ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসপি বাবুলের ‘অনিচ্ছায় পদত্যাগ’ ও প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২১ আগস্ট ২০১৬

এসপি বাবুলের ‘অনিচ্ছায় পদত্যাগ’ ও প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ স্ত্রী হত্যাকা-ের ঘটনায় এসপি বাবুল আক্তার দোষী-না নির্দোষ? তার ব্যাপারে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্পষ্ট কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু এসপি বাবুল আক্তার একবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এবং সর্বশেষ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে বক্তব্য দিয়ে নিজের বিষয়টিকে পরিস্থিতির শিকার হিসেবে আখ্যা দিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এখন তিনি বলছেন যে অব্যাহতিপত্র তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন তা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এবং সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতভাবে। এ ব্যাপারে তিনি অব্যাহতির সেই আবেদন প্রত্যাহার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। এসব ঘটনার পর এখনও উৎসুক মহলে পরিষ্কার নয়- কেন তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন, কারা এ স্বাক্ষর নিয়েছিলেন, কেন নিয়েছিলেন। যদি নিয়ে থাকেন তা অবশ্যই উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা নিয়েছেন। পুলিশ হয়ে পুলিশের কাছ থেকে এ ধরনের জোরপূর্বক চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর নেয়া যায় কিনা এবং এর আইনী কোন বিধান আছে কিনা এসব প্রশ্নে নানা জল্পনা কল্পনা চাউর হয়ে আছে। অপরদিকে, বাবুল আক্তারকে একজন ভাল ও সৎ অফিসার হিসেবে জানেন এমন মহলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে তিনি তার স্ত্রী হত্যার ঘটনা নিয়ে যা জানেন তা কেন তার নিজের অনাগত ভবিষ্যতের স্বার্থে পরিষ্কার করে জানান দিচ্ছেন না। তার উপর কারও কি চাপ রয়েছেÑ এমন প্রশ্নও উঠেছে। তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গত ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড় সংলগ্ন এলাকায় খুনী চক্র উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে হত্যা করে। এ হত্যাকা- চালানোর সঙ্গে জড়িতদের একজন ছাড়া সবাই গ্রেফতার হয়েছে। নেতৃত্ব যে দিয়েছে সেই মুসাই এখনও ধরা পড়েনি বলে পুলিশের বক্তব্য রয়েছে। অথচ, বিভিন্নভাবে জানা গেছে, পুলিশ এই মুসাকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, তাকে ঢাকায় নিয়ে বাবুল আক্তারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। বাবুল আক্তার প্রথমে মুসাসহ অন্যদের চেনে না বলে জানান দিলেও পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন। মুসা যে বাবুল আক্তারের একজন বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবে কাজ করে আসছিল সেটা পুলিশসহ অনেকেরই জানা। আর এই মুসা যখন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যার মিশনে নেতৃত্ব দেয় তখন এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ রকমই যে উত্তর পুলিশ সদর দফতর মুসা ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে পেয়েছে তা থেকেই বাবুল আক্তারের ব্যাপারে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা বেঁকে বসেন। ওই সময়ে বাবুলকে দুটি অপসন দেয়া হয়। জেল না চাকরি থেকে পদত্যাগ। বাবুল আক্তার নাকি চাকরি থেকে পদত্যাগপত্রেই স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। যে পদত্যাগপত্র এখন পুলিশ সদর দফতর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। অপেক্ষা শুধু প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। এ অবস্থায় তিনি গত শুক্রবার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা হচ্ছেÑ ‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করেছি। অব্যাহতির আবেদন প্রত্যাহার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবরে এ পত্র দিয়েছি। এতে তিনি উল্লেখ করেন, শোকগ্রস্ত ও অসহায় অবস্থায় আমি যখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছিলাম সে সময় গত ২৪ জুনপরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে আমাকে চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। স্ত্রীর মৃত্যুশোক সদ্য মা হারা দুটি শিশুর ব্যাকুলতায় প্রতিকূল ও বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে আমি চাকরি থেকে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করি। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে এবং আমার সন্তানদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই চাকরি। এমতাবস্থায় উক্ত অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি যা আমি স্বেচ্ছায় দাখিল করিনি। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে তার স্ত্রী হত্যাকা-ের পর তিনি ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করে আসছেন। গণমাধ্যম ছাড়াও অন্য কোন মহলের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ফেসবুকে একটি স্ট্যাটার্স দেন। এরপরে তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ বক্তব্য দিলেন।
×