ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুপ্রীমকোর্টের কর্মচারীদের চেম্বার তৈরির জন্য স্থানটি প্রয়োজন

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে সুপ্রীমকোর্টের চিঠি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ আগস্ট ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে সুপ্রীমকোর্টের চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালটি পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের প্রশাসন। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন স্বাক্ষরিত এই চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এদিকে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক জনকণ্ঠকে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন চিঠি পেয়েছি, এখন কিছু বলতে পারছি না। এটা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিষয়। অন্যদিকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আমরা এ ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। সুপ্রীমকোর্টের আরও প্রচুর জায়গা আছে যেখানে ভবন নির্মাণ করে সমস্যা দূর করা যায়। একদিন বিচার শেষে জার্মানি ও জাপানের মতো পুরাতন হাইকোর্ট ভবনও গণহত্যাকারী বিচারের যাদুঘরে পরিণত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় অর্জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এটা বানচাল করার ষড়যন্ত্র কোনভাবেই বরদাস্ত করব না। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সুপ্রীমকোর্টের চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের বিভিন্ন অংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের জন্য অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হয়। তখন থেকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের বিভিন্ন অংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টে বর্তমানে পর্যাপ্ত স্থানাভাবে বিচারপতিগণের প্রয়োজনীয় চেম্বার ও এজলাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে সুপ্রীমকোর্ট রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেম্বার দফতরের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও প্রকট হবে বিধায় জরুরীভিত্তিতে বিচারপতিগণের চেম্বার ও এজলাস এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় স্থানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। বিচারপতিগণের চেম্বার ও এজলাস এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস হিসেবে ব্যবহারক্রমে বিদ্যমান প্রকট স্থানাভাব দূরীকরণার্থে সম্পূর্ণ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃক বুঝে পাওয়া একান্ত অপরিহার্য। চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর এ বিষয়ে মৌখিক আলোচনা হয়েছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র স্থানাস্তর করে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সুপ্রীমকোর্টকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটির দখল স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে সুপ্রীমকোর্টের মাজারগেট সংলগ্ন পুরনো হাইকোর্ট ভবনেই এর কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রতিষ্ঠাকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘কী কারণে সরানোর চিঠি দিয়েছে, তা আমরা এখনও জানি না। বর্তমানে যে জায়গায় আছে, সেটা তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সম্মতি নিয়েই করা হয়েছিল।’ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ও আইন কমিশনের অফিস সেখান থেকে সরিয়ে ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এই জায়গায় এটি সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। দেশে-বিদেশে সে হিসেবেই পরিচিত। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এটা ৮-১০টা ট্রাইব্যুনালের মতো নয়। এই ট্রাইব্যুনালের জন্য কতবার রাস্তায় থাকতে হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছিলেন বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে ৩০ লাখ শহীদের কংকালের ওপরে। সেই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে কোন তুঘলকি কারবার সহ্য করব না। সুপ্রীমকোর্টের প্রাঙ্গণে বহু জায়গা আছে সেখানে বিল্ডিং করা যেতে পারে। এই জায়গা এমনি এমনি আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। এটা স্থায়ীভাবে চাই। বিচার একদিন শেষ হবে। তখন জার্মানি ও জাপানের মতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে। সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনে এ কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার আমার মন্ত্রণালয়ে সুপ্রীমকোর্ট থেকে ট্রাইব্যুনাল সরানোর ব্যাপারে চিঠি পেয়েছি। এখন আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে’। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ২৬টি মামলায় ৫২ জনকে বিভিন্ন দ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যুদ-, একজনের যাবজ্জীবন, একজনের ৯০ বছরের কারাদ- এবং ২৫ জনকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পলাতক আছে ২১ জন।
×