ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ৯ বর্ডার হাট হবে ॥ বেশিরভাগ মেঘালয় ত্রিপুরা সীমান্তে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ আগস্ট ২০১৬

আরও ৯ বর্ডার হাট হবে ॥ বেশিরভাগ মেঘালয় ত্রিপুরা  সীমান্তে

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নতুন করে আরও নয়টি বর্ডার হাট চালু হবে। এর মধ্যে দুটি হাট নির্মাণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। বাকি সাতটি হাট স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া চালু চারটি হাট সংক্রান্ত চুক্তি আগামী পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় দেশের সরকার। মেঘালয় ও ত্রিপুরা সীমান্তে বেশিরভাগ হাট স্থাপন করা হবে। এছাড়া বর্তমান কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, ফেনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বর্ডার হাট চালু রয়েছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ-ভারত মেঘালয় সীমান্তে ভারত সরকার সম্ভাব্য ২২ সীমান্ত হাটের তালিকা দিয়েছিল। নতুন বর্ডার হাটগুলো চালু হলে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বড় অঙ্কের যে বাণিজ্য বৈষম্য রয়েছে তা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্থাপিত এই বর্ডার হাটে বর্তমানে প্রত্যেক ক্রেতা ১০০ ডলারের পণ্য কিনতে পারেন। এটি ৩০০ ডলারে উন্নীত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত হাটে বর্তমানে প্রতি দেশের ২৫ জন বিক্রেতা পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এই সংখ্যাও বাড়িয়ে ৫০ বা তার বেশিতে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরী বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চারটি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। এ সংক্রান্ত চুক্তিটি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে চুক্তি নবায়নের বিষয়টি অটো হতে পারে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে আরও হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় দেশ। নতুন এসব হাট শীঘ্রই চালু করা হবে। বর্ডার হাটে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও জুতা জাতীয় পণ্য বেচা-কেনার প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ভারতীয় শাড়িতে বাজার দখল হয়ে যায় কিনা-সে বিষয়টিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বর্ডার হাটের ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের লোকজন কেনা-বেচায় অংশ নিতে পারেন। নতুন করে এটি বাড়িয়ে ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের লোকজনকে কেনা-বেচার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে সংশ্লিষ্ট জেলায় উৎপাদিত কৃষি ও তৈরি পণ্য ছাড়াও বর্ডার হাটে দুই দেশের অধিবাসীরা তৈরি পোশাক, মেলামাইন ক্রোকারিজ, ফলের জুস ও ট্রয়লেট্রিজ জাতীয় শিল্প পণ্য ছাড়াও স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন কৃষিজাত পণ্য, তাজা ও শুঁটকি মাছ, ডেইরি বা পোল্ট্রি পণ্য, কাঠ ও বেতের তৈরি পণ্য ও হস্তশিল্পজাত পণ্য কেনা-বেচা করছেন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ইস্যুকৃত জয়েন্ট কমিউনিকের ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত জনগণের সুবিধার জন্য পাইলট ভিত্তিতে বর্ডার হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। একই বছরের ২৩ অক্টোবর দুই দেশের মধ্যে বর্ডার হাট সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়। ওই চুক্তিতে পাইলটভিত্তিতে দুটি বর্ডার হাট স্থাপনের কথা থাকলেও এরপর দুই দেশের সরকারের সম্মতিতে এ পর্যন্ত চারটি বর্ডার হাট স্থাপন হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে মহাজোট সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল সীমান্ত হাট। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদর থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে ভারতের কালাইরচর সীমান্তের বিপরীতে বাংলাদেশের বালিয়ামারী সীমান্তে প্রথম বর্ডার হাট উদ্বোধন করা হয়। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুদেশের ৪৭টি করে পণ্য বেচাকেনার কথা। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বর্ডার হাট কাক্সিক্ষত সফলতা আসেনি। কি উপায়ে এসব হাট আরও যুগোপযোগী করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো যায় সে কৌশল নেয়া হবে চুক্তি নবায়নে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, সীমান্ত হাট সীমান্ত এলাকার জনগণের কাছে অত্যন্ত কম সময়ে জনপ্রিয় হয়েছে। সীমান্ত এলাকার যোগাযোগ বৃদ্ধিতে এটি একটি সাফল্য। তাই এই হাট আরও বৃদ্ধির করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। হাট বাড়ানোর বিষয়ে আরও কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা ভাবা হচ্ছে। এ ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি একটি উদ্যোগ নেয়া হবে। বর্তমান ৪টি সীমান্ত হাট চালু রয়েছে, ২টি হাটের নির্মাণ কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং আরও ৭টি হাট স্থাপনের বিষয় বিবেচনাধীন আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য এখন বেশ উপযুক্ত। এ কারণে অনেকে এখানে আসতে উৎসাহ দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতে বর্ডার হাট হবে যেসব এলাকায় ॥ ভবিষ্যতে নতুন করে যেসব এলাকায় বাংলাদেশ-ভারতের বর্ডার স্থাপিত হতে পারে তা হচ্ছেÑ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঘোলাশালা ইউনিয়নের জগমোহনপুর গ্রাম, কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষ্ণপুর গ্রামের দক্ষিণ অংশ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের সীমানা পিলারের মধ্যবর্তী স্থান, নওগাঁর সাপাহার শিরন্টি মৌজার খঞ্জন সীমান্ত, নওগাঁর ধামইরহাট কালুপাড়া মৌজার কালুপাড়া সীমান্ত, নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার শীতলবাজার সীমান্ত, রাধানগর মৌজার সীমান্ত, শাওলি সীমান্ত, তালতলা পাড়া, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট গাজীর ভিটা ইউনিয়নের উত্তর নলকুড়া সীমান্ত, ঝিনাইদহের মহেশপুর যাদবপুর ইউনিয়নের গোপালপুর মৌজা, নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুর বিজয়পুর সীমান্তে।
×