ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পর্কে টানাপোড়েন সত্ত্বেও ঢাকা ইসলামাবাদ পররাষ্ট্র সচিব বৈঠকের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৪ আগস্ট ২০১৬

সম্পর্কে টানাপোড়েন সত্ত্বেও ঢাকা ইসলামাবাদ পররাষ্ট্র সচিব বৈঠকের প্রস্তুতি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বেলুচিস্তান নিয়ে মন্তব্যের জের ধরে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে কিছুটা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহসানকে তলবের পর এখন এ টানাপোড়েন চলছে। তবে টানাপোড়েনের মধ্যেই আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। সূত্র জানায়, গত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেলুচিস্তান, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, বালটিস্তান, গিলগিটের মানুষের দুর্দশার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ওই সব জায়গার মানুষের মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। এদিকে গত সপ্তাহে ভারত সফরকালে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নরেন্দ্র মোদির ওই বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পক্ষ থেকে গত শুক্রবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত হাইকমিশনার তারিক আহসানকে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করছেন, যেটা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহসান পাকিস্তানকে জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে জানাবেন। সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে। এ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিবাদ-পাল্টা প্রতিবাদ, কূটনীতিকদের তলব-পাল্টা তলব, বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ কখনও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়নি। তবে তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে দুই দেশের মধ্যে কিছুটা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে এখন কিছুটা টানাপোড়েন চললেও আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরী ঢাকায় আসছেন। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ছয় বছর পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে পাকিস্তানে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। এর পর দুই দেশের মধ্যে আর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়নি। প্রতি বছর দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের কথা থাকলেও ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকায় এ বৈঠক আর হয়নি বলে জানা গেছে। ২০১০ সালের পর প্রায় চারবার বৈঠকের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে সে বৈঠক আর করা সম্ভব হয়নি। এখন দুই দেশই চাইছে বৈঠকটি সফল হোক। কেননা দুই দেশের মধ্যে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, বাণিজ্যিক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বিনিময়, ভিসা সহজীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঢাকায় অনেক পাকিস্তানী চোরাচালান ও জাল টাকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে চায় ঢাকা। আর দুই দেশের আয়োজিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেই আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হতে পারে। সে কারণে দুই দেশই আসন্ন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি সম্পন্ন করতে চাইছে।
×