ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

এখনও গেল না আঁধার

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২২ আগস্ট ২০১৬

এখনও গেল না আঁধার

প্রতিবেশী মানেই যার জন্য বেশি বেশি করতে হয়। সুখে-দুঃখে আপনজন হওয়ার মধ্যে যার রয়েছে মাহাত্ম্য। কিন্তু সেই বেশি বেশি হয় যদি হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, হানাহানি ও পরচর্চায় পূর্ণ; তবে শান্তি-স্বস্তি হতে থাকে সুদূরপরাহত। সম্পর্ক যদি হয়ে ওঠে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী, তবে অস্ত্রের ঝঙ্কারের ধ্বনি সমাগত প্রায়, ধরেই নিতে হয়। প্রতিবেশীর সঙ্গে যদি সম্পর্ক হয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির, পারস্পরিক বোঝাপরার, তবে শান্তি-স্বস্তি, সহমর্মিতা-সহযোগিতার সমস্ত দরজাই খুলে যেতে থাকে। বইতে থাকে সুপবন। সূর্যালোকে প্রাণ পায় বৃক্ষলতা, তরু, পুকুরের পানিসহ জলজপ্রাণীরাও। পরহিতকর হয়ে বসবাস করা প্রতিবেশীরই কাজ। সকল বিভেদ, মনোমালিন্য, অন্যায্যতার বিপরীতে আপন হৃদয়সঞ্জাত আবেদন মহীরূহ হয়ে দাঁড়াতে পারে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। সভ্যতা-ভব্যতায় আন্তরিকতায় হতে পারে সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ। অবশ্য তা হতে পারা সহজসাধ্য কাজ নয়। অনেক কাঠখড় পোড়ায়ে, অনেক ছাড় দিয়ে, হিংসার মেদ ঝরিয়ে তবেই হতে হয় প্রীতিপূর্ণ সময়ের ধারক। কিন্তু প্রতিবেশী যদি হয়ে ওঠেন পারস্পরিক শত্রুভাবাপন্ন, বিভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ, হিংসার কুটিলতায় কণ্টকাকীর্ণ, তবে দুঃসময়, দুর্ভাগ্য, দুঃখ সবই দোরগোড়ায় এসে ধাক্কা মারতে বাধ্য। ভারত-পাকিস্তান এই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কটা বেশি বেশি হতে পারেনি। পারার সম্ভাবনাও হয়ে ওঠেনি উজ্জ্বল। মাঝে মধ্যে হাসি বিনিময় হয়। উদারতার আকাশ উঁকি দেয় সীমান্তজুড়ে। কিন্তু সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বাতায়ন আর গড়ে ওঠে না। সুপবন বয়ে যাওয়ার পথ হয়ে আসে সঙ্কুচিত। মানবতা লুণ্ঠিত যেমন হয়, তেমনি লজ্জিতও। সহস্র বছরের বেশি সময় একসঙ্গে বসবাসরত পরস্পরের পথ যখন বেঁকে গেছে একাধিক পথে, তখন মিল-মহব্বতের পায়রাগুলোও উড়ে গেছে শান্তির পতাকা নিয়ে। ৬৯ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশ ভেঙ্গে দুটি দেশ এবং পঁয়তাল্লিশ বছর আগে আরেকটি দেশ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখ লাখ মানুষ হারিয়ে যে পতাকা তুলে ধরেছে, তা স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশের জন্ম অনিবার্য। ভারতীয় উপমহাদেশ আজ তিনটি পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিন দেশের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্তের বাঁধন থেকে ছিন্ন করা যায়নি। কিন্তু রাষ্ট্র পারস্পরিক সম্পর্কে সন্দেহ, অবিশ্বাস থেকে নিজেদের উজ্জ্বল উদ্ধার ঘটাতে পারেনি। আশা জেগেছিল। জাগবারই কথা। কারণ, প্রতিবেশী দেশগুলো কতিপয় বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতা, বিশ্বাসবোধ আর নৈকট্যে আসার পথ পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘসময়ের অবিশ্বাস, সন্দেহ আর ধর্মীয় বিদ্বেষ এসে সব কিছুতেই থাবা দিচ্ছে। সম্প্রীতির জাগরণ আর ঘটে না। বরং সম্পর্কের টানাপোড়েন বহু রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। পরস্পর মুখ দেখাদেখিও বন্ধ প্রায়। রণ-দামামা বেজে উঠেছে। অস্ত্রের ঝঙ্কার ধ্বনিতে জেগেছে তাদের ভূমি। কিন্তু বিবাদ-বিসম্বাদ আর কূটচালের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব লড়াই সংঘাতের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। দেয়ারই কথা। সাতচল্লিশে র‌্যাডক্লিফের দেশভাগ পূর্ববর্তী সময় থেকেই ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের যে বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছে, তাতে দাঙ্গা-হাঙ্গামার কমতি ছিল না। ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, গোত্রের নামে যে রক্তপাত ঘটেছে তার মাসুল এখনও দিয়ে যেতে হয় সীমান্তের উভয় পারের মানুষজনকে। কত নিরীহ মানুষ, কত অসহায়জন জীবন বিপন্ন করে হলেও বাঁচার আকুতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু কারও প্রাণে সামান্য মায়া-মমতা দয়া জাগেনি। প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে হানাহানি, সংঘর্ষ, বিবাদ এমনই স্তরে উঠেছিল যে, কোন সুমধুর বাণী আর সুরেলা সঙ্গীতেও তাতে প্রাণপ্রবাহ ঘটে না। পারস্পরিক বিরোধিতার খেসারত দিতে হচ্ছে ঊনসত্তর বছর পরেও। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর পরস্পরবিরোধী ইউরোপের দেশগুলো সব বিভেদ ভুলে ক্রমশ এক কাতারে এসে শামিল হয়েছে। তারা গড়ে তুলেছে এক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব দেশের মানুষের মধ্যে ক্রমশ জেগে ওঠেছে পারস্পরিক সম্প্রীতিবোধ। সুখ-দুঃখের পাঁচালি একসঙ্গে গেয়ে উঠছে। অভিন্ন ইউরোপ থেকে অবশ্য বেরিয়ে গেছে ব্রিটেন। যে ব্রিটেন ভারতবর্ষকে দ্বিখ-িত করেছে এমনভাবে যে, পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হয়ে উঠার পথ তৈরি করে দিয়েছে। উপমহাদেশের মানুষগুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বিপরীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে। দেশভাগের পর ভারত গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা অব্যাহত রাখলেও পাকিস্তান সামরিক জান্তা শাসনে পরিচালিত হয়ে গণতন্ত্রের ভিতকে করেছে বিপর্যস্ত। জংলী আইনে পরিচালিত পাকিস্তান তার একমাত্র শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে ভারতকে। ভারত বিরোধিতাকে পুঁজি করে সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে হম্বি-তম্বি চালিয়ে গেছে। পাকিস্তানী সামরিক জান্তার শাসন, শোষণ, নিপীড়নের মাত্রা এমনই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে, তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পূর্ববঙ্গের বাঙালীকে আন্দোলন-সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। মাতৃভাষার দাবিতে রক্ত ঝরাতে হয়েছে। বাঙালীকে পর্যুদস্ত করার জন্য পাকিস্তানী সেনারা হানাদারে পরিণত হয়ে বাংলায় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে টানা নয় মাস ধরে। বাঙালী এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল সশস্ত্রভাবে। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে রুখে দিয়েছিল বাঙালী। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা রক্তমাখা হয়ে উড়ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখনও মেনে নিতে পারেনি পরাজিত পাকিস্তান। গণহত্যার জন্য সামান্যতম ক্ষমা বা দুঃখ প্রকাশ করেনি পাকিস্তান। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত তাদের সেনাদের বিচারের প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। এমনকি বাংলাদেশ যখন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করে সাজা প্রদান করছে, তখন পাকিস্তান ত্রাহি-ত্রাহি রবে চিৎকার করছে। সে দেশের সংসদে নিন্দাপ্রস্তাব তুলছে। এমনকি জাতিসংঘেও অভিযোগ পেশ করছে তাদের সহযোগী আলবদর, রাজাকারদের বিচার বন্ধের জন্য। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের তারা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ খেতাবও প্রদান করেছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের গোয়েন্দা সংস্থার অপতৎপরতা আজও চলছে। জঙ্গীবাদের মদদদাতা পাকিস্তান তাদের দেশে জঙ্গী তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে। সেখানে তাদের অনুসারী বাংলাদেশবিরোধী বাঙালীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। অর্থ-অস্ত্র সবই সরবরাহ করছে। পাকিস্তানী জঙ্গীরা ভারতেও কয়েক দফা হামলা চালিয়ে আতঙ্কবাদকে সামনে নিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত ঊনসত্তর বছর ধরে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ কাশ্মীর। র‌্যাডক্লিফের বিভাজন নীতির বিষফোঁড়া হিসেবে ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর এখনও দেশ দুটিতে শান্তি স্থাপনের অন্তরায়। