ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উস্কানিমূলক বই মিলেছে সাঈদীর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ আগস্ট ২০১৬

উস্কানিমূলক বই মিলেছে সাঈদীর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানারাতের পর এবার জঙ্গীবাদ সমর্থনকারী বই পাওয়া গেছে জামায়াতের আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পরিচালিত আকস্মিক অভিযানে জঙ্গীবাদে উস্কানিমূলক বইয়ের অস্তিত্ব মিলেছে। বিতর্কিত এ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা সাঈদী। এখন এটি পরিচালনা করছেন সাঈদীর বেয়াই বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তা কামাল উদ্দিন জাফরী। এর আগে ১৭ আগস্ট মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও পাওয়া যায় উগ্র জঙ্গীবাদ সমর্থনকারী বই। জামায়াতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি ছিল বিভিন্ন মহলে। এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ও জঙ্গীবাদ সমর্থনে আর্থিক যোগান দেয় বলেও অভিযোগ ওঠে। জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচীতেও দেখা যায় এসব প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য, উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্তব্যক্তিদের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে বেরিয়ে আসা জামায়াতের ১২৭ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছে মানারাত ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করে তাতেও আছে এ দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি জঙ্গী হামলা ও তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইউজিসি আকস্মিক পরিদর্শনে যাচ্ছে। সোমবার হঠাৎই মানিকনগরে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিদর্শনে যান ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। দলের অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসির উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন, উপ-সচিব শাহীন সিরাজ ও কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম শেখ। সোমবার প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। তাই উর্ধতন কর্মকর্তারা অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন না। ভৌত অবকাঠামো সমস্যা প্রষ্ঠনটির অনিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেখা যায়, একটি ভাড়া করা আবাসিক ভবনে চলছে বেসরকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। অপর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, ভবনের বিভিন্ন তলায় একটি-দুটি করে রুম ভাড়া নিয়ে চলছে এর পাঠদান কার্যক্রম। একই সঙ্গে এর পাশে বসবাস করছে আবাসিক বাসিন্দারা। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করেনি এ প্রতিষ্ঠানটি। নামে মাত্র একটি ছোট গ্রস্থাগার রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। আর সেখানে গিয়েই মেলে জঙ্গীবাদে উস্কানিমূলক বইয়ের সন্ধান। পরিদর্শন সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, প্রথমে আমরা একটি বিল্ডিংয়ে গেলাম। যেটা ছাত্রীদের ক্যাম্পাস। দেখলাম ভর্তি ফরম বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে আর কেউ নেই। পরে জানতে পারলাম সোম ও মঙ্গলবার তাদের সাপ্তাহিক ছুটি। তবে চেয়ারম্যান প্রশ্ন তোলেন সকল প্রতিষ্ঠান শুক্র বা শনিবার বন্ধ কিন্তু এখানে সোম ও মঙ্গলবার বন্ধ কেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাব দেন, এটা তাদের নিয়ম। চেয়ারম্যান বলেন, ক্লাসরুমের চাবি না থাকায় রুমের ভেতরে দেখতে পারলাম না। তবে দুই রুমে মিস্ত্রি কাজ করছে। তা দেখে মনে হলো না এখানে ক্লাস হয়। রাস্তার উল্টোপাশে অন্য বিল্ডিংয়ে ছেলেদের ক্যাম্পাস। তবে দেখলাম একপাশে ফ্যামিলি বাসা অন্যপাশে ক্যাম্পাস। এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলার কোন কারণ নেই। এমনকি স্কুলও না। বড়জোর কোচিং সেন্টার বলা যেতে পারে। লাইব্রেরিও নামে মাত্র। সামান্য কিছু বই পেলাম। এর মধ্যে সৈয়দ কুতুবের বই রয়েছে। যিনি ইসলামী জঙ্গীবাদের আদি প্রবক্তা।’ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেদিন খোলা থাকে সেদিন আবারও আমরা হঠাৎ পরিদর্শন করব। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হবে। এদিকে আকস্মিক পরিদর্শনে রীতিমতো হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা। উপাচার্য বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে উগ্রবাদ সমর্থনকারী বই পাওয়ার কথা জেনেছে কর্তৃপক্ষ। অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলছিলেন, ছুটির দিন থাকার কারণে আমরা উপস্থিত থাকতে পারিনি। দ্রুত পৌঁছানোর আগেই পরিদর্শন টিম চলে যায়। তবে আমাদের কর্মচারীরা সেখানে ছিলেন। আমি জানতে পেরেছি আমাদের লাইব্রেরিতে ইসলামী শিক্ষা বিভাগের একটি বই নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান। বইটি নাকি মিসরের এক লেখকের। যিনি মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থনকারী সদস্য। তার বই নাকি জঙ্গীবাদকে উস্কানি দেয়। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, একজন লেখকের অনেক বই আছে। এ বইটিতে সেরকম কিছু আছে কিনা তা আমরা দেখব। এখন কোন মতামত আপনারা দেবেন কিনাÑ এ প্রশ্নে মাদ্রাসা বোর্ডের সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ইউজিসি আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত দিলে আমরা প্রয়োজনে বিবৃতি দিয়ে আমাদের অবস্থান জানাব। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই বলে দাবি করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ।
×