ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যানারি না সরায় ৬ দিনে ক্ষতিপূরণ জমা পড়েছে ৫৬ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৩ আগস্ট ২০১৬

ট্যানারি না সরায় ৬ দিনে ক্ষতিপূরণ জমা পড়েছে ৫৬ লাখ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে নির্ধারিত সময়ে ট্যানারি না সরানোয় গত ছয় দিনে সরকারী কোষাগারে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে ৯৮টি প্রতিষ্ঠান। জরিমানা পরিশোধ করেছে বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। সোমবার শিল্প সচিব এ প্রতিবেদন দাখিল করেন বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। তিনি জানান, শিল্প সচিব হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা দেয়া প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, গত ১১ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের শিল্প ভবন কর্পোরেট ব্রাঞ্চের মাধ্যমে ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করেছেন ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তবে ১৬ জুন থেকে এ জরিমানা পরিশোধের প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল বলে জানান মনজিল মোরশেদ। মামলার বিবরণে জানা যায়, এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। দীর্ঘদিন ধরে ওই আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় অন্য এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট ফের নির্দেশ দেয়। সরকার পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও স্থানান্তর না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা করেন পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মনজিল মোরশেদ। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরে গত বছরের ২১ এপ্রিল আদালতের তলবে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন শিল্প সচিব। গত ১৩ এপ্রিল হাজারীবাগে এখনও যেসব ট্যানারি ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের তালিকা চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের এ আদেশ অনুসারে শিল্প সচিবের পক্ষে আইনজীবী রইস উদ্দিন গত ১৬ জুন ১৫৫টি ট্যানারির তালিকা হস্তান্তর করেন। তিনি জানান, এর মধ্যে কেবল রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড ইউনিট-২ নামে একটি প্রতিষ্ঠান সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান শিল্প সচিব। বাকি ১৫৪টি স্থানান্তরিত হয়নি। এরপর ওই দিনই আদালতের আদেশ অমান্য করে পরিবেশ দূষণ করায় হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত ১৫৪ ট্যানারিকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে এ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গত ২৭ জুন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপীল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ ট্যানারিজ এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও ফিনিশড লেদার এ্যাসোসিয়েশন। ২৮ জুন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ১৭ জুলাই শুনানির জন্য আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ১৭ জুলাই পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি শেষে ১৮ জুলাই জরিমানা কমিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করা হয়। হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত ১৫৪ ট্যানারি শিল্প মালিককে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছিল হাইকোর্ট। গত ১৮ জুলাই জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার টাকা ধার্য করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এ জরিমানার অর্ধেক লিভার ফাউন্ডেশনকে দেয়ার আদেশও দেয় সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্টের জরিমানা আদেশের বিরুদ্ধে ট্যানারি মালিকপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বিভাগ। আদালতে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ।
×