ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রায়হান আহমেদ তপাদার

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার- কিছু তথ্য

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৩ আগস্ট ২০১৬

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার- কিছু তথ্য

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার একাধারে নাট্যকার ও কবি ছিলেন। তিনি জন্মেছিলেন ইংল্যান্ডের ওয়্যারউইকশায়ারের এ্যাভনে। শেক্সপিয়ার জন্মগ্রহণ করেন পনেরো শ’ চৌষট্টি সালের ছাব্বিশ এপ্রিল। তবে তার জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলেন তেইশ এপ্রিল। তার বাবা জন শেক্সপিয়ার উচ্চপদস্থ প্রশাসক ছিলেন। মা মেরি এডের্নও বেশ বড় ঘরের মেয়ে ছিলেন। আর এই দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে শেক্সপিয়ার ছিলেন তৃতীয়। আশ্চর্যের কথা হলো এই, তিনি আসলে কোন্ স্কুলে পড়েছিলেন তা জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হয়, পড়াশোনা করেছিলেন স্ট্রাটফোর্ড গ্রামার স্কুলে। তার ছাত্রজীবন সম্পর্কে এই তথ্যটি দিয়েছে বিবিসি। এর পর তার বিয়ের বিষয়টি ছাড়া আর কোন তথ্যই নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে তার স্কুল জীবন নিয়ে বেশ মজার একটি গল্প চালু আছে। ছাত্র হিসেবে শেক্সপিয়ার নাকি তেমন সুবিধার ছিলেন না। চেষ্টা করেও খুব একটা ভাল ফল করতে পারতেন না। বিরক্ত হয়ে একবার নাকি তার এক শিক্ষক বলেই দিয়েছিলেন, তোমার তো ভবিষ্যত একেবারেই অন্ধকার। তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। এর পরে তিনি যে কী হয়েছিলেন তা বিশ্ব দেখছে। বিশ্বের সর্বকালের শীর্ষস্থানীয় নাট্যকারদের একজন ইংরেজী সাহিত্যের কিংবদন্তি শেক্সপিয়ার আজ থেকে চার শ’ বছর আগে বিদায় নিয়েছিলেন। রয়াল শেক্সপিয়ার কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর গ্রেগরি ডোরান এই মহান সাহিত্যিক সম্পর্কে দিয়েছেন দারুণ সব তথ্য। এক : এক বিমান দুর্ঘটনার কারণ ছিলেন শেক্সপিয়ার : উনিশ শ’ ষাট সালের চার অক্টোবর একটি লকগেড ইলেকট্রা বিমান বোস্টন এয়ারপোর্ট থেকে উড়াল দেয়। বিমানের রানওয়েতে ছিল প্রায় দশ হাজার স্টারলিং পাখির ঝাঁক। বিমানের সঙ্গে এগুলো উড়ে যায়। এক সময় বিমানের ইঞ্জিনে দুর্ঘটনাক্রমে কিছু পাখি ঢুকে পড়ে এবং বিমানটি ভূপতিত হয়। মারা যান বাষট্টি যাত্রী। এই পাখিটির বাস উত্তর আমেরিকায়। শেক্সপিয়ার ভক্ত নিউইয়র্কের একজন ইউজিন শিফেলিন। তিনি এ পাখিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন আঠারো শ’ নব্বই সালে। শেক্সপিয়ারের সাহিত্যে বর্ণিত এই গায়ক পাখির বাস যেন সেন্ট্রাল পার্কে হয়, তার ব্যবস্থা করেন ইউজিন। বিংশ শতাব্দীতে স্টারলিং পাখি মিসিসিপিতে পৌঁছে এবং আবারও ক্যালিফোর্নিয়াতে আসে। বর্তমানে তাদের আলাস্কা ও ফ্লোরিডায় দেখা যায়; এরা এখন সংখ্যায় বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে। এরা