ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

ফিরে দেখা ২১ আগস্ট, ২০০৪

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২১ আগস্ট ২০১৬

ফিরে দেখা ২১ আগস্ট, ২০০৪

২০০১ সালের সেই কারচুপির নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া এবং তার দোসররা বাংলাদেশে শোষণ ও অত্যাচারের মহারথ পরিচালিত করতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। পদে পদে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, বিচারের বাণী সর্বপর্যায়ে নিশ্চুপ ও নীরব হয়ে সাধারণ মানুষের অধিকার ও প্রত্যাশাকে রাষ্ট্রীয় তৎপরতার সুফল হিসেবে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়া ও শোনার বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। নাগরিকদের সম্পত্তির অধিকার রাজনৈতিক সত্রাপদের একচ্ছত্র আধিপত্যের নিচে ফেলে দিয়েছিল এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে স্থবির করে তুলেছিল। এ সকল নীতিভ্রষ্টতা ও দুরাচারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ২০০২ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ করতে চেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয়ভাবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকার কেন্দ্রীয় অফিস (২৩, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ) থেকে এক প্রতিবাদী মিছিল শুরু করতে চেয়েছিল। প্রতিবাদ ছিল সরকারের বিরুদ্ধে, বিশেষত সহিংস অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনে সরকারের ব্যর্থতার কারণে, দাবি ছিল সরকারের তাৎক্ষণিক পদত্যাগের। মিছিল শুরু করার আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা দেয়ার কথা ছিল। আশা করা হয়েছিল শেখ হাসিনা মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন। বিকেল ৩টা থেকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে লোকজন জমায়েত হতে শুরু করেন। আমি পৌঁছি সাড়ে চারটার দিকে। প্রায় ৫০ হাজার লোক- আওয়ামী লীগ কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ তখন কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ও চারদিকে। দেখলাম রাইফেল ও কোমরে পিস্তল নিয়ে প্রায় ৫০ জন পুলিশ পশ্চিম দিকে এ্যাভিনিউর প্রবেশপথে দাঁড়ানো। তেমনি ৫০ জন এ্যাভিনিউর পূর্বদিকে। তারা নীরবে দর্শকের ভূমিকায়, সভায় মিছিলে যোগদানকারী লোকজনের ওপর নজর রাখা বা প্রয়োজনে তাদের তল্লাশি করায় তাদের কোন মনোযোগ নেই। এ্যাভিনিউর ওপরে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিসের পূর্বপাশে বাটার দোকানের দক্ষিণে একটি ট্রাক দাঁড় করানো ছিল। ট্রাকের ওপর কয়েকটি মাইক্রোফোন সংযুক্ত একটি পোডিয়াম রাখা হয়েছিল। প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা সাধারণত যেমনটি করেন তেমনি আমি ঐ সময়ের জন্য বানানো অস্থায়ী একটি সিঁড়ি বেয়ে পেছন দিয়ে ট্রাকটির ডেকে উঠে প্রেসিডিয়ামের অন্যান্য সদস্য, জিল্লুর রহমান, আমীর হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ সেলিম ও কাজী জাফরউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, আওয়ামী আইন পরিষদ প্রধান এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাডভোকেট রহমত আলী, ত্রাণ ও কল্যাণ সচিব নাজমা রহমান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সাথে দাঁড়াই। ট্রাকটিকে পূর্বমুখী করে দাঁড় করানো হয়েছিল। পশ্চিম দিক অর্থাৎ ট্রাকের পেছনের ডালাটা খুলে ডেকের ওপর থেকে পশ্চিম দিকে মুখ করে জনতার সামনে বক্তব্য উপস্থাপনের আয়োজন করা হয়েছিল। বিকেল ৫টার দিকে শেখ হাসিনা পশ্চিমদিক থেকে তার বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ জীপে চড়ে সভাস্থলে পৌঁছেন। তার জীপের সামনে একটি পাইলট পুলিশ প্রতিরক্ষণ পিকআপ ভ্যান আর পেছনে সেরকম দু’টি ভ্যান ছিল। পেছনের প্রথম ভ্যান ছিল তার প্রতিরক্ষণের জন্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত সাদা পোশাকের এবং দ্বিতীয়টিতে ইউনিফর্ম পরা পুলিশ। দুটি পিকআপ ভ্যানের