ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন কৌতুক অভিনেতা ফরিদ আলী

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৩ আগস্ট ২০১৬

চলে গেলেন  কৌতুক অভিনেতা  ফরিদ আলী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশিষ্ট কৌতুক অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আলী আর নেই। রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সোমবার বিকেল ৪টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। ফরিদ আলীর ছোট ছেলে ইমরান আলী জয় জনকণ্ঠকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। অভিনেতা ফরিদ আলীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনে। জয় বলেন, গত ১৯ আগস্ট আমরা বাবা-মায়ের ৪১তম বিবাহবার্ষিকীর আয়োজন করছিলাম। এমন সময় সন্ধ্যায় হঠাৎ বাবা চিৎকার করে ওঠেন। তার সারা শরীর ঘামতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাবাকে ওয়ারী বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তাররা বাবাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ওই দিনই তাকে সেখানে ভর্তি করানো হয়। বাবাকে সেখানে সিসিইউতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেল ৪টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জয় জানান, মঙ্গলবার চ্যানেল আইতে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ জোহর এফডিসিতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বানানী কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে। অভিনেতা ফরিদ আলীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এক শোক বার্তায় বলেন, ফরিদ আলী তার সহজাত অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে বাবার চিকিৎসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে হয়েছিল। ষাটের দশকের চলচ্চিত্র অভিনেতা ফরিদ আলী। বহুদিন অসুস্থ থাকার পরও ৭৫ বছর বয়সে এসে তিনি তৈরি করতে চেয়েছিলেন টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র। দীর্ঘ অভিনয় জগতে তিনি দেখিয়েছেন পারদর্শিতা। কৌতুক অভিনয়ে তিনি দর্শকমনে এখনও দাগ কেটে রয়েছেন। আমজাদ হোসেন রচিত ঈদের বিশেষ নাটকে ‘ট্যাকা দেন দুবাই যামু, বাংলাদেশে থাকমু না’ এই সংলাপ দুটির সঙ্গে যারা পরিচিত তারা এক বাক্যেই উচ্চারণ করবেন ফরিদ আলীর নাম। শুধুমাত্র অভিনয় নয়, নাটক লেখা ও নির্দেশনায়ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন এই শিল্পী। ফরিদ আলীর জন্ম ১৯৪১ সালের ৭ এপ্রিল কলকাতার ভবানীপুরে। বাবা এ্যাডভোকেট এএফএন মোর্শেদ আলী এবং মা বদরুন্নেছা বেগম। শিল্পী ফরিদ আলী ১৯৪৬ সালে বাবা-মার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। মঞ্চ থেকে তার অভিনয় শুরু। শহীদুল আমীনের লেখা ‘কনে দেখা’ নাটকে নারী চরিত্রে অভিনয় করে ১৯৬২ সালে তিনি অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন। অসংখ্য মঞ্চ নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। কল্যাণ মিত্রের ‘দায়ী কে’, শম্ভু মিত্র ও অমিত মৈত্রের ‘কাঞ্চন রঙ্গ’সহ অনেক নাটকে তিনি অভিনয় করে দর্শক নন্দিত হয়েছেন। আশকার ইবনে সাঈকের ‘বিদ্রোহী পদ্মা’ নাটকে অভিনয়সহ নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। প্রফেসর মুনীর চৌধুরীর লেখা ‘একতলা দোতলা’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথম টিভিতে দৃশ্যমান হন। তাকে টিভি পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তৎকালীন জনপ্রিয় পরিচালক ও অভিনেতা মনিরুল আলম। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি টিভি নাটকে অভিনয় করতে থাকেন। মঞ্চেও সমানভাবে চলে তার অভিনয়। তার অভিনীত টিভি নাটকের মধ্যে জনপ্রিয় নাটকগুলো হলো-নূর মমিনের রচিত ‘অন্ধকারটাই আলো’, মোর্শেদ চৌধুরীর ‘অনিবার্য কারণবশত আজকের নাটক হচ্ছে না’, আব্দুর দস্তার রচিত ‘বিদ্যালংকার প্রেস’, আলতাফ হোসেনের ‘ত্রিরতœ’ সহ আরও অনেক নাটক। তার নিজের লেখা প্রথম টিভি নাটক ‘নবজন্ম’। এই নাটকটি নির্দেশনায় ছিলেন মনিরুল আলম। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য টিভি ধারাবাহিক -‘মফিজ মোখলেস কুদ্দুস’, ও ‘রূপসী’ সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় নাটক। অভিনেতা ফরিদ আলীর চলচ্চিত্রে পদার্পণ ১৯৬৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘ধারাপাত’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। তখন থেকে একাধারে বহু ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য জীবন তৃষ্ণা, সেøাগান, চান্দা, দাগ, অধিকার ইত্যাদি।
×