ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফারিসা মাহমুদ

তিয়াই

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ২০ আগস্ট ২০১৬

তিয়াই

তিয়াই থাকে মিরপুরে। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। ওর মা ছবি আঁকে। তাই বাসায় থাকে না প্রায়ই। নদীর ধারে, খোলা মাঠে, বাজারে, অনেক রকম মানুষ যেখানে থাকে সেখানেই ওর মা ছবি আঁকতে যায়। আর তিয়াই থাকে আসমা আর কোহিনুর খালার সঙ্গে। কোহিনুর খালা রান্না করে, আর আসমা ঘর গুছায় আর তিয়াইর সঙ্গে থাকে। আর আছে জুলিয়েট। জুলিয়েটকে তিয়াইর দাদু উপহার দিয়েছিল ওর জন্মদিনে। জুলিয়াট হচ্ছেÑ খুব সুন্দর চকচকে সবুজ গা আর লাল টুকটুকে ঠোটের টিয়া পাখি। এতো সুন্দর! জুলিয়েট, বলো তো আমি কোথায় গিয়েছিলাম? স্কুলে। তুমি কখনও স্কুলে গিয়েছ? পাখিদের কি স্কুল থাকে? তোমাদের স্কুল কি গাছে ডালে হয়? তিয়াই স্কুল থেকে এসেই জুলিয়েটের সঙ্গে রোজ গল্প জুড়ে দেয়। আবার বিকেলে যখন নিচে সাইকেল চালাতে যায় তিয়াই তার আগেও গল্প করে। আমার চুলে ঝুটি করলে কেমন লাগে? আমার কিন্তু একদম ভাললাগে না, মাথায় ব্যথা করে। আর আমাদের সামনের বাসায় যে একটা ছেলে আছে সাহিল নাম, ও খুবই দুষ্টু জানো? খালি থুতু দেয়। আমি ওর সঙ্গে একদম মিশি না। এমন কত যে কথা তিয়াইর। জুলিয়াটকে ওর সবই বলতে হবে। সারাক্ষণ জুলিয়েটের সঙ্গে গল্প করে ও। সেদিন, তিয়াইর মা মেঝেতে বসে বই পড়ছিল, তিয়াই এসে মায়ের কোলে বসে। ইশ! মায়ের গায়ে কি মিষ্টি গন্ধ! আর মায়ের লম্বা চুল নিয়ে গোল্লা গোল্লা বানিয়ে খেলতে যে কি ভাললাগে! মা? হুম? ওর মা বই রেখে তিয়াইকে চুমু দেয়, আদর করে কাছে টেনে নেয়। আমার চুল তোমার মতো এতো লম্বা হবে কবে? হবে বেবী, খুব তাড়াতাড়িই হবে। এখনই তো পিঠ পর্যন্ত লম্বা। মা, আর কখনই আমি চুল কাটতে চাই না। তারপরে আমার চুল রূপকথার সেই রাপুনজেলের মতো অনেক অনেক লম্বা হবে। মা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। আচ্ছা, রাপুনজেলের মতো লম্বা চুলই রাখিস। তিয়াই, তুই পাখিটাকে ছেড়ে দে মা। কি বলছ মা? আমি জুলিয়েটকে অনেক ভালবাসি। আজ মা বাসায়। তিয়াই বিকেলে সেজেগুজে আসে, মা আমি নিচে খেলতে যাই? সাইকেল চালাব। আজ যেও না বেবী। চল আমরা টিভি দেখি। তারপর তিয়াই আর মা টিভিতে ‘শিনচেন’ কার্টুন দেখল। তিয়াইর প্রিয় কার্টুন ‘শিনচেন’ আর ‘নিনজা হাতুরি’ আর ‘অগি আর দ্য কক্রোচেস’ ভাললাগে না তিয়াইর। একদিন, দুইদিন করে প্রায় এক সাপ্তাহ হয়ে গেল ও কেবল স্কুলে যায় আর টিভিতে কার্টুন দেখে। নিচে খেলেতেই যেতে পারছে না। মা কেমন গম্ভির হয়ে আছে। নিচে খেলতে যাবে এই কথা মাকে বলতেই তিয়াইর ভয় লাগছে। আরও দুদিন পরে তিয়াই আর থাকতেই পারল না। মায়ের কাছে গিয়ে কেঁদেই ফেলে। কি হয়েছে বেবী, কাঁদছো কেন? আমার কিছুই ভাল লাগছে না মা। আমি নিচে খেলতে যেতে চাই। কতদিন আমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলি না, সাইকেল চালাই না... তোর কি কষ্ট হচ্ছে তিয়াই? হ্যা মা, খুব কষ্ট হচ্ছে, বন্ধুদের জন্যে, খেলার জন্যে, থুতু দিত যে সাহিল ওর জন্যেও। তিয়াই মন দিয়ে আমার কিছু কথা শুন। কান্না বন্ধ কর। ইচ্ছে করেই তোকে আমি এই কয়দিন নিচে খেলতে যেতে দেইনি। সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকতে তোর যে কষ্ট হয়েছে এবার নিশ্চয়ই তুই বুঝতে পারবি জুলিয়েটের কষ্ট। ও সারাদিন খাঁচায় আটকে আছে, উড়তেও পারছে না, কোথাও যেতেও পারছে না। ওর মা, ভাইবোন, বন্ধুও নেই। তুই ওকে যতই ভালবাসিস ও কিন্তু খাঁচায় আটকে আছে। বুঝতে পারছিস? তিয়াইর চোখের কোণে জল নিয়ে মাথা ঝাকায়। বুঝতে পারছে ও। মা আমি জুলিয়েটকে আটকে রাখব না। হ্যাঁ বেবী। ভালবেসে আটকে রাখতে হয় না। জুলিয়েটকে আকাশে উড়তে দে, মুক্ত করে দে। তিয়াইর আজ খুব ভাল লাগছে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলছে ও। জুলিয়েটকে খাচা থেকে মুক্ত করেছে তিয়াই। তাই খেলতে খেলতে মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাচ্ছে তিয়াই। জুলিয়েটকে কি দেখা যাবে আকাশে?
×