ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ ঠেকাতে চবিতে ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ সেল’

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২১ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গীবাদ ঠেকাতে চবিতে ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ সেল’

রহমান শোয়েব, চবি ॥ জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িত সন্দেহে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষার্থীর নাম উঠে আসায় নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ সেল’। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলেই রয়েছেন এ নজরদারিতে। একাডেমিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য উপ-উপাচার্যের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ও হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত আটজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন বিভিন্ন সময়। সর্বশেষ গত শুক্রবার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) তিন সদস্যকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ তিনজনের মোঃ ফরহাদ আহম্মদ রিপন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি রসায়ন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে কর্ণফুলী ইপিজেডে এ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট হিসেবে কর্মরত। এর আগে গত ২৪ জুলাই নগরীর হামজারবাগ মোমিনবাগ আবাসিক এলাকার জানে আলম ম্যানশনের দ্বিতীয় তলা থেকে হিজবুত তাহরীরের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে নগর পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফয়সাল বিন আজিজ ওরফে আদর, বিবিএ চতুর্থ বর্ষের সুলতান মোহাম্মদ খান ওরফে বিদ্যুৎ ও ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আরিফুল ইসলাম। এ সময় ফয়সালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মোমিনবাগ আবাসিক এলাকার মেস থেকে হিজবুত তাহরীরের গঠনতন্ত্র ও সরকারবিরোধী বেশকিছু প্রচারপত্র উদ্ধার করে। এর আগে ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর উত্তর নালাপাড়া থেকে ফয়সল মাহমুদ, কসমোপলিটন আবাসিক এলাকা থেকে শওকত রাসেল ও হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে নাইমুর রহমান নয়নকে গ্রেফতার করা হয়। এরা সবাই জেএমবি সদস্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাদের নেতা রাইসুল ইসলাম ওরফে ফারদিন জেএমবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার। ফারদিন বগুড়ায় বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন। গ্রেফতার অপর তিন জেএমবি সদস্যের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এরও আগে গত বছর শুরুর দিকে নগরীর দেবপাহাড় এলাকা থেকে চকবাজার থানা পুলিশ আটক করে ইয়াসিন ইকবাল নামে এক হিজবুত তাহরীর কর্মীকে। তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। চবি থেকে তিনি এমবিএ করে একটি মোবাইল কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও উগ্রপন্থী ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবিকে গত বছর গ্রেফতার করে র‌্যাব। বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক অভিজিত রায় হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন তিনি। সম্প্রতি গুলশানে দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক জঙ্গী হামলার পর সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি ও তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। এরই প্রেক্ষিতে চবিতেও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইতোমধ্যেই গঠন করা হয়েছে ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাস বিরোধী সেল’। এছাড়া অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গঠন করা হয়েছে আলাদা ‘এ্যাটেন্ডেন্স মনিটরিং সেল’। পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম মনিটরিং করতে উপ-উপাচার্যের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কমিটি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, বরং প্রত্যেক শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন কি-না সে ব্যাপারেও খোঁজ নেবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল, বিভাগ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও মসজিদের পাঠাগার কক্ষ থেকে বিতর্কিত ও ধর্মীয় উগ্রতা ছড়ায় এমন বই সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল প্রবেশে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ক্যাম্পাসে চলাফেরায় সর্বক্ষণিক পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার বাধ্যবাধকতা জারি করেছে প্রশাসন। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। কোথাও বহিরাগত বা সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লেই ছুটে যাচ্ছেন তারা। চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জঙ্গী ইস্যুতে আমরা জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করেছি। কোন শিক্ষার্থী যেন আর জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী সেল’ গঠনের পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগকে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা নিয়মিত জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
×