ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডারসন ;###;অনুবাদ : সালেহা চৌধুরী

একটি ফারগাছের কথা

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২০ আগস্ট ২০১৬

একটি ফারগাছের কথা

গভীর অরণ্যে একদিন সকালে একটি ছোট্ট ফারগাছ জন্ম নিল। ফার একটি মজার গাছ। ও না হলে ক্রিসমাস হয় না। কারণ বাড়িতে বাড়িতে বসার ঘরে ক্রিসমাসে ফারগাছ রাখা হয় বড় টবে। আলোর বাল্ব দিয়ে সাজানো হয়। আর ক্রিসমাসের সমস্ত উপহার রাখা হয় ফারগাছকে ঘিরে। অরণ্যের সেই ছোট্ট ফারগাছের চারপাশে বড় বড় নানাসব গাছ ছিল। ছোট্ট ফারগাছটি ভাবত কবে আমি ওদের মতো বড় গাছ হব। আর বড় হলে মাথা উঁচু করে আমি অনেক কিছু দেখতে পাব। অনেক দূরের জগত, অনেক দূরের দৃশ্য। এই ভাবতে ভাবতে মন খারাপের যাতনায় ওর মাথার ওপর যে বিশাল সূর্য তাকে দেখতে ভুলে যেত সেই ছোট্ট ফারগাছটি। আর ভুলে যেত অরণ্যের স্বাধীনতা ও আলোরোদের কথা। মাথার ওপরে যে নীল আকাশ তাকেও দেখতে মনে থাকত না ওর। শীতকালে চারপাশের তুষারে একটি ছোট্ট খরগোশ লাফিয়ে উঠত ফারগাছের শরীরে। কিন্তু খরগোশের মতো তুলতুলি মিষ্টি প্রাণীর জন্যও কোন ভালবাসা বা মায়া ছিল না ফারগাছের। এই করতে করতে দুটো শীত চলে গেল। তৃতীয় শীতের পর সেই ছোট্ট ফারগাছ একটু বড় হলো। তখন আর সেই তুলতুলি খরগোশ ফারগাছের শরীরে লাফিয়ে উঠতে পারত না। ফারগাছের চারপাশে ঘুরত। আমি আরও লম্বা হব আর আরও বড়। মনে মনে ভাবত সেই ফারগাছ। বড় হওয়া, লম্বা হওয়াই ছিল তার একমাত্র বাসনা। প্রতি বসন্তে কাঠুরে এসে বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যেত। একটি বড় ঠেলা গাড়িতে সেই গাছ বসিয়ে ওরা চলে যেত অন্য কোথায়। ছোট্ট ফারগাছ ভাবত কোথায় যায় এসব বড় বড় ফারগাছ ঠেলাগাড়িতে চেপে? ওরা যায় কোথায় বলতো? শালিককে জিজ্ঞাসা করে সেই ফারগাছ। Ñ আমি জানি কোথায় যায়। বলে সেই শালিক। Ñ ওইসব বড় বড় গাছ দিয়ে জাহাজের পাল বানানো হয়। আর সেই পালে বাতাস লেগে জাহাজ ছুটে চলে সাগরে। সাগরে উড়তে উড়তে আমি এমনি বড় বড় পাল আর জাহাজ দেখেছি। বলে সেই শালিক। কি সাংঘাতিক। আমারও ইচ্ছে করছে এমনি জাহাজের পাল হয়ে সাগরে ভ্রমণ করতে। দেশ থেকে দেশে পাড়ি দিতে। শালিক বিরক্ত হয়ে বলেÑ তোমার যা আছে তাই নিয়ে গর্ব করতে পার তুমি। সুখে থাকতে পার। বুঝতে পারি না তুমি সারাদিন এত ঘ্যান-ঘ্যান প্যান-প্যান কর কেন। সূর্য তোমাকে আলো দেয়, আর বাতাস তোমার শরীরে পাতায় ফিসফিস সুর তুলে কত কিছু বলে। এসব উপভোগ করতে পার না তুমি? শালিকের এসব শোনার পরেও সেই বোকা ফারগাছ খুশি হতে পারে না। ক্রিসমাসের সময় হয়। কাঠুরে অরণ্যের নানাসব গাছ ডাল কেটে নিয়ে আবার ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে কোথায় যেন রওনা দেয়। ওরা কোথায় চলেছে বলতো? কিচকিচে চড়–ইকে এবার প্রশ্ন করে সেই ফারগাছ। ওরা শহরে চলেছে। বলে চড়–ইয়ের দল। আমরা শহরের বাড়ির জানালা দিয়ে দেখেছি এসব গাছগুলোকে আলোর বাতি আর চকচকে রঙিন সব কাগজ দিয়ে সাজানো হবে। (চলবে)
×