খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ অর্থনৈতিক বিপ্লবের পথে সম্ভাবনাময় বরিশালে স্থাপিত হচ্ছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এখানে গড়ে উঠবে আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক), বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরির্বতন ঘটবে। এছাড়াও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি পদ্মা সেতুর কাজ। দেশের তৃতীয় গভীর পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হলেও লেবুখালী ব্রিজ নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। সকল স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ হলে বরিশালে উচ্চমাত্রায় অর্থনৈতিক গতি সঞ্চার হবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, এ তিনটি স্থাপনার ফলে বরিশালে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বিশাল জনগোষ্ঠীর।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্থাপন করা হবে কীর্তনখোলা নদীর তীরে বরিশাল সদর উপজেলার চরআইচা এলাকায়। নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এবং বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডসংলগ্ন স্থানে স্থাপিত হবে আইসিটি পার্ক। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হবে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বড়াবাড়ি মৌজায়। বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অদূরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি থেকে পাঁচ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে আইসিটি পার্ক স্থাপনের জন্য। এজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত জমি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চিঠি এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আইসিটি পার্কে গড়ে উঠবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যারা শুধু দেশীয় নয়; বিদেশী বিভিন্ন আইটি কোম্পানির কাজও সম্পাদন করবে। জানা গেছে, আইসিটি পার্কের নাম দেয়া হবে ‘চন্দ্রদ্বীপ ক্লাউট চর’। এ স্থানকে পাঁচটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এখানে নির্মিত হবে আটটি ভবন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২৩ হাজার বেকার যুবক-যুবতী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। আইসিটি পার্কে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, কম্পিউটার সফটওয়্যার, কমিউনিকেশন হার্ডওয়্যার, কমিউনিকেশন সফটওয়্যার, আইটিভিত্তিক সেবা, ডিজাইন এ্যান্ড কনসালটেন্সি, বায়োইনফর্মেটিকসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
সূত্রমতে, সদর উপজেলার চরআইচা এলাকায় ১০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্থাপনের জন্য। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পর্যটন কর্পোরেশন। সেখানে জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশন থেকে প্রকল্প চাইলেই এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ জানান, আগৈলঝাড়ায় অর্থনেতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক পবন চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক মোঃ হারুন-অর রশিদসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে নির্বাহী পরিচালক পবন চৌধুরী জানিয়েছেন, শীঘ্রই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে আগৈলঝাড়ায় অর্থনেতিক জোন স্থাপিত হলে বরিশালের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলা হবে। এর ফলে বরিশালের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানির পরিকল্পনাও রয়েছে।
বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টির কারণেই এসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হলে অর্থনৈতিকভাবে বিপ্লব ঘটবে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। তিনি আরও বলেন, ভোলা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বরিশালে গ্যাস আনতে পারলে এ বিপ্লব আরও গতিশীল হবে। এ তিনটি প্রকল্প দ্রুত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে বরিশাল হবে দেশের সিঙ্গাপুর।
