ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে পুলিশের পিটুনিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২১ আগস্ট ২০১৬

রংপুরে পুলিশের পিটুনিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ

সংবাদদাতা, রংপুর, ২০ আগস্ট ॥ পুলিশের নির্মম প্রহারে নুরন্নবী হোসেন (৩২) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশকে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। শনিবার সকালে মাহিগঞ্জ বীরভদ্র বালাটারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহত নুরন্নবী মাহিগঞ্জ বীরভদ্রের বালাটারী গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। নিহতের বড় ভাই গোলজার হোসেন জানান, মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানার এসআই তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় নুরন্নবীকে আটক করে নির্মমভাবে প্রহার করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে পুলিশ তার মরদেহ গাড়িতে করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। নুরন্নবীর মরদেহ মেডিক্যালে নেয়ার সময় ওই এলাকার এক নারীকেও গাড়িতে তুলে নেয় পুলিশ সদস্যরা। পরে শনিবার সকাল ৬টায় ওই নারীকে বাড়িতে পৌঁছানোর জন্য বালাটারীতে গেলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে কোতোয়ালা থানার ওসিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে ২ ঘণ্টা পর সকাল ৮টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। গোলজার অভিযোগ করে বলেন, এ সময় পুলিশ তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে এবং আরও ৪০ হাজার টাকা দাবি করেছে। ওই টাকা না দিলে তাকেও চুরির মামলায় ফাঁসানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে পুলিশ। নিহতের স্ত্রী আরজিনা বেগম জানান, তিনি দুবাইতে থাকতেন। ৩ মাস আগে দেশে এসেছেন। আসন্ন ঈদ-উল-আযহার পর স্বামীকে নিয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে তারা ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার তিনি তার স্বামীসহ প্রথমে দিনাজপুর এবং ওইদিনই বিকেলে ঢাকা চলে যান। বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরে আসেন। নিহত নুরন্নবীর আরেক ভাই তোফাজ্জল হোসেন জানান, রাতে সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় পুলিশ বাড়িতে এসে তার ছোটভাই গোলজারকে পিটিয়ে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় এবং নুরন্নবীকে পেটালে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এ ঘটনায় তিনি দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবি জানান। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আবদুল মাজেদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানা মোটরসাইকেল চুরির মামলা দায়ের করে। এ মামলায় শহরের বাহারকাছনা তৈলীটারী এলাকার রিপন ওরফে ওলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে নুরন্নবীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর শুক্রবার রাতে অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের ভয়ে নুরন্নবী হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান। ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি ॥ পুলিশী নির্যাতনে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় রংপুরের পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান। পরিদর্শন শেষে এসপি সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাকির হোসেনকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির বাকি দু’সদস্য হলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) আতাউর রহমান ও মনেস কুমার। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, মহানগরীর মাহিগঞ্জ বীরভদ্র বালাটারী গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে ইলেট্রিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী নুরন্নবী মিয়াকে (৩০) পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মেতায়েন করা হয়েছে।
×