ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোর প্রিয়া হবে...

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২২ আগস্ট ২০১৬

মোর প্রিয়া হবে...

ইব্রাহিম নোমান ॥ রাতুল ও মিম দু’জন দুজনকে ভালবাসে। দুজনই চাকরি করছে। খুব শীঘ্রই বিয়ের কথা ভাবছে তারা। রাতুল নিজের অতীত সম্পর্কে মিমকে সবই বলেছে। তবে কলেজে পড়ার সময় মিমের অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। বেশ কয়েক বছর ছিল সম্পর্কটা। কিন্তু সেটা অতীত। তবে সেই ছেলেটির সঙ্গে মিমের এখন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মিম এখন রাতুলকেই ভালবাসে। রাতুলকে সব বলে দিতে ইচ্ছা করে মিমের। মিম মাঝে মাঝে ভাবে সব বলে দেবে রাতুলকে। একদিন একটু হাল্কা করে বলেছিল মিম, সেই সম্পর্কের কথা রাতুলকে। কিন্তু কথাটা শুনেই রাতুলের মন খারাপ হয়ে গেছে। সেটা মিমও খেয়াল করেছে, তাই সম্পূর্ণ কথাটা আর বলেনি। মিম শুধু ভাবে রাতুল সব শুনলে যদি আরও বেশি রাগ করে, যদি সম্পর্কটি এখানেই শেষ হয়ে যায়... বন্ধুরা, আমাদের সবার জীবনেই রয়েছে জীবন সম্পর্কিত নানা সমস্যা। চলুন জেনে নিই, মিমের এখন কি করা উচিত আর রাতুলের কিভাবে মিমকে সহযোগিতা করা দরকার- * সঙ্গীর জীবন সম্পর্কে জানুন সম্পর্কের শুরুতে অনেকে কেবল নিজের সম্পর্কেই বেশি ভেবে থাকে। যেমন নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন। অন্য একটি মানুষ তার পরিবারে যে যুক্ত হয়েছে সেটি তার মনেই থাকে না। সে কেবল ব্যস্ত হয়ে পরে নিজেকে নিয়ে। এমন ক্ষেত্রে অপর মানুষটি থেকে আপনি সম্পর্ক গড়ে তুলার সহযোগিতা কম পাবেন। তার এই নতুন জীবনের শুরুতে তার সঙ্গে তার পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় এদের নিয়ে কথা বলুন। তাদের সম্পর্কে জানতে চান। সে যে আপনার জীবনের অংশ তা তাকে ধীরে ধীরে বোঝাতে থাকুন। * জীবনের উত্থান-পতন সবার জীবনেই একটা সময় আসে যখন মানসিকভাবে কিছুটা বিরক্ত, খুব চাপ যাচ্ছে মনের ওপর দিয়ে অথবা আপনি কিছুটা সময় একা থাকতে চান। এই ব্যাপারগুলো যেমন আপনার বেলায় ঘটতে পারে ঠিক তেমনি আপনার সঙ্গীর বেলাতেও ঘটতে পারে। * অতীত সম্পর্কে বলুন আপনার জীবনে এর আগে অন্য কারও সঙ্গে ভালবাসা থাকতেই পারে। সেই ভালবাসার মানুষ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিন। আমরা প্রায় সবাই একই ধরনের একটা ভুল করে থাকি। তা হলো, আগের ভালবাসার ব্যক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য শেয়ার করি না। পরে বললেও আপনার সঙ্গী আপনার মনকে বুঝতে পারবে, এ ধারণা থেকে দূরে সরে আসুন। * ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক দুজন মানুষের একটা মত হবে এটা ভাবা একেবারেই বোকামি। বরঞ্চ ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে ভিন্ন ধারণা কখনও আপনার সম্পর্ক নষ্ট করবে না। ভিন্নমত সম্পর্ককে মজবুত করে। *সমস্যা মোকাবেলা জীবনে সমস্যা আসবে এবং সেগুলোকে মোকাবেলা করাটাই আমাদের লক্ষ্য। তাই কোন সমস্যা এলে হতাশ হলে চলবে না। সমস্যাকে কখনও অবহেলা করবেন না। সঙ্গীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলুন। এমন তো হতে পারে সে আপনাকে ভাল একটা সমাধান দিতে পারে। * তার কথাও শুনুন দুজন মিলে যখন কোন বিষয়ে কথা বলবেন তখন শুধু আপনিই বলে যাবেন এটা করবেন না। তার কথা শুনুন মনোযোগ দিয়ে, তার কথাকে প্রাধান্য দিন। * ক্ষমা করুন, ভুলে যান অতীতের কোন দুঃখজনক