ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফান্ডের পুনর্বিনিয়োগে লোকসানে বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৪ আগস্ট ২০১৬

ফান্ডের পুনর্বিনিয়োগে লোকসানে বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিউচুয়াল ফান্ডে লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট (পুনর্বিনিয়োগ) বন্ধ করতে আইনের সংশোধনী খসড়া প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৮ মাসেও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি। যদিও একই সময়ে পাবলিক ইস্যু রুলসের খসড়া প্রকাশ করে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে গেছে। বিএসইসির এই বিলম্বে লোকসানের কবলে বিনিয়োগকারীরা। শুধু রেস পরিচালিত ১০ মিউচুয়াল ফান্ডেই বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো লোকসান দিয়েছে। রি-ইনভেস্টমেন্ট না দিয়ে নগদ লভ্যাংশ দিতে হলে ফান্ডগুলোকে মোট ১৫০ কোটি টাকার লভ্যাংশ দিতে হতো। অভিযোগ রয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য রি-ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ দিতেই ইচ্ছাকৃত অনুমোদন দিতে দেরি করা হচ্ছে। যদিও খসড়ায় বলা ছিল, চূড়ান্ত অনুমোদন না হলেও ফান্ডগুলোকে রি-ইনভেস্টমেন্ট দিতে বিএসইসির অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন কিছুই তোয়াক্কা করেনি ফান্ডগুলো। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, রি-ইনভেস্টমেন্ট করা হলে বিনিয়োগকারীরা প্রকৃতপক্ষে লাভবান হয় না। কারণ ফান্ডগুলোর ইউনিট দর এখন অভিহিত মূল্যের নিচে। তবে এই রি-ইনভেস্টমেন্টের কারণে ফান্ড পরিচালনাকারীর লাভবান হন। কারণ রি-ইনভেস্ট করলে ফান্ডের আকারের সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজম্যান্ট ফি বেড়ে যায়। সমাপ্ত অর্থবছরে রেসের ফান্ডগুলোর রি-ইনভেস্টের কারণে ফান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। কারণ রি-ইনভেস্টমেন্টের কারণে প্রতি বছর ফান্ডগুলোর ব্যয় বাড়ে ২০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে ফান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়েছে ২ কোটি টাকা। একই দিনে আইপিও আইনেও (পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫) সংশোধন খসড়া অনুমোদনের পর জনমত যাচাই শেষে তা চূড়ান্ত ও কার্যকর করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর মধ্যে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আইপিও আইন সংশোধন হয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। অথচ ৮ মাস পরও আলোর মুখ দেখেনি মিউচুয়াল ফান্ডের আইন সংশোধন। এর মধ্যে কিছু মিউচুয়াল ফান্ড রি-ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণাও করে ফেলেছেন। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি চায় না, আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন চূড়ান্ত হোক। তারা প্রস্তাবিত সংশোধনে ব্যাপক রদবদল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কমিশনও এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। তবে এর মাঝেও ঠিকই ফান্ডগুলো কাজের কাজটি করে ফেলেছেন। কারণ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ফান্ডগুলোর রি-ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা করেছে। বিশেষ করে রেস পরিচালিত ১০ মিউচুয়াল ফান্ডই রি-ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা করেছে। ফান্ডগুলোর মধ্যে একটি ফান্ডের ইউনিট হোল্ডারদের জন্য ৯ শতাংশ, তিনটির জন্য ৭ শতাংশ, দুটির জন্য ৬ শতাংশ এবং ৪ ফান্ডের ইউনিটহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ট্রাস্টি। এর পুরোটাই রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিএসইসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার প্রস্তাবিত সংশোধনের ধারণা প্রকাশ করে। সেখানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোতে সংশোধন আনার কথা বলা হয়। প্রস্তাবিত সংশোধন খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীদের কখন লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট করতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।
×