ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের পর তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন

দল গুছিয়ে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ আগস্ট ২০১৬

দল গুছিয়ে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে তৎপর বিএনপি হাইকমান্ড। এজন্য বিভিন্ন কর্মসূচীও হাতে নেয়া হয়েছে। সাংগঠনিক বিষয়ে অতীতের ভুলত্রুটি সংশোধন করে এবার সর্বস্তরে দল গুছিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে যারা প্রত্যাশিত পদ পাননি তাদের পদ দেয়ার পাশাপাশি ঈদের পর পুরোদমে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের সব কমিটি পুনর্গঠন শুরু হবে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক’জন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই তারা একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছেন। জানা যায়, জাতীয় কাউন্সিলের দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস পর সম্প্রতি ৫৯১ সদস্যের যে নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয় তাতে বেশ ক’জন নেতা প্রত্যাশিত পদ পাননি। এজন্য তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ক্ষুব্ধ নেতাদের মধ্যে ক’জন পদত্যাগও করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে ১৮ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ক্ষুব্ধ নেতাদের প্রত্যাশিত পদ দেয়ার পাশাপাশি গঠনতন্ত্র অনুসারে এক নেতার এক পদ বিধান চালু করলে আরও অন্তত ৪০টি পদ খালি হবে। এই খালি পদগুলোতে পদ না পাওয়া নেতাদের স্থান দেয়া হবে। তারপরও যারা পদ না পাবে তাদের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। আর যারা এখানেও পদ না পাবে তাদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি ও সাংগঠনিক জেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। এদিকে আগে বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করলেও এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তাই সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করলেও পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ করেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এখন আর মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে নেই। কারণ দলের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করা অসম্বব হবে। তবে আগে সর্বস্তরে দল গুছিয়ে নিতে পারলে এ পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তাই তারা এখন ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এজন্যই ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বস্তরে দল গুছিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে চায় বিএনপি। বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের পর ইতোমধ্যেই চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের নেতারা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে শোডাউন করেছে। এখন সারাদেশের তৃণমূলে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনা অনুসারে সারাদেশের মহানগর, জেলা, উপজেলা ও এর অধীন অন্যান্য ইউনিটকে নতুন নেতৃত্বে ঢেলে সাজানো হবে। আর তা করা হবে স্থানীয়ভাবে কাউন্সিলের মাধ্যমে। সারাদেশে এ কাজ তদারকির জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ কাজ সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। তবে তৃণমূলে দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কোন জটিল সমস্যা সৃষ্টি হলে সেখানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবেন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। আমরা বিভাগওয়ারী বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে পুনর্গঠন কাজ শুরু করব। ইতোমধ্যেই জেলা পর্যায়ের নেতাদের এ বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর এবার সারাদেশের সর্বস্তরে দলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে সর্বস্তরে দলকে ঢেলে সাজিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হবে। এছাড়া দলকে গতিশীল করে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেয়া হবে। ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে গতবছর ৯ আগস্ট কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিএনপির ৭৫ সাংগঠনিক জেলা ও প্রতিটি জেলার বিভিন্ন ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন করতে বলা হয়। এর মাসখানেক পর ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার আগে গুলশান কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৈঠককালে তিনি বার বার দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই মিলে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজে সহযোগিতা করবেন। তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ হলেই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান। সিনিয়র নেতারাও তখন খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি দেশে ফেরার আগেই ৭৫ সাংগঠনিক জেলা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা হবে। খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে গিয়ে ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ২ মাস অবস্থান করে গত বছর ২১ নবেম্বর দেশে ফেরার পরও তা করতে না পারায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা তোপের মুখে পড়েন। দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় কমিটি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি জানতে পেরে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া যেসব এলাকায় কমিটি পুনর্গঠন হয়নি সেসব এলাকা থেকে মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিলর করার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে দল পুনর্গঠন কাজ স্থগিত রেখেই এ বছর ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয়। অতীতের ভুলভ্রান্তি অতিক্রম করে বিএনপি যে এখন সর্বস্তরে দল গুছিয়ে এগিয়ে যেতে চায় তা সিনিয়র নেতাদের প্রকাশ্য বক্তব্যের মাধ্যমেও প্রকাশ পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান নির্বাহী কমিটির নেতৃত্বে দল গতিশীল হবে। একই স্থানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সর্বস্তরে দল গুছিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব। বিএনপি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার দলের ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন কমিটি করা হচ্ছে ৫১ সদস্যের। থানা বা উপজেলা কমিটি করা হচ্ছে ৭১ সদস্যের। জেলা বা মহানগর কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের। এর মধ্যে ৭৪টি হচ্ছে কর্মকর্তা পর্যায়ের পদ, বাকি ৭৬টি হচ্ছে সদস্য পদ। সারাদেশে এসব ইউনিট কমিটি গঠনের কাজে সহায়তা করতে ঈদের পর বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকরা জেলা সফর শুরু করবেন। বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও জেলা সফর কর্মসূচীর মাধ্যমে তৃণমূলে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শুরু করবেন। ইতোমধ্যেই সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে কমিটি পুনর্গঠনর কাজের কৌশলও নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিএনপির ক’টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। যে কোন দিন এসব কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
×