স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রায় দুই মাস যাবত নিরাপত্তা প্রহরী নেই। শঙ্কিত হাসপাতালে আগত মানুষজন। সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের এই হাসপাতালে অহরহ চুরি, মারামারিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসক, নার্স, ইন্টার্ন চিকিৎসক, রোগী এবং রোগীর সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা একবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। সেই সঙ্গে পরিচ্ছন্নকর্মী না থাকায় হাসপাতালে রোগীর জন্য আরও বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংকট রয়েছে চিকিৎসকেরও। তবে চিকিৎসা সেবায় এই হাসপাতালে হেমোডায়ালাসিস, ল্যাপারোস্কোপি, সিসিইউ, আইসিসিইউসহ নানা বিভাগ সংযোজন করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জেলা সদরের এই হাসপাতালে আউট সোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা কর্মী ও পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ করা হয়ে থাকে। গত জুন মাসে এই প্রক্রিয়ার চুক্তি মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে মেয়াদ শেষ হবার আগেই জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ২৫ জন নিরাপত্তা কর্মী ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পরিচালনার জন্য ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হয়। যথাসময়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিলেও বাছাই প্রক্রিয়ায় নানা টালবাহানা শুরু হয়। সর্বনি¤œ দরদাতার অনুকূলে সুপারিশ না করে অপর এক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার সুপারিশ করে কমিটি। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সর্বনি¤œ দরদাতার অনুকূলে কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়। ভেস্তে যায় অসৎ উদ্দেশ্য। এখানেই দেখা দেয় সংশিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মনোবেদনা। বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে সিভিল সার্জন কাম হাসপাতালের তত্ত্ব¡াবধায়ক ১০ দিনের সফরে যান বিদেশে। এর মধ্যে অবশ্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে কাজের অনুকূলে নিরাপত্তা জামানত ও কর্মীর তালিকা জমা দেয়ার জন্য বলা হয়। ঠিকাদার চিঠি পেয়ে সময়মতো নিরাপত্তা জামানত ও কর্মীর তালিকা জমা করেন। কিন্তু উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পেলে কার্যাদেশ দেয়া যাবে না এমন অজুহাতে সিভিল সার্জন কাম-তত্ত্ব¡াবধায়ক ডাঃ শহীদ মোঃ সাদেকুল ইসলাম গত পহেলা আগস্ট সিরাজগঞ্জের কার্যভার হস্তান্তর করেন। এ নিয়েও রয়েছে লুকোচুরি। তিনি বিদেশ থেকে ১ আগস্ট সোমবার বিমানযোগে দুপুর সাড়ে ১২টায় পৌঁছালেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। সেদিনই অপরাহ্নে তিনি তার বিদায়ী কর্মস্থল সিরাজগঞ্জে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিলেন নবাগত কর্মকর্তাকে। আবার একই দিন অপরাহ্নে ঢাকায় নতুন কর্মস্থলে দায়িত্বও নিলেন তিনি। সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় সড়ক পথে যেতে বর্তমান সময়ে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। কি করে তিনি বিদেশ থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকার বিমান বন্দরে নেমে সিরাজগঞ্জে এলেন, আবার সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় গেলেন? আসলে এ সবই ছিল কাগজে কলমে, কেন এই লুকোচুরি?
নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গত ১৪ আগস্ট রাতে ঘটেছে দুঃখজনক ঘটনা। উল্লাপাড়া থেকে ছাত্রলীগের এক কর্মী ভর্তি হয় হাসপাতালে। ওই রাতে ডিউটিতে কর্তব্যরত ডাক্তার কাগজ-কলমে থাকলেও প্রকৃত পক্ষে তিনি ছিলেন না। মেডিক্যাল এ্যসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষানবিস ছাত্ররা ডিউটি করছিল। প্রতিটি ফ্লোরে সরকারী ও বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন মেডিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষানবিস ছাত্ররা ডিউটি করেন। একজন ডাক্তার আক্ষেপ করে বলেছেন, শিক্ষানবিস ছাত্রদের ভিড়ে রোগী দেখা অসম্ভব হযে পড়েছে। সেই রাতে রোগীর এক স্বজনের মোবাইল সেট হারিয়ে যায়। এ নিয়ে রোগীর লোকজনের সঙ্গে শিক্ষানবিস ছাত্রদের একদফা কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে রাতেই বহিরাগতরা হামলা করে ছাত্রদের উপর। ছাত্রদের কাছ থেকে বহিরাগতরা নগদ টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। এ নিয়ে পর পর দুদিন হাতাহাতি সংঘর্ষ হয়।্ সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে মিছিলও হয়েছে। তবে পুলিশী হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব ঘটনার উৎপত্তি হয়েছে হাসপাতালে নিরাপত্তাকর্মী না থাকায়। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও রোগীর লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ মনজুর রহমান শুক্রবার সকালে বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিযন্ত্রণে রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের বিষয়টি তিনি অধিদফতরের পরিচালকের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।