ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলার এক যুগ

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২১ আগস্ট ২০১৬

গ্রেনেড হামলার এক যুগ

আজ ২১ আগস্ট। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার দ্বাদশতম বর্ষ। বাংলাদেশের রাজনীতির সমসাময়িক ইতিহাসের জঘন্য ও কলঙ্কিত দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির মিছিল-পূর্ব এক সমাবেশে এই হামলা চালানো হয়। হামলার মূল টার্গেট ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। নৃশংস সেই হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। এতে দলটির কয়েক শ’ নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হন। এই হামলার শিকার বহু লোক আজও শরীরে ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ভিন্ন আদর্শ ও ভিন্ন মত থাকবে। সেই মত জনমুখী করতে রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তা তুলে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন দলকে নিশ্চিহ্ন করা বা দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র কোন সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। হওয়া উচিতও নয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া যে এ ধরনের হামলা সম্ভব নয় তা এখন স্পষ্ট। তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার এ ঘটনার পর তদন্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়নি। বরং ঘটনার পর পরই সরকারের প্রভাবশালী মহল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ‘বিশেষ ভবনের’ সম্পৃক্ততার কথা, ঘটনার পর আলামত নষ্ট করা, এফবিআইয়ের তদন্ত টিমকে সহযোগিতা না করার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি পরে প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ‘জজ মিয়া’ নাটকের অবতারণা করেছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই ঘটনার তদন্ত করে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আদালত এই বর্বরোচিত হত্যাকা-ের অধিকতর তদন্ডের নির্দেশ দেয়। পুনর্তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে একটি সম্পূরক চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হয়। চার্জশীটে অভিযুক্ত হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লৎফুজ্জামান বাবর, ৪ দলীয় জোট সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৩০ জন। ফলে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জন। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে পলাতকদের বিরুদ্ধে আদালত দেশের জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে। বর্তমানে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণসহ আইনী প্রক্রিয়ার সকল কার্যক্রম শেষ, রায় প্রকাশের অপেক্ষায়। আদালত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন দু’এক মাসের মধ্যেই এই রায় ঘোষিত হতে পারে। ২১ আগস্টের নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের বিচারের রায় দ্রুত প্রত্যাশা করে দেশবাসী। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তাদের উচিত দল-মতের উর্ধে উঠে দ্রুত এই গ্রেনেড হামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করা। এই হামলার নেপথ্যে কারা ছিল, হামলার উদ্দেশ্য কি ছিল, হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড কোথা থেকে এসেছে এবং এই ঘটনায় তৎকালীন সরকারের সম্পৃক্ততা এবং এখনও আন্দোলনের নামে কারা এসব গ্রেনেড-বোমা ব্যবহার করেÑ এসব তথ্য এখন অনেকটাই স্পষ্ট এবং সবাই কমবেশি অবহিত। সুতরাং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। এ ধরনের বর্বর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক এই প্রত্যাশা সবার। দেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার প্রয়োজন। বোমা বা গ্রেনেড দিয়ে কাউকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। এ ধরনের অপরাজনীতিতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটে না। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কলুষিত করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় প্রকাশ এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক- দেশবাসী এটাই প্রত্যাশা করে।
×