অথবা আপমানজনক কথা বার বার মনে করা একেবারেই ঠিক নয়। তার ভুল ভুলে যান। ভুল ধরে বসে থাকা সবচেয়ে বড় ভুল। *সঙ্গীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন দুটি মানুষ দুটি মতাদশের, ভিন্ন ধারার হবে এটাই স্বাভাবিক। আপনার মতের সঙ্গে মিলছে না বলে আপনি তার যুক্তিকে পাত্তাই দেবেন না, এই ভুল করবেন না। তার মতামতকে গুরুত্ব দিন, গ্রহণ করুন। * সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন সঙ্গীর ভুল নিয়ে ভাববেন না সামনে এগিয়ে যাবেন। ভুলকে এড়িয়ে বলুন ভালবাসি। জীবন যত কঠিনই হোক তাকে সহজ করে নিতে হবে। * লক্ষ্য এবং স্বপ্ন সম্পর্কে ধারণা দিন আপনার জীবনের লক্ষ্য এবং স্বপ্ন সম্পর্কে আপনার সঙ্গীকে পরিষ্কার ধারণা দিন এবং তাকে এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে নিন। * প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে নিন একজন মানুষ ভুল করতেই পারে। আপনিও অনেক সময় ভুল করেন। তাই যে কোন সম্পর্কেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। দুজনেই যদি চলার পথটি মসৃণ করার চেষ্টা করেন তাহলে দুজনই সুখী হবেন। ভুলে যাওয়ার, ক্ষমা করার, পূর্ণ করার ইচ্ছা নিয়ে ভালবাসি বলুন। * ভাগাভাগি করে করুন মানুষ যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি তাদের শখ ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে যখন একে অন্যর সঙ্গে জড়িয়ে যায় তখন শখের কাজের ওপর অনেক ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়। এই ক্ষেত্রে উচিত দুজনের ভাললাগা খারাপলাগাগুলো নিয়ে আগে কথা বলা। যার যেটা ভাললাগে তাকে সম্মান দেয়া এবং তাকে সেই কাজে অনুপ্রাণিত করা। * নিজের মতো করে নিন আপনার ভালবাসার মানুষটিকে আপনার মতো করে তুলুন। শ্রদ্ধা করুন, অর্থপূর্ণ কাজ করুন, সামাজিক কাজে যুক্ত থাকুন, আপনার আগ্রহকে আবিষ্কার করুন এবং আপনার সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করুন। এতে করে দুজনের মধ্যে ভালবাস বাড়বে। দুজনই যদি দুজনার কাছে পরিষ্কার থাকেন তাহলে কোন সমস্যাই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না। * চাপিয়ে না দেয়া ভেবে দেখুন তো, ছোটাবেলায় আপনার ওপর যখন বাবা-মা কিছু চাপিয়ে দিতেন তখন কি সেটা আপনার ভাল লাগত? মনে হয় না। তাহলে আপনার সঙ্গীর কেন ভাল লাগবে। কখনও আপনার সঙ্গীর ওপর সব ভার চাপিয়ে দেবেন না। * আস্থা রাখুন আপনার ভালবাসার মানুষের প্রতি আস্থা রাখুন। সত্য বলুন। মনে রাখবেন, মিথ্যা দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। সে যদি আপনাকে ভালবাসে তাহলে আপনার অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। তবে কখনই বিশ্বাসের সুযোগ নেবেন না। ভালবাসা জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্ব। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ভালবাসার প্রয়োজন। আমরা ভালবাসায় একে অন্যকে বুঝতে শিখি, মন্দলাগা ভাললাগা ভাগাভাগি করতে শিখি। একটি মিষ্টি এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে দরকার কিছু সময় এবং একে অপরকে বোঝার ক্ষমতা। ভালবাসা আছে বলেই তো-এত কাছে কাছে থাকা। আর কাছাকাছি থাকলে ঝগড়াঝাটি, খুনসুটি হওয়া স্বাভাবিক। সব কিছুই কিন্তু ভালবাসার অংশ। তাই সঙ্গীর প্রতি আস্থা রাখুন, বিশ্বাস করুন, প্রয়োজনে ক্ষমা করুন আর অনেক বেশি করে ভালবাসুন। [email protected] ছবি : ইবনুল আসেফ জাওয়াদ
×