ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে অভিযোগ

সরকার ও মালিকদের গাফিলতিতে ট্যানারি স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২১ আগস্ট ২০১৬

সরকার ও মালিকদের গাফিলতিতে ট্যানারি স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার ও মালিকপক্ষের গাফিলতির কারণেই সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে ট্যানারি শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে সাভারে সরকার পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত না করেই ট্যানারি স্থানান্তরের চাপ প্রয়োগ করছে। ট্যানারি শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৩০ হাজার শ্রমিককে বাসস্থানসহ থাকার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ অবস্থায় এই বিপুল পরিমাণ শ্রমিক সেখানে গিয়ে কিভাবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, সময় বেঁধে দিয়ে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে বাধ্য করা যাবে না। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এক্ষেত্রে তারা আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌত্তিক সময়ের মধ্যে ট্যানারি শিল্প স্থান্তান্তরে মত দেন। অবশ্য আলোচনা সভায় তারা সবই একমত পোষণ করেন ট্যানারি শিল্পসহ অন্যান্য দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর চরম দূষণের শিকার হয়েছে। অনুষ্ঠানে ওয়াসার এমডি বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি এত দূষিত যে ও ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহ করা ওয়াসার পক্ষে সম্ভব নয় বিধায় মেঘনা ঘাট ও পদ্মা নদী থেকে পানি সরবরাহের জন্য মাস্টার প্লান নেয়া হয়েছে। অবশ্য তিনি শিকার করেছেন ওয়াসার মাধ্যমে পয়োবর্জ অপরিশোধিত অবস্থায় নদীতে পড়ছে। এটা রোধে মাস্টারপ্লান নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা বলেন, বুড়িগঙ্গারসহ চার নদী রক্ষায় প্রতিষ্ঠান থেকে নদীর পাড়ে বনায়নসহ ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ৪ হাজার ৬৩ নদীর সীমানা পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নদী দূষণ রক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। তবে তিনি বলেন, জাহাজের যে তলার বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে এর দায়দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ’র নয়। এটি দেখার দায়িত্ব ডিজি শিপিংয়ের। অবশ্য বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, বিআইডব্লিটিএ’র যে পিলার স্থাপন করেছে তার বেশিরভাগই ভুল জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। এর কারণে নদী দখল প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে। পরিবেশ সংগঠন বাপা ও বুড়িগঙ্গা রিভার কিপার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সকল উন্নয়ন বা প্রকল্প হতে হবে জনবান্ধব, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যবান্ধব। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার পাশের নদীগুলো আজ মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার। মানুষের জীবন ক্ষতি করে কোন উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে সে উন্নয়ন কোন কাজে আসবে না। ট্যানারি শিল্পের কারণে যে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে তার দায়-দায়িত্ব এসব শিল্প মালিকদের নিতে হবে। কারণ ব্যবসার মাধ্যমে তারা মুনাফা অর্জন করছে। অথচ দূষণের ক্ষতির শিকার সাধারণ মানুষ হতে পারে না। তিনি আলোচনার মাধ্যমে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের যৌক্তিক সময় নির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সরকার ও মালিকপক্ষের গাফিলতির কারণেই ট্যানারি স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ট্যানারি শিল্প অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছে। অন্যদিকে এই শিল্পের কারণে বুড়িগঙ্গা আজ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। দুই পক্ষের দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে নদী ও ট্যানারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে একটি কার্যকর সমাধানের পথ বের করা হোক। সময় বেঁধে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে বাধ্য করা ঠিক হবে না। উভয়পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে এ শিল্প দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয়া হলে নদীর দূষণ থেকে যেমন রক্ষা করা সম্ভব হবে, তেমনি অর্থনীতিতেও কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। ওয়াসার এমডি তাসকিন আহমেদ খান বলেন, নদী দূষণের জন্য ওয়াসা মাত্র ১৫ ভাগ দায়ী। বিশেষ করে সুয়ারেজের লাইনের মাধমে পয়োবর্জ নদীতে পড়ছে।
×