ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত

সিনহার অশোভন মন্তব্য রবিবারের মধ্যে প্রত্যাহার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ আগস্ট ২০১৬

সিনহার অশোভন মন্তব্য রবিবারের মধ্যে  প্রত্যাহার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভায় বক্তারা বলেছেন, আমাদের মুরব্বি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদারসহ আইনজীবীদের প্রতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যে অশোভন মন্তব্য করেছেন তা রবিবারের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। সাধারণ সভা রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। সভায় সরকার ও বিরোধী উভয় দলের সমর্থক আইনজীবীরাই ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৮ আগস্ট লক্ষ্মীপুর বারের একটি ভবন নির্মাণে শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে কিছু অশোভন মন্তব্য করেন। এ নিয়ে সোমবার সমিতির শামসুল হক চৌধুরী হলে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নেয়া আইনজীবী সমিতির নেতাদের অভিযোগ, সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের একটি মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারকে নিয়ে ‘অশোভন’ কথা বলেছেন। তবে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, গত ১৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্য ছিল লক্ষ্মীপুরের আইনজীবীদের একাংশকে নিয়ে। সভায় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আমি বক্তব্য শুনছি, একটা প্রস্তাব এসেছে, যেটা পরিষ্কার হয়েছে। আমাদেরও মর্যাদা আছে। প্রধান বিচারপতি যে মন্তব্যগুলো করেছেন তা শোভনীয় নয়। নিন্দাযোগ্য, আশাকরি রবিবারের মধ্যে ঐ বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার বলেছেন, তাকে উদ্দেশ্য করে কথাবার্তা বলা হয়েছে।“মাননীয় প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা অশোভন বলে আমি বিশ্বাস করি। এটা শোভা পায় না। আমাদের মর্যাদা আছে। আপনাদের মনে আছে, রেফারেন্স মিটিংয়ে আইনজীবীদের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।” প্রধান বিচারপতির পক্ষ নিয়ে আইনজীবীদের তোপের খে পড়েন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। এ সময় আইনজীবীদের সাধারণ সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বক্তব্য লক্ষ্মীপুর বারের কিছু আইনজীবী সদস্যদের নিয়ে। সেখানকারও সবাই না। যারা নাকি আদালতের জায়গায় ভবন করছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সব আইনজীবীর ওপর এটা আপনারা নেবেন না।’ ‘আমরা যা কিছ্ ুকরি, আমাদের সামনে কয়েকটা বিষয় বিবেচনা নিতে হবে। আমাদের যুদ্ধাপরাধের মামলা এবং অন্যান্য কিছু বিষয়। ইতোমধ্যে জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অনেকগুলো মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনেকগুলো মামলা, বাড়ি-ঘর সংক্রান্ত অনেকগুলো মামলা আছে। আমাদের ওপর অনেকে ক্ষিপ্ত, কেন এই সব মামলা আমরা সিরিয়াসলি করি।’ ‘সরকারের স্বার্থ, প্রজাতন্ত্রের স্বার্থ আমাদের দেখতে হবে। ইতোমধ্যে একটা মামলা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। আমার বক্তব্য নানারকমভাবে গণমাধ্যমে এসেছে। ২৪ তারিখে মীর কাশেম আলীর মামলা (রিভিউ শুনানির দিন রয়েছে)। আমি আপনাদের কাছে আকুল আবেদন করি, এই সময়ে এমন কোন রেজুলেশন আপনারা নেবেন না, যাতে বিচার বিভাগের সঙ্গে আমাদের মুখোমুখি অবস্থান হয়। দরকার হলে এই মিটিং ৭ দিন পিছিয়ে দেন।’এ সময় উপস্থিত আইনজীবীরা এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে ‘দালাল, দালাল’ বলে হৈ চৈ করে ওঠেন। সভায় আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত, এ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব যে কমেন্ট নিয়ে এ অবস্থা, তা তিনি স্বীকার করেছেন। ডিফারেন্স হলো, উনি বলছেন, গুটি কতককে বলেছেন। সবাইকে বলেন নাই। যে টার্মগুলো বলেছেন, প্রত্যেকটা আপত্তিজনক।’ আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে সুর মেলান সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী যারা আছে তাদের বিচার করেন, ফাসি দেন; আমাদের আপত্তি নাই। এটা আমাদের আইনজীবীদের মর্যাদার প্রশ্ন। যারা দুর্নীতিবাজ তাদের বিচার করেন, আমাদের কোন আপত্তি নেই। যারা জ্বালাও পোড়াও করেছে তাদের বিচার করেন, আমাদের কোন আপত্তি নাই। ঠিক আছে, আমাদের আজকের মিটিংয়ের সঙ্গে এটার সম্পর্ক কি, ’তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আইনজীবীদের.. আমরা চাই, এ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব উনি বারের সম্পাদক ছিলেন, সভাপতি ছিলেন, বার কাউন্সিলের সভাপতি, উনি আইনজীবীদের পক্ষে থাকবেন বলে আমরা আশা করি।’ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের সম্পর্কে যে অশোভন মন্তব্য ও কটাক্ষ করেছেন তা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত। এটা আইনজীবীরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। এর ফলে তার প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে পারে না। সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, বাসেত মজুমদারকে যে কথা বলেছেন, তাতে তিনি কতটা বিব্রত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তা বলা যাবে না। প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। বিএনপিপন্থী আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আইনজীবী নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তারা যদি মনে করেন জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়বেন সেটা ভুল হবে, অন্যায় হবে। সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য, আইনজীবীদের রক্ষা করার জন্য, আইন পেশাকে রক্ষার জন্য এটাকে সহজভাবে ছেড়ে দেয়া যাবে না। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমরা আছি। সকলের অবগতির জন্য বলছি, আইনজীবীরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন সেটা সবচেয়ে শক্তিশালী।’ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমাযুনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এ্যাটর্নি জেনারের মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার, বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদী , সৈয়দ মামুন মাহবুব, তৈমুর আলম খন্দকার ।
×