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন অতি পুরাতন। সম্প্রতি আবারও তা মাথাচাড়া দিয়েছে। কাশ্মীরের একাংশ পাকিস্তান দখল করে তাকে আজাদ কাশ্মীর হিসেবে একটি পৃথক রাজ্যে পরিণত করে শাসন চালাচ্ছে। এখানে তারা সশস্ত্র জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিজবুল মুজাহিদীন নামক জঙ্গী সংগঠনের নেতা বুরহান ওয়ানি কাশ্মীরে নিহত হওয়ার পর সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে এতটাই অবনতি ঘটেছে, যা মুম্বাই হামলার পরও দেখা যায়নি। দিন কয়েক আগে জম্মুতে আটক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার নেতা বাহাদুর আলি স্বীকার করছে, পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তাকে ভারতে ঢোকার নির্দেশ দেয়া হয়। বুরহানের মৃত্যুর পর থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় পরিস্থিতি যে রকম উত্তপ্ত, তার সুযোগ নিয়ে কাশ্মীরে নাশকতা চালানোর নির্দেশও দেয়া হয়েছিল ওই জঙ্গীকে। তার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা উপত্যকায় অশান্তির আগুন বাড়িয়ে তোলার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের সেনা ও যুদ্ধবিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা শুধু কাশ্মীর নয়, ভারতের অন্যান্য স্থানেও জঙ্গী হামলা চালিয়ে আসছে। পাকিস্তানের ভূখ-কে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সে দেশ থেকে ভারতে জঙ্গী অনুপ্রবেশ করছে। একইভাবে পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত জঙ্গীরা ভারত হয়ে বাংলাদেশেও অনুপ্রবেশ করছে। পাকিস্তানও বুরহান নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ। জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে কাশ্মীরে গণভোট নেয়ার দাবিও পুনরায় উস্কে দিয়েছে পাকিস্তান। ভারতে সর্বদলীয় বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা হয়েছেÑ জঙ্গী নেতা বুরহানকে পাকিস্তান শহীদের মর্যাদা দেয়ার নামে জঙ্গীবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের অশান্তিকে স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। আর ভারতের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের জবাবে টেনে আনছেন বেলুচিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি। পাকিস্তান বলছে, বেলুচিস্তানে অশান্তি সৃষ্টি করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ভারত তা অস্বীকার করে আসছে। তবে এবার প্রকাশ্যেই বেলুচদের পক্ষে মুখ খুলছে ভারত, যা নতুন করে প্রেরণা দিচ্ছে বেলুচ নেতৃত্বকে। পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নতুন করে তৈরি হচ্ছেন তারা। পাশাপাশি আমেরিকা ও ইউরোপের কাছেও তারা সাহায্য চেয়েছেন। এভাবেই নিজেদের পাতা ফাঁদে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে পাকিস্তান। কাশ্মীর নিয়ে প্ররোচনা দিয়ে এবার পাল্টা চাপে পড়ছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যকে সমর্থন করেছে বাংলাদেশ। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দিল্লীতে অবস্থানকালে বলেছেন, সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানের ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ অত্যন্ত খারাপ। বরাবরই তাদের চরিত্র আক্রমণাত্মক। বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়ার কারণে তাদের কূটনীতিকদের তাড়িয়ে পর্যন্ত দিতে হয়েছে। পাকিস্তান বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের মদদদাতা উল্লেখ করে ইনু বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকা- মোকাবেলায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে কাজ করবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত এতদিন পাকিস্তানের অনেক ট্রেডমার্ক রফতানির