ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র

১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে রাশিয়াকে দিতে হবে ২০ বিলিয়ন

প্রকাশিত: ০৮:২২, ২৩ আগস্ট ২০১৬

 ১১.৩৮ বিলিয়ন  ডলার ঋণ নিয়ে  রাশিয়াকে দিতে হবে ২০ বিলিয়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পে রাশিয়ার কাছ থেকে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রশিয়ার কাছ থেকে নেয়া ৯১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার শুধু সুদ বাবদই ফেরত দিতে হবে ৬৯ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত সচিবদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের এক অনুষ্ঠানে একথা জানানো হয়। সম্প্রতি রাশিয়া সফর শেষে দেশে ফেরা কয়েক সচিব তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রধান অতিথি ছিলেন। মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এতে সভাপতিত্ব করেন। সম্প্রতি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত। তিনি মন্ত্রিসভায় বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্রটি অস্বাভাবিক বেশি দামে নির্মাণ করা হচ্ছে। যদিও এর পর বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রীকে হয়তো কেউ বিষয়টা ভুল বুঝিয়েছিলেন। রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বলা হচ্ছে সুদাসলে সর্বোচ্চ ১৯ বিলিয়ন ডলারের মতো ফেরত দিতে হবে। আজকের লায়বরের হার ধরে করা হিসেবে দেখানো হয়েছে ১৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার সুদাসলে ফেরত দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে লায়বর বৃদ্ধি পেলে এই অর্থের পরিমাণ বাড়বে বলে তথ্য কর্মকর্তা জানান। দেশের সব চেয়ে বড় এই প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন রয়েছে। মাত্র দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য এক লাখ কোটি টাকা ব্যয় যুক্তি সঙ্গত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে এই ঋণে সুদের হার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং এর সঙ্গে কিস্তি পরিশোধের সময়কার লায়বর (লন্ডন আন্তঃব্যাংক রেট) যুক্ত হবে। ফয়জুল্লাহ জানান, সোমবার আন্তর্জাতিক বাজার অনুসারে লায়বর দশমিক ৯ শতাংশ ধরে হিসেব করলে বাংলাদেশকে মোট ফেরত দিতে হবে ১৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। তবে লায়বর বাড়লে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু লায়বর যতই বাড়ুক সুদ হার কখনই ৪ শতাংশের বেশি হবে না। সে হিসেবে রাশিয়াকে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন দিতে হবে বলে জানান ফয়জুল্লাহ। দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার রূপপুরে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় এক লাখ কোটি টাকার বেশি। দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে আগামী বছর। রূপপুর প্রকল্পের ‘রেফারেন্স প্রজেক্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়ার নভোভারেনেঝ পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রকে। অভিজ্ঞতা অর্জনের অংশ হিসেবে গত জুন ও জুলাই মাসে তিন দফায় সরকারের ১৩ জন সচিব পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য সন্ধ্যায় এ সভার আয়োজন করা হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঋণের টাকা প্রদানের ১০ বছর পর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ হতে ঋণের কিস্তি দেয়া শুরু করতে হবে। প্রতি বছরের ১৫ই মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সমপরিমাণ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর আগে এই কেন্দ্রের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজের জন্যও রাশিয়ার কাছ থেকে ৫৫ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়। মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, রূপপুর নিয়ে সব ধরনের বিভ্রান্তি দূর করে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। তিনি বলেন, রূপপুর বাংলাদেশের গর্ব। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে। মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা যখন তেলভিত্তিক রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছি তখন সমালোচকদের হাজার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমালোচকদের জবাব দেয়া হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সচিব রাজুল হক খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রাশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান এবং জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অর্থসচিব মাহবুব আহমেদও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×