ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় ছাত্রী নিবাসে রহস্যজনক বিস্ফোরণ, ভার্সিটি ছাত্রী গুরুতর দগ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৪ আগস্ট ২০১৬

কুমিল্লায় ছাত্রী নিবাসে রহস্যজনক বিস্ফোরণ, ভার্সিটি ছাত্রী গুরুতর দগ্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৩ আগস্ট ॥ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি ছাত্রী নিবাসে বিকট বিস্ফোরণে ফাহমিদা হাসান নিশা নামে এক ছাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় তাকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত হতে বিকেলে ঢাকা থেকে সিআইডির ক্রাইম সিন ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। বিস্ফোরণে ওই ছাত্রীর কক্ষের জানালার গ্রিল ছুটে প্রায় ১০ ফুট দূরে বাইরে ছিটকে পড়ে । দগ্ধ ছাত্রী নিশা ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার কসবা উপজেলার আসকিনা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবু হাসানের মেয়ে। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ ছাত্রীকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী নিশাসহ চার ছাত্রী সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে সালমানপুর এলাকার হাজী মোঃ আবু তাহের ওরফে পাকিস্তানী তাহেরের মালিকানাধীন শিবির নিয়ন্ত্রিত ‘ছালমা ছাত্রী নিবাস’ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী মনিরুল ইসলাম মৃধার মালিকানাধীন ‘প্রশান্তি’ ছাত্রী নিবাসে ওঠে। সোমবার রাতে নিশা একাই কক্ষে ছিল। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণে ওই এলাকা কেঁপে ওঠে। এ সময় নিশার কক্ষের দুটি জানালার কাঁচ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় এবং একটি জানালার গ্রিল ছুটে বাইরের দিকে প্রায় ১০ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে। বিস্ফোরণে ওই ছাত্রীর প্রায় পুরো শরীরই দগ্ধ হয় । এ সময় অন্যান্য ছাত্রী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুমেক হাসপাতালে নেয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মির্জা তাইয়েবুল ইসলাম জানান, ওই ছাত্রীর শ্বাসনালীসহ শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ছালমা ছাত্রী নিবাসের মালিক পাকিস্তানী তাহেরকে পাওয়া না গেলেও ছাত্রী নিবাসের দারোয়ান মোঃ শহিদ জানায়, ছালমা ছাত্রী নিবাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০-৫৫ ছাত্রী থাকে। সম্প্রতি গুলিতে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলে ছালমা ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীরাও চলে যায় । তবে নিশাসহ চার ছাত্রী একটি কক্ষে ছিল। সোমবার সকালের দিকে তারা ছালমা ছাত্রী নিবাস ছেড়ে পার্শ্ববর্তী প্রশান্তি ছাত্রী নিবাসে চলে যায়। স্থানীয় সূত্রগুলো ঘটনাটিকে জঙ্গী তৎপরতাসহ শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ বলে ধারণা করছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক সেই সঙ্গে তোলপাড় চলছে । বিস্ফোরণের খবর পেয়ে সকালের দিকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুনসহ র‌্যাব, পুলিশ, ডিবির টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের আলামত কিংবা কোন কারণ নিশ্চিত হতে না পারায় বোমা বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ টিম ও ক্রাইম সিন তলব করা হয় । বিকেল পৌনে ৫ টায় ঢাকা থেকে র‌্যাব-১১ এর কমান্ডারসহ বোমাবিশেষজ্ঞ ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে অনুসন্ধান চালায়। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন বিকেল ৬ টায় জানান, ঢাকা থেকে আগত বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। তাদের মতামত পেলেই নিশ্চিতভাবে বিস্ফোরণের কারণ বলা যাবে।
×