সঙ্গে থেকেছেÑ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সীমান্তে অনুপ্রবেশ, অস্ত্র, মাদক, জাল টাকার রফতানি দেখেছে। অপরদিকে দিল্লীতে পাকিস্তানী হাইকমিশনার ঘোষণা করেছে যে, পাকিস্তান এ বছরের স্বাধীনতা দিবসকে কাশ্মীরের স্বাধীনতার নামে উৎসর্গ করেছে। পাকিস্তান নিশ্চিত যে, জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ যে স্বার্থ ত্যাগ করছেন, তা বিফলে যাবে না। সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তাব দিলে ভারত বলেছে, আলোচনা হতে পারে, তবে সন্ত্রাসই হবে সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কাশ্মীর নিয়ে কোন আলোচনা হতে পারে না। পাশাপাশি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে চীনা কার্যকলাপ নিয়ে সরব দিল্লী। এখানে চীন-পাকিস্তান আর্থিক করিডর হচ্ছে, যার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ বিক্ষোভ চালাচ্ছে। এসব নেতিবাচকতার মধ্যে আরও নেতিবাচক দিক ফুটে ওঠে কয়েকদিন আগে যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্কগোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের চরম অসৌজন্যের শিকার হন। রাজনাথ সিং বলেছিলেন, একটি দেশের জঙ্গীকে কোন একটি প্রতিবেশী দেশ স্বাধীনতা সংগ্রামী মর্যাদা দিলে সার্কের মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চের কোন প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। ভারত-পাকিস্তান চলতি ছায়াযুদ্ধের জেরে এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতির তলদেশে পৌঁছানোর পর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সার্ক শীর্ষ বৈঠক। আগামী নবেম্বরে ইসলামাবাদে এ বৈঠক হবে। ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আগে মন্ত্রিপর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠক চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বাংলাদেশ যোগ দেয়নি। অর্থমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে যোগ দেবেন না বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থমন্ত্রী। ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত ৩১ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ বার এক হতে পেরেছেন এ সংস্থার প্রধানরা। একজন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান উপস্থিত না থাকলে ভেস্তে যায় সম্মেলন। বেশিরভাগ সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঝগড়ার রেশ ধরে শীর্ষ সম্মেলন পিছিয়ে পড়েছে। এর আগে কারগিল যুদ্ধ ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অরাজকতার কারণে ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত স্থগিত ছিল সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য তেমন কোন ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসতে পারেনি। সমালোচনা রয়েছে যে, এটা সার্কভুক্ত ৮ সদস্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের পুনর্মিলনী বা পিকনিক মূলত। এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়া না হওয়া নির্ভর করছে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের ওপর। এমনিতেই এ সম্মেলন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সার্ক কোন আশার আলো দেখাতে পারছে না। বাংলাদেশও ইসলামাবাদের সম্মেলনে যেতে আগ্রহী নয়। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সার্কের একটি ধারাবাহিকতা আছে। এটি বজায় থাকা উচিত। তবে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গটিও উপেক্ষার নয়। বাংলাদেশ ও ভারতবিরোধী পাকিস্তানের যে অপতৎপরতা চলছে, তাতে সার্ক সম্মেলন অনিশ্চিত প্রায়। বরং দুটি দেশ আবার সম্মুখ সমরে সমাগত হওয়ার পর্যায়ে। যদিও সার্কভুক্ত ৮টি দেশের দেড় শতাধিক কোটি মানুষ চায় পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সদস্য দেশের মধ্যে যাতায়াত সুবিধা। কিন্তু তাদের সেই বন্ধুর পথ উন্মুক্ত হবে কিভাবেÑ তা জানা নেই কারও।
×