ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিকস- বিমসটেক সম্মেলন

মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে হাসিনার

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ আগস্ট ২০১৬

মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে হাসিনার

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্রিকস-বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী অক্টোবর মাসে ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের গোয়ায় আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই ভারতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতের গোয়ায় আগামী ১৫-১৬ অক্টোবর ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান ভারত। অন্যদিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের কারিগরি ও অর্থনৈতিক জোট বিমসটেকের সদস্য বাংলাদেশ। বিমসটেকের অন্য দেশগুলো হচ্ছে- ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করছে দেশটি। ঢাকা-দিল্লীর একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্মেলনের শেষ দিন ১৬ অক্টোবর দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে করণীয় বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা হতে পারে। জঙ্গীবাদ মোকাবেলার পাশাপাশি উন্নয়নের দিকে নজর দুই দেশেরই। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় অসম্পাদিত চুক্তি দ্রুত সম্পাদন নিয়ে কথা হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। গত বছর জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও দ্রুতগতিতে চলছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া সীমান্ত চুক্তির পরে বাংলাদেশের নজর রয়েছে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে। বাংলাদেশ এখন তিস্তা চুক্তিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আয়োজিত বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসতে পারে। এদিকে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ইতোমধ্যে জমিসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাণিজ্যিক বিস্তারের স্বার্থে দুই দেশের যোগাযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরী। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনা হবে। সম্প্রতি দুই দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অনেকটা অঞ্চলই অরক্ষিত। ফলে রাতের অন্ধকারে জঙ্গী অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকছে। তাদের অস্ত্রশস্ত্র আমদানির রাস্তাও বদলেছে। তারা অনলাইনে অস্ত্র কিনে ডাক বা কুরিয়ার সার্ভিসে পৌঁছে দিচ্ছে। হালকা ও আকারে ছোট এসব অস্ত্র এমনভাবে প্যাক করা হচ্ছে যা স্ক্যানারেও ধরা পড়ছে না। দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় এ বিষয়গুলোও প্রাধান্য পেতে পারে। সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা বাড়াতে ১৯৯৭ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিসটেক) নামে নতুন উপ-আঞ্চলিক জোট গঠন হয়। পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান এতে যোগ দিলে ২০০৪ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে নাম পরিবর্তন করে বিমসটেক করা হয়। ১৯৯৭ সালে সহযোগিতার ছয়টি ক্ষেত্র নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরও আটটি নতুন ক্ষেত্র যোগ হওয়ায় বিমসটেক এখন উন্নয়ন এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট চৌদ্দটি খাতের ওপর জোর দিচ্ছে। এই খাতগুলো হলো বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাসবাদ ও আঞ্চলিক অপরাধ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অপরদিকে ভারতের গোয়ায় এবার আয়োজিত ব্রিকসের অষ্টম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তবে ব্রিকস ও বিমসটেকের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই জোটের সদস্য দেশগুলো যৌথভাবে এই সম্মেলনে অংশ নেবে।
×