ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২২ আগস্ট ২০১৬

মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা

এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের বড় ধরনের একটি বাঁক ফেরার কেন্দ্র। এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। এবার উচ্চমাধ্যমিকের ফল আশানুরূপ ভাল হয়েছে। ফল প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে বিপুল আনন্দ পরিলক্ষিত হয়েছে। এই আনন্দের আড়ালে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও সেটি বড় হয়ে সামনে আসেনি। আগামী দিনগুলোতে সেটিই যে বড় হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ সামনেই রয়েছে উচ্চবিদ্যাপীঠের ভর্তিযুদ্ধ। বলা যায় ফল প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির তোড়জোড়। ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে আসনের অভাব নেই। তবে পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। সবচেয়ে ভাল করেছে এমন শিক্ষার্থীরাও শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবে না যে, তার পছন্দের বিষয়ে এবং পছন্দনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সে ভর্তি হতে পারবে। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে আট লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। তাদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। বিগত বছরগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসন সীমিত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের ৩৩টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে প্রথম বর্ষের আসন সংখ্যা ৪০ হাজার ৭২৭। মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী মেডিক্যাল, ডেন্টাল, টেক্সটাইল কলেজ ও মেরিন একাডেমির দিকেই বেশি ঝোঁক দেখা যায়। ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য ভাল মানের শিক্ষার্থীরাও গড়ে তিন থেকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। ফলে তাকে ছুটতে হয় দেশের নানা প্রান্তে। শিক্ষার্থীদের এই কষ্ট লাঘবে ২০১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও তাতে সম্মত হতে পারেনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা একসঙ্গে হলে একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারত। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না পারলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারী ও বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর পরীক্ষা একসঙ্গেই হয়ে থাকে। ফলে তুলনামূলকভাবে বিজ্ঞান শাখার ভাল ফল লাভকারী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মাত্রা কম হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় সর্বমোট আসন সংখ্যা আট লাখ ২২ হাজার ৪৮৬টি। তাই এটা ঠিক যে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের শেষ পর্যন্ত কোথাও না কোথাও ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে এজন্য বহু শিক্ষার্থীর বড় ধরনের ধকলের সম্মুখীন হতে হবে। জরুরী হচ্ছে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা, সেটি নিশ্চিত করতে হলে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। দেশে পাসের হার ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে মানসম্মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়েনি। এখন মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া আবশ্যক হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি ভর্তি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীবান্ধব করে এর পদ্ধতিগত জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াও দরকার।
×