কেবল ওই বিমান দুর্ঘটনার জন্যই দায়ী নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্যই নষ্টের কারণ হচ্ছে। দুই : হিটলারের উনিশ শ’ ছাব্বিশ সালের স্কেচ বুকে জুলিয়াস সিজার মঞ্চস্থ করার একটি ডিজাইন আঁকা ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের প্রতি দারুণ আকর্ষণ ছিল হিটলারের। কোলোসিয়াাম, প্যান্তিয়ান এবং কারাকালার বাথস ঘুরে আসার পর তার মনে এমন কিছু থার্ড রাইখের জন্য সৃষ্টির তৃষ্ণা ছিল। উনিশ শ’ সাঁইত্রিশ সালে ওরসন ওয়েলেস তার মারকারি থিয়েটার কোম্পানি চালু করেন নিউইয়র্কে। সেখানে জুলিয়াস সিজার নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। ওই নাটকে নাৎসি জার্মানি ও ফ্যাসিস্ট ইতালিকে তুলে ধরা হয়। তিন : শেক্সপিয়ারের থিয়েটার ছিল তীব্র দুর্গন্ধময়। পনেরো শ’ নিরানব্বই সালে থমাস প্লেটার লন্ডনে নতুন প্রতিষ্ঠিত গ্লোব থিয়েটারে জুলিয়াস সিজার দেখতে গেলেন। কিন্তু সেখানে বাজে গন্ধ। পেছনে দেখলেন এক শ’ বিশটি ইংলিশ মাস্টিফস জাতের কুকুর। কিছু দোকানে ছিল ভালুক ও ষাঁড়ের মাংস। অঞ্চলটি ছিল খুব বাজে গন্ধপূর্ণ। গ্লোব থিয়েটার আগুনে ধসে পড়ার দুই মাসের মধ্যেই কাছে গড়ে ওঠে দ্য হোপ থিয়েটার। সেখানেও একই অবস্থা বিরাজ করত। চার : বিখ্যাত অভিনেত্রী সারাহ বার্নহার্ডিট একবার লেডি মেকবেথের মূর্তি তৈরির জন্য মডেল হয়েছিলেন। গোয়ার স্ট্যাচু অব শেক্সপিয়ার দাঁড়িয়ে আছে স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-উড আপঅন-এ্যাভনের রয়াল শেক্সপিয়ার থিয়েটারের সামনে। এর স্তম্ভমূলে চারটি ছোট মূর্তি রয়েছে। এই চারটি ব্রোঞ্জ ফিগার শেক্সপিয়ারের সাহিত্যের চার উপাদান তুলে ধরেছে। প্যারিসে বুলেভার্দ মন্টপানাসের নিজ স্টুডিওতে এর ডিজাইন করেন ভাস্কর লর্ড রোনাল্ড গোয়ার। একদিন অভিনেত্রী সারাহ দেখা করতে গেলেন গোয়ারের সঙ্গে। সেখানে সারাহ লেডি মেকবেথের বিষয়ে কথা বলেন। গোয়ারের স্ট্যাচু বসানো হয় ভবনের পাশে, সোয়ান থিয়েটারের পেছনে এবং চার্চের দিকে মুখ করে। পাঁচ : মোজার্ট টেম্পেস্টের একটি অপেরা প্রায় লিখেই ফেলেছিলেন। সবাই জানেন যে, গিওসেপি ভার্ডি তার জীবনের বহু সময় ব্যয় করেছেন কিংলিয়ারের ওপর একটি অপেরা লেখার কাজে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, মোজার্ট টেম্পেস্টের ওপর একটি অপেরা সংস্করণ করেছিলেন। এদিকে ফ্রেডরিক ডিলিয়াস ক্রুয়েজ ইউ লাইক ইট নিয়েও অপেরা লিখতে চেয়েছিলেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি ঘটেছে মোজার্টের ক্ষেত্রে। ছয় : পনেরো শ’ পঁচাশি সালের দুই ফেব্রুয়ারি শেক্সপিয়ারের যমজ সন্তানকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করা হয়। তাদের নাম ছিল হেমনেট এবং জুডিথ। এটা ঘটেছিল ক্যান্ডেল মাসের দিন। ওই দিন ঐতিহ্যগতভাবে ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা নামিয়ে ফেলা হয়। এর পনেরো বছর পর অর্থাৎ ষোলো শ’ সালের ক্যান্ডেল মাসের দিন মিডল টেম্পলে