ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এসপি বাবুলের পদত্যাগ নিয়ে নাটকীয়তা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ আগস্ট ২০১৬

এসপি বাবুলের পদত্যাগ নিয়ে নাটকীয়তা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা- ও তার স্বামী এসপি বাবুল আক্তারের চাকরি থেকে পদত্যাগপত্র পেশের ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাবুল আক্তার একজন এসপি। যে পদটি একটি কমান্ডিং অফিসারের পদ। তার স্ত্রীকে গত ৫ জুন চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করে কিলিং মিশনের সাত সদস্য। যার মধ্যে ৬ জনই গ্রেফতার হয়েছে। নেতৃত্বদানকারী মুসা নামের এক সন্ত্রাসী এখনও ধরা পড়েনি। মিতু হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত এবং কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে সবই উন্মোচিত হয়েছে। শুধু কার নির্দেশে তাকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হলো সেটি রহস্যের বেড়াজালে আটকে আছে। এদিকে স্ত্রী মিতু হত্যাকা-ের তদন্তে কার্যকর তেমন গতি নেই বললেও চলে। আর স্ত্রী হত্যার তদন্তের চেয়ে এসপি বাবুল আক্তার তার চাকরি রক্ষার জন্য মরিয়া বলেই প্রতীয়মান। খোদ আইজি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগে বাধ্য করা হয়নি। পক্ষান্তরে বাবুল আক্তার দাবি করেছেন তার পদত্যাগপত্র স্বেচ্ছায় ছিল না। তিনি পরিস্থিতির শিকার। বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এখন পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। বাবুল আক্তারের সেই পদত্যাগপত্রটি এখন পুলিশ সদর দফতর হয়ে এখন রাষ্ট্রপতির দফতরে। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি নিশ্চয় পুলিশ হেড কোয়ার্টার ও মন্ত্রণালয়ের সুপারিশকে প্রাধান্য দিয়ে তাতে অনুমোদন দেবেন। অর্থাৎ ধরে নেয়া যায় বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র চূড়ান্তভাবে গৃহীত হতে চলেছে। নাটকীয় কোন ঘটনা না ঘটলে তার চাকরি আর পুলিশে থাকছে না। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা-ের পর র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর তদন্ত সংস্থাগুলো এ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে মরিয়া হয়ে কাজ শুরু করে এবং তাতে সফলতাও আসে। কিলিং মিশনের ৭ সদস্যের মধ্যে একজন ছাড়া আর সকলেই আইনের আওতায় চলে আসে। যদিও প্রচার আছে যে, কিলিং মিশনে নেতৃত্বদানকারী মুসাকেও পুলিশ আটক করে। এমনকি তাকে অন্যদের সঙ্গে ঢাকায় নিয়ে বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করে পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন আসলে কেন এ হত্যাকা- ঘটেছে। আর এ কারণেই নাকি গভীর রাতে বাবুল আক্তারকে বাসা থেকে ডেকে নেয়া হয় এবং কিলিং মিশনের সদস্যদের মুখোমুখি করে বক্তব্য নেয়া হয়। বক্তব্যে যা উঠে আসে তা বাবুল আক্তারের জন্য ছিল নেতিবাচক। যে কারণে তাকে রাত থেকে পরদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুলিশী পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর ছেড়ে দেয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার পর তিনি বক্তব্য দেন এই বলে যে, তাকে গ্রেফতার কিংবা আটক কিছুই করা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও অনুরূপ বক্তব্য দেন। এরপর পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। দীর্ঘদিন চাকরিতে যোগ না দিয়ে তিনি ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতে দুই শিশু সন্তানকে দিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। এদিকে যে রাতে তাকে কিলিং মিশনের সন্দেহজনক সদস্যদের সঙ্গে মুখোমুখি করার জন্য ডেকে নেয়া হয়েছিল তখন ডিআইজি পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তা পুরো বিষয়টির তদারকির দায়িত্ব পান। এমনকি তাদের সঙ্গে আইজিও ছিলেন বলে জানা যায়। কিলিং মিশনের সদস্যদের প্রথমে বাবুল আক্তার চেনেন না বলে দাবি করলেও পরে তা থেকে সরে যান এবং চেনা বলে সম্মতি দেন। এ অবস্থায় আইজি জানতে চান মোটরসাইকেলযোগে আসা যে ৩ সন্ত্রাসী তার স্ত্রী মিতুকে হত্যা করেছে তাদের তিনি আগে থেকে চেনার পরও কেন চেনেন না বলে ওইদিন জানিয়েছেন। তার এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা জঙ্গীরা ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ করে জঙ্গী অভিযান পরিচালনা করেন। অথচ যারা মিতুকে হত্যা করেছে তারা সকলেই বাবুল আক্তারের পূর্ব চেনা এবং একজন তার বিশ্বস্ত সোর্সও বটে। এ নিয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি আরও উচ্চপর্যায়ে অবহিত করেন। দীর্ঘ সময় এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত বাবুল আক্তারকে সেই দুটি অপশন দেয়া হয়েছিল। আর তা হচ্ছে জেল না পদত্যাগ। বাবুল আক্তার নাকি পদত্যাগেই সম্মতি দিয়েছিলেন। যে পদত্যাগপত্রটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চট্টগ্রামে মিতু হত্যাকা- তদন্তে ডিবি, পিবিআই, সিটিইউ, সিআইডি, এসবি, র‌্যাবের তদন্ত টিম একাধারে তদন্ত করেছে। মূল তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে সিএমপির ডিবি। অন্যরা ডিবিকে সহায়তা করেছে। সবার তদন্তে যে ফলাফল এসেছে তা সমন্বয় করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে, যা বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে গেছে। এছাড়া বাবুল আক্তারের ব্যাপারে তার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরি লাভের আগ পর্যন্ত সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করেছে সরকারের দুটি শীর্ষ পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের রিপোর্টও বাবুল আক্তারের পক্ষে যায়নি। সামগ্রিক বিষয় সামারি আকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানোর পর বাবুল আক্তারের প্রতি পুলিশ সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইতোপূর্বেকার ইতিবাচক মনোভাব সম্পূর্ণ নেতিবাচকে পরিণত হয়ে যায়। এরপরই তার পদত্যাগপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কার্যকর করার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বাবুল আক্তার কয়েক দফায় পুলিশ সদর দফতরে আনাগোনা করেছেন। কিন্তু ইতিবাচক কোন সফলতা আনতে পারেননি। এর পরবর্তীতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্র নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তা প্রত্যাহার করে তাকে চাকরিতে যোগ দিতে সুযোগ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে কারও পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ দেয়ার আইনী বিধান নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।
×