ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইনজ্ঞরা আশা করছেন একদিনেই শুনানি শেষ হবে, আপীলের রায়ই বহাল থাকবে

২৪ আগস্ট মীর কাশেম আলীর রিভিউয়ের শুনানি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ আগস্ট ২০১৬

২৪ আগস্ট মীর কাশেম আলীর রিভিউয়ের শুনানি

বিকাশ দত্ত ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মুত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা মীর কাশেম আলীর রিভিউয়ের দিকেই এখন দেশবাসীর নজর। সারাদেশে বিভিন্ন জঙ্গী হামলা ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বন্ধে লবিস্ট নিয়োগে হাজার হাজার ডলার খরচের জন্য তার বিচারকে ঘিরে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড আপীল বিভাগ বহাল রেখেছে। এখন রিভিউয়ের পালা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চে রিভিউ শুনানির জন্য ২৪ আগস্ট দিন নির্ধারণ রয়েছে। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট মামলার প্রসিকিউটররা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, মীর কাশেম আলীর রিভিউ শুনানি একদিনেই শেষ হওয়া উচিত। পাশাপাশি তারা আশা করছেন আপীল বিভাগের মৃত্যুদ-ই বহাল থাকবে। ২০১৬ সালের ৮ মার্চ আপীল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করে। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ ১৪ অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করে। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর ১৪ অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় প্রদান করে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, ২৪ আগস্ট মীর কাশেমের মামলার রিভিউ শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ আছে। এক দিনেই শুনানি শেষ হওয়া উচিত। এর আগে মামলাগুলোর রিভিউ শুনানি একদিনের বেশি হয়নি। তিনি বলেন, আশা করছি আপীলের দ- বহাল থাকবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আশা করছি মীর কাশেমের মামলাতে ফাঁসির দ- বহাল থাকবে। কারণ রিভিউয়ে মামলার মেরিট ওপেন হয় না। এর আগে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রিভিউ শুনানি হয়েছে মীর কাশেমের মামলার ক্ষেত্রেও আশা করি তাই হবে। তিনি বলেন, আশা করি আপীল বিভাগ মীর কাশেমকে যে মৃত্যুদ- প্রদান করেছে, রিভিউতেও তা বহাল থাকবে। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২৬ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে আপীলে ছয়টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা (মৃত্যুদ- কার্যকর), নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (আমৃত্যু কারাদ-), সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদ- কার্যকর) ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদ- কার্যকর), বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী (মৃত্যুদ- কার্যকর), জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদ- কার্যকর)। সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র এবং আসামি উভয়পক্ষই রিভিউ করেছে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে নানামুখী প্রপাগান্ডা চলেছে। প্রথমে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিনের নিয়োগ থেকে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায়ের আগের দিন পর্যন্ত নানামুখী প্রপাগান্ডা হয়েছে। সাকার মামলার রায় আগেভাগে ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও সেটি ছিল রায়ের খসড়ার একটি অংশ, যা কোন রায় নয়। এদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হওয়াতে জামায়াতের আইনজীবী ও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত লবিস্টরা ট্রাইব্যুনালের আইন নিয়ে নানামুখী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পৃথিবীর মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, মীর কাশেম আলী জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা। প্রথম দফায় তিনি ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেন। তারাই দেশে-বিদেশে ট্রাইব্যুনালের আইন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, এটি আন্তর্জাতিক মানের নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পৃথিবীর মধ্যে এটি একটি গণতান্ত্রিক ট্রাইব্যুনাল। ন্যুরেমবার্গ ছিল আর্মি ট্রায়াল। সেখানে কোন লিখিত আইন ছিল না। অভিযুক্তদের আপীল করার কোন সুযোগই ছিল না। জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হলো মীর কাশেম আলী। ট্রাইব্যুনালের দেয়া ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগের দ- বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। সব মিলিয়ে আপীল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের দুটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে খালাস ও আরেকটিতে ফাঁসির আদেশ এবং ছয়টি অভিযোগে ৫৮ বছরের দ- পেয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল ৪, ৬, ১২ নম্বর অভিযোগে দ- প্রদান করলেও আপীল বিভাগ এ অভিযোগ থেকে মীর কাশেম আলীকে খালাস দিয়েছে। এ তিনটি অভিযোগের দুটিতে ১৪ বছর ও একটিতে ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস দিয়েছে। ১১ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীম হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। মৃত্যুদ- বহাল রেখে আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় ৬ জুন প্রকাশের পর তা পুনঃবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাশেম আলী। রিভিউ আবেদন শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধারাবাহিকতায় ২১ জুন চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি ২৫ জুলাই নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। তবে শুনানির জন্য আরও সময়ের আবেদন করা হবে জানিয়ে মীর কাশেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম বলেছিলেন, ‘প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময়ের আবেদন করা হয়েছে। আপীল বিভাগের রায়ে এসেছে, এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ ত্রুটিপূর্ণ।’ আদালত শুনানি পিছিয়ে দেয়ার পর আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রস্তুতির জন্য আমরা দুই মাস সময় চেয়েছিলাম। আদালত এক মাস দিয়েছে। ২৪ আগস্ট শুনানির তারিখ দিয়েছে।’
×