ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মূলধন উত্তোলনে অযোগ্য ৪২ কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২১ আগস্ট ২০১৬

মূলধন উত্তোলনে অযোগ্য ৪২ কোম্পানি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর একটি বড় উপায় হচ্ছে রাইট শেয়ার ইস্যু বা প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়া অথবা বোনাস শেয়ার ঘোষণা। তবে প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়ার সংখ্যা নগন্য। কোন কোম্পানি চাইলেই মূলধন উত্তোলন করতে পারে না। এজন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে কিছু নিয়ম পরিপালন করতে হয়। যার মধ্যে প্রধান শর্ত হচ্ছে কোম্পানি পরিচালকদের সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা। দ্বিতীয়ত এই পরিচালকদের আলাদা করে ২ শতাংশ শেয়ার থাকা। কিন্তু বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ৪২টি কোম্পানি এই নিয়ম পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কোম্পানিগুলো রাইট শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না। তবে এরও ব্যতিক্রম ঘটেছে ইউনাইটেড এয়ার নামের কোম্পানির প্লেসমেন্ট ছাড়ার ক্ষেত্রে। বিশেষভাবে কোম্পানিটিকে নতুন করে টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার থাকা ৪২ কোম্পানির মধ্যে সিটি ব্যাংকের ২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, এবি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত শেয়ার ১৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ৮ দশমিক ৪৮ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া এই খাতটির পূবালী ব্যাংকের ২৮ দশমিক ৮৭, উত্তরা ব্যাংক ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ন্যাশনাল ব্যাংক ২৮ দশমিক শূন্য চার শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ইতিমধ্যে এই খাতের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ম ভেঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জে (বিএসইসিতে) রাইট শেয়ার ইস্যুর আবেদন করেছে। অন্যদিকে রাইট শেয়ার ইস্যু করতে পারবে বিধায় ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ইউনাইটেড এয়ার। প্রতিষ্ঠানটি প্লেসমেন্ট শেয়ার ও বন্ড ইস্যু করে ৬২৪ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। এক্ষেত্রে কোন নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি। এদিকে ৩০ শতংশের নিচে থাকা শেয়ার থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বিডি অয়েল্ডিং ৫ দশমিক ০৪, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ২৩ দশমিক ৭৪, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স ২৫ দশমিক ৭২, মেঘনা লাইফ ১৮ দশমিক ৪৩, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ১৭ দশমিক ৯৬, অগ্নি সিস্টেম ১১ দশমিক ৪০, বিডিকম অনলাইন ২৩ দশমিক ১০, ইনটেক অনলাইন ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার। একইভাবে, ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক ১৭ দশমিক ৯২, বেক্সিমকো লিমিটেড ২০ দশমিক ১৫, এ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল ১২ দশমিক শূন্য দুই, বেক্সিমকো ফার্মা ১৩ দশমিক ১৮, ফার্মা এইড ২৮ দশমিক ৪৪, সলভো কেমিক্যাল ২২ দশমিক ৬৯, এপেক্স ফুটওয়্যার ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ডেল্টা স্পিনার্স ১৯ শতাংশ ও ফ্যামিলি টেক্সটাইল ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এই তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে কনফিডেন্স সিমেন্টের উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত শেয়ার ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ফুয়াং সিরামিক ২৪ দশমিক ২২, আফতাব অটোমোবাইল ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, এ্যাপোলো ইস্পাত ২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ইস্টার্ন ক্যাবল ৪ দশমিক ৬৪, কে এ্যান্ড কিউ ২৫ দশমিক ৪১, ফাইন ফুড ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ফুয়াং ফুড ৫ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ শেয়ার। এদিকে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার ২৮ দশমিক ৯০, রংপুর ডেইরি ২৭ দশমিক ৮৬, বারাকা পাওয়ার ১৯ দশমিক ৯১, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন ১৩ দশমিক ৭০, ম্যাকসন স্পিনিং ২৬ দশমিক ২৩, মেট্রো স্পিনিং ২৬ দশমিক ২১, মিথুন নিটিং ২৮ দশমিক ৪৬, তাল্লু স্পিনিং ২৯ দশমিক শূন্য চার এবং ইউনাইটেড এয়ারের উদ্যোক্তাদের হাতে মাত্র ৫ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যারা কোম্পানি পরিচালনা করছে তাদের এত কম শেয়ার থাকা উচিত নয়। এসব পরিচালকদের নিয়মের মধ্যে আসা উচিত। কারণ তাদের শেয়ার কম থাকলে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়ে। এর আগে ২০১২ সালের ২২ নবেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে বিএসইসি নির্দেশনা জারি করে। শর্ত পূরণ করতে না পেরে তখন অনেক পরিচালক পদ ছেড়ে চলে গেছেন। সূত্র মতে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়টি শিথিল করার কথা ভাবছে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ। বড় মূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি করার চিন্তাভাবনা চলছে।
×