অনুষ্ঠিত হয় টুয়েলফথ নাইট। এই নাটকে অন্য দুটো যমজ বাচ্চাকে নেয়া হয়। আবার ওই নাটকে জাহাজডুবি হয় এবং বাচ্চারা ঢেউয়ের রাজ্যে হারিয়ে যায়। পনেরো শ’ ছিয়ানব্বই সালের গ্রীষ্মের শেষের দিকে জুডিথের যমজ হেমনেট মারা যান। পরে অবশ্য ওই নাটকে দুই শিশুকে আবারও এক করেন নাটকীয় কায়দায়। বাস্তবে জুডিথ কোন দিন তার জন্মদিন পালন করেননি। সাত : সতেরো শ’ ছিয়াশি সালে রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট দ্য মেরি ওয়াইভস অব উইন্ডসোর নামের শেক্সপিয়ারের একটি নাইট অনুবাদ করেন। তিনি নেভা নদীর পাশে হারমিটেজ থিয়েটার নির্মাণ করেন। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তার অনুবাদকৃত নাটক। এটাই রাশিয়ার প্রথম নাটক যার অনুপ্রেরণা ছিলেন শেক্সপিয়ার। আট : শেক্সপিয়ার নাটকের সবচেয়ে ব্যতিক্রম মঞ্চায়ন ঘটে ষোলো শ’ তেইশ সালে। ওয়াশিংটনের ফোলজার লাইব্রেরিতে হাতে লেখা শেক্সপিয়ারের দুটো নাটকের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। কেন্টের প্লাকলেতে এটি মঞ্চায়ন করা হয় পারিবারিকভাবে। স্যার এডওয়াার্ড ডেরিং নাটকের দুটো অংশকে নিজেই এক করে বাড়িতে তা মঞ্চায়ন করেন। নয় : একটি বিশাল রেডউড গাছের গুঁড়ির ওপর মঞ্চায়ন হয় শেক্সপিয়ারের একটি নাটক। আঠারো শ’ চল্লিশ এর দশকে পশ্চিমে যখন স্বর্ণের খোঁজে খনিতে ব্যস্ত মানুষ তখন গিরিখাদে শেক্সপিয়ারের নাটক মঞ্চস্থ হতো। সেখানে বিভিন্ন সেলুনে মঞ্চ তৈরি করা হতো। মাঠে ক্যানভাস এবং কাঠের কেবিন বানিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হতো। দশ : শেক্সপিয়ারকে আমাদের কবিদের তারকা বলে ডাকতেন জনসন। শেক্সপিয়ারের চরিত্রের নামে বহু স্যাটেলাইটের নামকরণ হলেও শেক্সপিয়ারের নামে কোন স্যাটেলাইট করা হয়ানি। আঠারো শ’ একান্ন সালের দিকে উইলিয়াম লাসের গ্রহের স্যাটেলাইটগুলোর নামকরণ শেক্সপিয়ারের নাটকের চরিত্রের নামে করতে থাকেন। উপগ্রহ আছে যার নাম টাইটানিয়া, ওবেরন এবং পাক। এমন আছে প্রোসপেরে, এলিয়েল, ক্যালিবান এবং সাইকোরাক্স (ক্যালিবানের মা)। এ সবই শেক্সপিয়ারের চরিত্র। অথচ দেশের কোন কিছু শেক্সপিয়ারের নামে করা হয়নি। তবে রয়াল এক্সটার্ন মিক্যাল সোসাইটি মাথায় রেখেছে যে, এ বছর তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীতে হাবল টেলিস্কোপে কোন বিশাল নক্ষত্র বা গ্রহ খুঁজে পাওয়া গেলে সেটা শেক্সপিয়ারের নামে করা হবে। এগারো : এই কবি ও নাট্যকারের মৃত্যুবার্ষিকীতে সম্মান জানাতে গুগল ডুডলের মাধ্যমে শেক্সপিয়ারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। নাট্যজগতের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজের শহরে ফিরে এসেছিলেন শেক্সপিয়ার। জীবনের বাকি সময়টুকু তিনি কাটিয়ে দেন ছোট্ট এই শহরে, নিজের বাড়িতে। পাঁচ বছরের মাথায়, ষোলো শ’ ষোলো সালের তেইশ এপ্রিল তিনি মারা যান। তাকে সমাহিত করা হয় তার জন্মভূমিতেই, এ্যাভনের একটি গির্জায়। ৎধরযধহ৫৬৭@ুধযড়ড়.পড়.ঁশ
×