেখা দিলে, কোথাও লিফট ছিঁড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটলে কিংবা ভবনে আগুন লাগলে আমরা নড়েচড়ে বসি। এর আগে আমাদের হুঁশ হয় না। দুঃখজনক হলো বসুন্ধরা শপিংমলের মতো সুবিশাল অত্যাধুনিক বহুতল ভবনে বারবার আগুন লাগলেও এর কোন সুরাহা যেমন হচ্ছে না, তেমনি এটি থেকে হাজারো বহুতল ভবনের মালিক বা কর্তৃপক্ষও খুব একটা শিক্ষা নিচ্ছেন না। উঁচু ভবনে একসঙ্গে বহু লোক বসবাস করবে, আবার বাণিজ্যিক ভবন হলেও তাতে বহু লোক একসঙ্গে কাজ করবে; তাই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো নির্মাণ পরবর্তী সময়ে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এসব ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় অনেক বহুতল ভবন থেকে যাচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে। তৈরি বহুতল ভবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এখন সময়ের দাবি। ফায়ার সার্ভিস বারবারই বলছে, বহুতল ভবনে আগুনের ঝুঁকি সম্পর্কে অনেক ভবনের মালিকই এখনও সচেতন নয়। দেশের সর্বপ্রথম বিল্ডিং কোড তৈরি করা হয় ১৯৯৩ সালে। দেশের অভিজ্ঞ প্রকোশলী এবং বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা মিলে বিভিন্ন দেশের বিল্ডিং কোড থেকে আমাদের দেশের উপযোগী নীতিমালাগুলো সংগ্রহ করে এই কোড তৈরি করেছিলেন। পরে ২০০৬ সালে এটি পার্লামেন্ট থেকে গেজেট আকারে প্রকাশ পায়, পরিণত হয় আইনে। বিল্ডিং কোডে সবধরনের ভবনের জন্যই আলো-বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভার-বহন ক্ষমতা, নির্মাণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা উল্লেখ করা হয়েছে। বিল্ডিং কোডে স্পষ্ট করে বলা আছে, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর প্রথম দুই বছর প্রতিবছর চারবার অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করতে হবে। তৃতীয় বছর থেকে বছরে দুবার করে ফায়ার ড্রিল বা অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করতে হবে। অথচ এটা কি মানা হচ্ছে? তাহলে বহুতল ভবনের সুরক্ষা আমরা নিশ্চিত করব কিভাবে। ২০০৯ সালের মার্চে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে প্রথম আগুন লাগার পর একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, বিশ্বের উন্নত দেশেও বহুতলবিশিষ্ট শপিংমল বা ভবনে আগুন নেভানোর কাজ প্রাথমিকভাবে সরকারী দমকল বাহিনী করে না। এটা প্রধানত সংশ্লিষ্ট ভবনের নিজস্ব ব্যবস্থার আওতায় করার কথা। আগামীতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে একটি স্বতন্ত্র বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বিবেচনার দাবি রাখে। ঢাকা শহরে অনেক উঁচু ও বিশাল ভবন রয়েছে। এসব ভবনে বিশ্বমানের সুবিধাও রয়েছে। সেসব সুবিধার ব্যবহার নিশ্চিত করাটা জরুরী। এ জন্য ভবনের নিজস্ব লোকদের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সঙ্গে একটা সমন্বয় থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে বছরে দু’একবার সমন্বিত মহড়া দেয়া হলে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। বহুতল ভবনের সুরক্ষায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া চাই।
×