ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ মাধ্যমিকে উঁচু ফল

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২১ আগস্ট ২০১৬

উচ্চ মাধ্যমিকে উঁচু ফল

গত বছরের তুলনা টানলে বলতেই হবে এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেশ ভাল হয়েছে। সর্ববিচারেই উন্নতি সাধিত হয়েছে। বলা যায় সাফল্যের রেকর্ডই সৃষ্টি হয়েছে। পাসের হার প্রায় পঁচাত্তর শতাংশকে সন্তোষজনক না বলার কারণ নেই। আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও অতীতের সাফল্যকে অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৯৬ জন। ইংরেজী বিষয়েও অধিকাংশ শিক্ষা বোর্ডের ফল গতবারের চেয়ে ভাল, যা সার্বিক ফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে। মেয়েদের সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবার দারুণ সুসংবাদ। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার প্রায় ২ শতাংশ বেশি। গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় একরকম ফল বিপর্যয়ই ঘটেছিল। সবমিলিয়ে বলা যেতে পারে আগের এক দশকে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলে গতবারই প্রথম ছন্দপতন ঘটেছিল। যশোর বোর্ডে অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি। অথচ এবার যশোর বোর্ডে পাসের হার প্রায় ৩৭ শতাংশ বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলের ওপর। গতবার সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ফল বিপর্যয়ের জন্য বিএনপি ও জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধকে দায়ী করা হয়েছিল। ওই বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও দেশবাসী সম্যক অবগত। যা হোক, পেছনের দিকে না তাকিয়ে সুন্দর আগামীর দিকেই চোখ ফেরানো যাক। এ বছর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বড় ধরনের বিঘœতা সৃষ্টি হয়নি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় শিক্ষাবর্ষ সুন্দরভাবেই এগিয়েছে। তার সুফলও প্রত্যক্ষ করা গেল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলে। এবারই প্রথম জিপিএর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক নম্বর প্রকাশ করা হলো। এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের বড় ধরনের একটি বাঁক ফেরার কেন্দ্র। এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর এক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। কাজেই ভাল ফলের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকম-লীসহ সংশ্লিষ্ট সবার যতœবান ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে অনুত্তীর্ণদের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি আনার চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করা দরকার। মনে রাখা চাই, এসএসসিতে বেশ ভাল ফল করেও শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এইচএসসিতে এসে পিছিয়ে পড়ে। নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হাওয়ার পর থেকে কয়েক বছর ধরে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ক্রমাগত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার গুণগতমান কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে থাকে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে, পরীক্ষার উত্তরপত্র ‘উদারভাবে’ মূল্যায়নের ফলে বছরের পর বছর পাসের হার ও ভাল ফলের এমন দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান হচ্ছে। অবশ্য বরাবরের মতো শিক্ষামন্ত্রী এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা, যারা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। শিক্ষার উন্নত গুণগতমান সে কারণে জরুরী তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষার মান বাড়ানোর কথা আমরা বারবার বলে আসছি। সে লক্ষ্যে প্রয়োজন মানসম্মত শ্রেণীকক্ষ, যা নির্ভর করে মানসম্পন্ন শিক্ষকের ওপর। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। দেশের সেই ভবিষ্যত নাগরিকদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তাদের মান হতে হবে প্রশ্নাতীত। পরীক্ষার ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার মানের উন্নতি হলে পরীক্ষার ফলেরও উন্নতি হবে- এটা সাধারণ হিসাব। কিন্তু রাতারাতি শিক্ষার মান বাড়ানো অসম্ভব। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
×