ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেই নারকীয় ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় অনেককে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ আগস্ট ২০১৬

সেই নারকীয় ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় অনেককে

রক্তাক্ত একুশে আগস্টের নারকীয় ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় অনেককে। ঘটনার ১০ বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সে দুঃসহ সময়গুলো। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় গ্রেনেডের বীভৎস আওয়াজ, নিহতদের লাশ, আহতদের আর্তচিৎকার আর সহকর্মীদের বিলাপের স্মৃতির তাড়নায়। খবর বাসসর। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা। কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী এবং আওয়ামী লীগের সে সময়ের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা আইভী রহমানসহ দলের তৎকালীন ২৪ নেতাকর্মী সেদিন নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক, যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন কিংবা কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। হিমশীতল মৃত্যুর স্পর্শ থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকে এখনও বিশ্বাসই করতে পারেন না আসলে তারা জীবিত আছেন কি-না। মৃত্যুর এত কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে আসায় হয়ত তারা নতুন জীবন পেয়েছেন- কিন্তু যতদিন তারা বেঁচে থাকবেন ততদিন তাদের বহন করে যেতে হবে সেই দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ানো স্মৃতি, হঠাৎ করে গভীর থেকে গভীরতর অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার সে ঘটনাকে। মৃত্যুর অপর নাম যদি হয় শূন্যতা- তা নিয়েই বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা আকতার, গ্রেনেড হামলার পরদিন পত্রিকায় মৃতদের সঙ্গে যার ছবি ছাপা হয়েছিল। যিনি ছিলেন মৃতদের তালিকায়। ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা অজ্ঞান ছিলেন। মৃত মনে করে তাকে মেডিক্যালের মর্গেও নেয়া হয়েছিল। মাহবুবা বলেন, ‘নেতাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করছিলাম, বক্তৃতা শুনছিলাম। নেত্রী শেখ হাসিনা জয় বাংলা বলার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেনেডের বিকট আওয়াজ। ঢলে পড়লাম মাটিতে। তার পর আর কিছু মনে নেই...।’ ২৫ দিন পর কলকাতা টিএনএস হাসপাতালে প্রথম স্মৃতিশক্তি ফিরে পান তিনি। ৩০ দিন পর কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সে সময়ে তার চিকিৎসার খরচ সম্পূর্ণভাবে নেত্রী শেখ হাসিনা বহন করছিলেন বলে জানান মাহবুবা। আইভী রহমানের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন শাহিদা তারেক দীপ্তি (সাবেক সংসদ সদস্য)। নির্মম ওই ট্র্যাজেডি আইভী রহমানের জীবন কেড়ে নিলেও দেহে অসংখ্য স্পিøন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে এখনও তিনি বেঁচে রয়েছেন। শমরিতা হাসপাতাল ছাড়াও মিরপুরের সেলিনা হাসপাতাল এবং কলকাতায় পিটারসেন এবং ব্যাংককে তার দেহে অস্ত্রোপচার করে দু’শতাধিক স্পিøন্টার বের করা হলেও এখনও তার দু’পাসহ সারা শরীরে বিঁধে রয়েছে পাঁচ শতাধিক ঘাতক স্পিøন্টার। ঘুমের ঘোরে এখনও ২১ আগস্টের মরণঘাতী গ্রেনেডের শব্দ শোনেন নাসিমা ফেরদৌস। তার ভাষায়, ‘ভয়ে কেঁপে ওঠে বুক, ঘুম ভেঙ্গে যায়। বড় কোন আওয়াজ শুনলেই আঁতকে উঠি। মনে হয়, আবার বুঝি ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি ঘটল।’ গ্রেনেড হামলায় আহতরা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তারা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে চান।
×