মাঝখানে দুটি এসইউভিতে (জীপে) তার ব্যক্তিগত কর্মচারীরা এসেছিলেন। এসব কর্মচারী ও পুলিশের সহায়তায় জীপ থেকে নেমে জনতার ভিড় এড়িয়ে তিনি ট্রাকের ওপরে ওঠেন, জনতাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার বক্তৃতা শুরু করেন। ট্রাকের পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণে তখন প্রায় ১ লক্ষ লোক পিনপতন নীরবতার সাথে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনতে থাকেন। প্রায় ১৫ জন সাংবাদিক, টেলিভিশন কর্মী ও ফটোগ্রাফার ট্রাক-ডেকের বিভিন্ন অংশে ও নিচে দু’ধারে এবং ট্রাকের সামনের কেবিনের ওপরে অবস্থান নিয়ে সংবাদ আহরণের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ট্রাক-ডেকে অন্য নেতৃবৃন্দসহ আমি শেখ হাসিনার পেছনে ও পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তিনি ট্রাক-ডেকের ওপরে দাঁড়িয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে বক্তৃতা করছিলেন। ট্রাকটি এ্যাভিনিউর মাঝখান থেকে প্রায় ৩ গজ উত্তরে, বাটার দোকান যে ইমারতে অবস্থিত তার কাছাকাছি, দক্ষিণ দিকের ইমারতগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে দাঁড়ানো ছিল। বক্তৃতারত শেখ হাসিনার বামদিকে দাঁড়িয়েছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম ও জিল্লুর রহমান। এই দু’জনের মাঝে এক পা পেছনে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। আবদুল জলিলের ঠিক পেছনেই ছিলাম আমি। আমার দু’পাশে ছিলেন যুগ্ম-সম্পাদক মুকুল বোস ও শেখ হাসিনার সহকারী হাজী নজীব। এরা দু’জন আমাদের পরে ট্রাক-ডেকে উপস্থিত হন। তারা ট্রাকে ওঠার পর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অন্য কাউকে ট্রাকের ডেকে উঠতে মানা করেন। নজীবের ডানদিকে ছিলেন যথাক্রমে প্রেসিডিয়াম সদস্য আমীর হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও হানিফের এক পা সামনে ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। আমাদের সবাই পশ্চিমমুখী থাকায় সূর্যের আলো ও তাপ আমাদের চোখে ও শরীরে বেশ লাগছিল। পাঁচটা পনেরর দিকে সূর্যের তাপে ও পেছনের লোকের চাপে শ্রান্ত হয়ে একজন পেছনের দিকে সরে আসলে শেখ হাসিনার ঠিক পেছনে আমি দাঁড়িয়ে যাই। এই সময় আমি নেত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) মামুনকে আমার বামদিকে এক পা পেছনে দেখতে পাই। মিনিটখানেক পরে তার পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বাহাউদ্দীন নাসিম এসে দাঁড়ান। তারা দু’জনই এরপর জিল্লুর রহমানের সামনে শেখ হাসিনার পায়ের কাছে বসে পড়েন। সভায় লোক হয়েছিল অনেক, আমার হিসাবে এক লাখেরও বেশি। পশ্চিমে পীর ইয়ামেনী মাজার থেকে উত্তরে নূর হোসেন চত্বর পেরিয়ে সচিবালয়ের পূর্ব পাশের সড়ক ছাড়িয়ে মুক্তাঙ্গনে (বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আসার সময় জনতার ঢল দেখেছিলাম), পূর্বদিক বঙ্গবন্ধু ও ভাসানী স্টেডিয়াম এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে দক্ষিণের দুই সড়কের শেষ সীমা ছাড়িয়ে গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সমগ্র এলাকা ব্যানার হাতে স্লোগানমুখর জনতায় ভরে গিয়েছিল। জনতার ভিড়ে আমি মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান, হাসিনা মমতাজ ও ঝুমুকে শ’খানেক মহিলা কর্মীকে নিয়ে ট্রাক থেকে ১০ গজ দূরে উত্তর-পশ্চিম কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তাদের দু’পাশে অন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে আমি আব্দুল আজিজ বাচ্চুকে ও সর্বজনপ্রিয় রফিক মোল্লাকে (আদা চাচা) দেখেছি। তাদের পেছনে অন্যদের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু ও ওবায়দুল কাদের। তাদের দক্ষিণে প্রায় ৭ গজ দূরে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রেসিডেন্ট বাহাউদ্দীন নাসিম। নেত্রীর সাথে ট্রাক-ডেকে উঠে এসেছিলেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) মামুন এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বাহাউদ্দীন নাসিম। শেখ হাসিনা উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক ঘুরে উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে সালাম জানিয়েছিলেন। বাহাউদ্দীন নাসিম পরে ট্রাকের ডেকের ওপরে এসে এবং স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) মামুনের সাথে বসেন। আশপাশের ভিড়ের মধ্যে আমি আদা চাচাকে স্বভাবসুলভভাবে টিনের কৌটা থেকে সিদ্ধ ও শুকনা আদা বের করে যারা ¯েœাগান দিচ্ছিলেন তাদের মাঝে তা হেসে হেসে বিতরণ করছিলেন। শেখ হাসিনার জীপ ট্রাক থেকে প্রায় ১৫ ফুট দূরে রাখা হয়েছিল। জীপ থেকে যথাক্রমে প্রায় ২০ ও ৬০ ফুট দূরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত পুলিশদের নিয়েছিল পিকআপ ভ্যান দুটি। এই দুটির মাঝে ছিল ২টি এসইউভি। শেখ হাসিনার জীপের সামনে ও ট্রাকের পেছনে ছিল পাইলট পিকআপ ভ্যান। এই সবগুলো গাড়ি জনতা ঘিরে রেখেছিল। এই গাড়িগুলোকে একটি অনুকল্পিত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রেখে জনতাকে তার বাইরে সরিয়ে নেয়ার কোন চেষ্টা পুলিশ এ সময় করেছে বলে চোখে পড়েনি। ২০০২ সাল থেকে পুলিশ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে সভা-সমাবেশ করার জন্য আওয়ামী লীগকে কোন মঞ্চ বা প্লাটফর্ম তৈরি করতে দেয় না। এজন্য এ স্থানে সভা-সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ার জন্য এভাবে ট্রাক-ডেক ব্যবহার করা হয়। দু’দিকে ইমারতঘেরা স্থানে ট্রাক-ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা ভয়ানক বিপদসঙ্কুল, চোরাগোপ্তা গুলি সহজেই ট্রাক-ডেকে দাঁড়ানো যে কোন ব্যক্তিকে আঘাত হানতে পারে। সাধারণত এ স্থানে শেখ হাসিনার সভা অনুষ্ঠানের দিনে ও সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস ইমারত ছাড়া দু’পাশের ইমারতের ছাদে সশস্ত্র পুলিশ নিয়োজিত থাকে। ওইদিন আমি এসব ইমারতের ছাদে পাহারায় নিযুক্ত কোন পুলিশ দেখিনি। বিশেষত ট্রাক-ডেক থেকে ২০ গজ দক্ষিণ-পূর্বের সিটি হোটেল ইমারত ও দশ গজ উত্তর-পূর্বদিকে রাজ্জাকস নামে নিচতলায় দোকান সংবলিত ইমারতের ছাদের ওপরে সশস্ত্র বা টেলিসকোপিক বা ভিডিও ক্যামেরা সজ্জিত কোন পুলিশকে জনসমাগমের সময় দেখা যায়নি। সাধারণত এরূপ সমাবেশের সময়ে এসব ইমারতের ছাদে পাহারায় নিয়োজিত পুলিশদের সাথে আওয়ামী লীগের কর্মীদেরও সর্তকতামূলকভাবে মোতায়েন করা হত। ঘটনার পরে সন্ধ্যার সময়ে আমি জানতে পেরেছি যে, ঐদিন পুলিশ আমাদের কর্মীদের এ দু’টি ইমারতে প্রবেশ করতে বা তাদের উপরতলা বা ছাদে যেতে দেয়নি। শেখ হাসিনা যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন ট্রাক-ডেকের দু’পাশে প্রায় ৩ গজ দূরে জনতার মাঝে ৬/৭ জন পুলিশকে মিশে থাকতে দেখেছি। এই জায়গায় আগে এই ধরনের সমাবেশে যত সংখ্যক পুলিশ নিয়োজিত থাকত তার তুলনায় এদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। লোকজনকে ট্রাক বা শেখ হাসিনার অবস্থান থেকে একটি অনুকল্পিত নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রাখা- যা রুটিন নিরাপত্তারক্ষণমূলক কাজ হিসেবে আগে পুলিশ করতÑ তা এদিন এ সময়ে তারা করছে বলে চোখে পড়েনি। বিকেল পাঁচটা পঁচিশের দিকে শেখ হাসিনা যখন জয়বাংলা বলে তার বক্তৃতা শেষ করে ট্রাক থেকে নামার জন্য পা বাড়িয়েছিলেন, তখন দু’জন ফটোগ্রাফার শেখ হাসিনাকে আবার পোডিয়ামের কাছে গিয়ে তাদের ফটো তোলার সুযোগ দিতে অনুরোধ করেন। শেখ হাসিনা পোডিয়ামের কাছে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাদের ও জনতার দিকে হাত তুলে হাসিমুখে শুভেচ্ছা জানান, ঠিক তখনই আমি তার ওপরে ফ্লাসের ঝলকানি দেখে ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনে চমকে উঠলাম। শব্দ শুনে মনে হলো, দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে লোকজনের ওপর দিয়ে একটি বোমা ট্রাকের দক্ষিণ দিকে রাস্তার ওপরে পড়েছে। আমাদের পেছনে কে যেন চিৎকার করে বললেন, এ যে গ্রেনেড। দৃশ্যত এই গ্রেনেড শেখ হাসিনাকে তাক করে ছোড়া হয়েছিল। ট্রাক-ডেকের ওপরে আমরা চমকে উঠলাম; কিন্তু বিমূঢ় হলাম না। চলবে... লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা
×