ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে হিযবুতের নেতৃত্বে সক্রিয় জেএমবি ও এবিটি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৩ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রামে হিযবুতের নেতৃত্বে সক্রিয় জেএমবি ও এবিটি

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর সাংগঠনিক তৎপরতা বন্ধ হয়নি। চট্টগ্রামে এদের নেতৃত্বে জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা সক্রিয়। এরা ঐক্যবদ্ধভাবে বড় ধরনের নাশকতার সুযোগ খুঁজছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে খবর রয়েছে। কিন্তু তাদের টার্গেট কি এবং বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে কোথায় আস্তানা গড়ে তুলেছে পুলিশী অভিযানে বেরিয়ে আসছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার আগেও হিযবুত তাহরীর সদস্যদের প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার লাগাতে দেখা যায়। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর ২/৩ জন করে সদস্য ভাগ হয়ে মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণ করত হিযবুত তাহরীর সদস্যরা। এ সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য শিক্ষিত, ভার্সিটি পড়ুয়া। স্মার্ট, জিন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট পরিধান করে এরা সাংগঠনিক কার্যক্রমে তৎপর থাকে। মুখে দাড়ি থাকে না। দেখলে বোঝা যায় না নেপথ্যে এরা জঙ্গীপনায় জড়িত। সূত্র জানায়, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় কয়েকটি জঙ্গীপনার ঘটনা ঘটানোর পর চট্টগ্রামে হিযবুত তাহরীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের তৎপরতা লক্ষণীয়। ইতোমধ্যেই তিন সংগঠনের বেশকিছু সদস্য পুলিশী অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি আলোচিত। গত ২ আগস্ট পতেঙ্গার কাটগড় থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৫ সদস্য এবং ১৯ আগস্ট নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে তিন সদস্য পুলিশী অভিযানে গ্রেফতার হয়। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে কখনও জেএমবির নেতৃত্বে কখনও হিযবুত তাহরীর নেতত্বে কখনও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সদস্যরা সংগঠিত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, জিহাদী বই, বিভিন্ন ধরনের লিফলেট উদ্ধার করা হলেও অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যায়নি। তবে অস্ত্রশস্ত্র যাদের হাতে রয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের তাদের নাম পাওয়া গেছে। কিন্তু এদের নাম যেমন ছদ্ম ঠিকানাও সঠিক থাকে না বলে পুলিশ নেতৃত্বদানকারী পর্যায়ের জঙ্গীদের অভিযান চালিয়েও জালে ফেলতে পারছে না। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, চট্টগ্রামে এ তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসেছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। তারা চট্টগ্রামে এখনও কোন অঘটন ঘটায়নি। তবে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে। এ আশঙ্কা নিয়ে সিএমপি ও জেলা পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে। সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার ও জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা ইতোমধ্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চট্টগ্রামে জঙ্গীরা কোন ধরনের অপতৎপরতার সুযোগ যাতে না পায় সেজন্য তারা সজাগ রয়েছেন। প্রতিনিয়ত জঙ্গীবিরোধী অভিযানে এদের কেউ না কেউ ধরা পড়ছে। তারা ধারণা পেয়েছেন, এরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নগরী ও জেলা বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গেঁড়ে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। সর্বোচ্চ ২/৩ জনের মধ্যে নিজেদের যোগাযোগ সীমাবদ্ধ থাকে। ধরা পড়লে এই ২/৩ জনের বাইরে তারা আর কারও পরিচয় জানাতে পারে না। কি কারণে তারা ধর্মের নামে নাশকতার কর্মকা-ে লিপ্ত এমন প্রশ্নের উত্তরে এদের একটিই বক্তব্য থাকেÑ মরলে তারা জান্নাত পাবে। এটা যে সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা এবং ভুল পথে তারা পরিচালিত হচ্ছে এমন কথা তারা বিশ্বাস করে না। পুলিশ সূত্রে আরও ধারণা দেয়া হয়েছে, তারা এমন জঙ্গীদেরও পেয়েছেন যারা ধরা পড়ার পর বেশ জোর গলায় বলে থাকে, ‘মেরে ফেলুন স্যার’। পুলিশ তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যতই কথা বের করার চেষ্টা করে ততই তারা অনড় অবস্থানে থাকে। তাদের এ সমস্ত আচরণে পুলিশ কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়ে যান। রিমান্ডে এনে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের কাছ থেকে হাতেগোনা কয়েক সদস্য নাম পাওয়া যায়। কিন্তু আসল ঘটনা তারা কোনভাবেই ফাঁস করে না। চট্টগ্রামে যেসব জঙ্গী সদস্য ধরা পড়ছে এদের সঠিক নাম ও ঠিকানা বের করা যায় না বলে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়াও কষ্টদায়ক হয়ে যায়। আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে হিযবুত তাহরীর ও গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে গত প্রায় ৪ বছর থেকে দায়ের করা ১৮ মামলার বিচার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না শুধু অনুমোদন না আসে। এসব মামলায় ৫০ জনেরও বেশি হিযবুত তাহরীর ও জেএমবি সদস্য আসামি। দীর্ঘসূত্রতার কারণে কয়েকজন ইতোমধ্যে আদালত থেকে জামিনও পেয়ে গেছেন। চট্টগ্রাম মহানগর পিপি ফখরুল উদ্দিন চৌধুরী জানান, সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় চার্জশীট দাখিলের পর তা আমলে নিয়ে বিচার শুরু করার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এ ধরনের অনুমোদনের অপেক্ষায় বর্তমানে মামলার সংখ্যা ২০টিরও বেশি। এসব মামলার মধ্যে ১৪টি হচ্ছে হিযুবত তাহরীর ও অবশিষ্টগুলো জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। পুলিশ ও সরকার পক্ষে কৌঁসুলিগণ অভিন্ন সুরে বলেছেন, জঙ্গীপনায় জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি প্রদানের বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন না হওয়ার কারণে জঙ্গীদের বেপরোয়া মনোভাব পরিহার হচ্ছে না। আগে জঙ্গী হিসেবে গ্রেফতার হয়ে সহজেই জামিন পেয়ে গেছেন। তবে ঢাকায় গুলশান হত্যাকা-, শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীদের নারকীয় ঘটনার পর গ্রেফতারকৃতরা এখন সহজে জামিন পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। তবে বিচারিক ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে না এদের নাম ঠিকানা সঠিকভাবে না পাওয়ার কারণে। গুলশান ট্র্যাজেডির পর দেশজুড়ে জঙ্গীবিরোধী তৎপরতা সরকার বৃদ্ধির পাশাপাশি বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। যে কারণে এদের অপতৎপরতা বর্তমানে অনেকটা কোণঠাসা। তবে এদের গোপন যোগাযোগ ঠিকই রয়েছে। এবং সুযোগ বুঝে ছোবল মারতে বিন্দুমাত্র পিছপা যে হবে না তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বিশ্বাস করে।
×