ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টোকিও অলিম্পিকের পরই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান ডাচ্ তারকা এ্যাথলেট

অলিম্পিকের বড় মঞ্চে ভাগ্যও দরকার ॥ শিপার্স

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২০ আগস্ট ২০১৬

অলিম্পিকের বড় মঞ্চে ভাগ্যও দরকার ॥ শিপার্স

এবার হাসলেন ডেফনে শিপার্স, ২০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালে ট্র্যাকে নেমিছিলেন স্বর্ণপদকের প্রত্যাশায়। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়? এ্যালেইন টম্পসনের পেছেনে থেকে সন্তুষ্ট থাকলে রুপার মেডেল জিতে। ব্রাজিল সময় বৃহস্পতিবার রাতে পদকের মঞ্চে জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় বেশ প্রাণবন্ত দেখাচ্ছিল। মুখে উজ্জ্বল হাসি। লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আগেরদিন কেঁদেছিলেন। বলেছিলেন, আমি পারলাম না, এটাই দেখল সবাই। অল্পের জন্য ছিটকে গেলাম স্বর্ণপদক থেকে। যেটাই ছিল আমার টার্গেট। মেনে নিতে পরছি না, মনকে সান্ত¡না দিতে পারছি না রৌপ্য জিতে। চারদিন আগে ১০০ স্প্রিন্টের ফাইনালে পদকের ধারে কাছে যেতে পারিনি। হয়েছিলাম পঞ্চম। যদিও ১০০ মিটারের রেসে আমি সোনার পদক জিততে পারব না জানতাম। কিন্তু একেবারেই পদকহীন দিন কাটাতে হবে ভাবিনি। পঞ্চম হওয়াটা ক্যারিয়ারের একটা বাজে রেজাল্ট। ফলে ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছিলাম ২০০ মিটারে স্বর্ণ জেতার। এই রেসে আমি পদক পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু সেটা প্রত্যাশিত নয়। জীবনের প্রথম অলিম্পিকস খেলতে এসে অচেনা একটা মেয়ে আমাকে পেছনে ফেলে দিল। তিনি জ্যামইকার এ্যালেইন টম্পসন। রিও গেমসের দ্রুততম মানবী ২০০ মিটারেও তার শেষ ঝলকটা দেখিয়ে দিলেন স্বর্ণপদক জেতে। রাতে পদক বিতরণের সময় ৫৭ হাজার দর্শকের রিওর অলিম্পিক পার্ক কানায় কানায় পরিপূর্ণ। জায়ান্ট স্ক্রিনে বার বার দেখাচ্ছিল ওয়ার্মআপ জোনে নানা অঙ্গভঙিতে দৌড়াচ্ছেন উসাইন বোল্ট। মুখে হাসি লেগেই আছে। যেন ফাইনালের আগেই জিতে গেছেন ২০০ মিটার স্প্রিন্টের স্বর্ণপদক। গা গরমের ফাঁকে ফাঁকে অদ্ভুত একটা ড্যান্স করছিলেন। আর নিজে নিজেই হাসছিলেন বোল্ট। বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সের ইতিহাসে সেরার সেরা আসনটি যে তার দখলে। এ হাসি তো তার মুখেই মানায়। পদক বিতরণের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল এ্যাথলেটিক্সের কয়েকটি ইভেন্টের সেমিফাইনাল আর ফাইনালের। রিলে, হ্যামার থ্রো, বর্ষা নিক্ষেপ ইত্যাদি। ফাঁকে ফাঁকে জায়ান্ট স্ক্রিনে বোল্ট ফোঁকাস। এক ঝলকের দেখাতেই করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠছিল গ্যালারি। বোল্ট নামবেন অরেকটি ‘ট্রিপল’ পূরনের লক্ষ্যে। ঐতিহাসিক সেই রেস দেখতেই অধীর অপেক্ষায় দর্শক। এরই মধ্যে পদক নিয়ে ফিরলেন ডাচ্কন্যা শিপার্স। এ্যালেইন টম্পসন ডাবল মারলেও এদিন মিডিয়া ফোঁকাসে ছিলেন ২০১৪ ইউরোপের বর্ষসেরা নারী এ্যাথলেট ছয় ফুট উচ্চতার হল্যান্ডের ডেফনে শিপার্স। ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে তার না পরার অনুভূতি জানতেই অঘোষিত মিডিয়া কনফারেন্স। ডাচ্ জাতীয় পতাকার মতোই ড্রেস। কমলা রঙের টি-শার্ট আর হাফপ্যান্ট, আগেরদিনের চেয়ে আজ আপনাকে বেশ খুশি মনে হচ্ছে, রহস্যটা কী? সোনালি রঙের চুল, হলদে গায়ের রংটা তখন অলিম্পিক পার্কের ফ্লাড লাইটের আলোয় আরও ঝকঝক করছিল। আফসোস করে আর লাভ কি। যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছি। মেনে নিয়েছি ভাগ্যকে, বললেন এই তারকা এ্যাথলেট, যিনি ২০১৫ ডাচ্ বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদও। সুন্দর মুখটায় তখনও হাসির রেখা। নিজেই যোগ করলেন, রিওতে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। টোকিও অলিম্পিকের জন্য নিজেকে তৈরি করাই এখন আমার মূল কাজ। আশা করছি রিওতে যা পারিনি পরবর্তী অলিম্পিকে সেটা করে দেখাব। ১৯৯২ সালের ১৫ জুন জন্ম নেয়া ২৪ বছর বয়সী শিপার্স অনন্য উচ্চতায় থেকেও এবার পারলেন না। আগামী অলিম্পিকে বয়স বাড়বে। এটার প্রভাব পড়বে কি টোকিও অলিম্পিকসে। হ্যাঁ, বয়স বড় একটা ফ্যাক্টর, আমি তো মনে করি বর্তমানে যে রকম আছি, সে রকমই থাকব। একটু বয়স বাড়বে এই যা। তবে বয়সের প্রভাব আশা করি পরবে না। দেখবেন আমি ঠিকই আসন ছিনিয়ে নেব। রিওর শিক্ষা ভাল করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। মনের জেদটা ভাল খেলার পাথেয় হয়ে থাকবে। ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের পাশাপাশি হ্যাপ্টথলন শিপার্সের প্রিয় ইভেন্ট। রিওতে পা রাখার আগে ২০১৫ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটার রেসে ২১ দশমিক ৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন ইউরোপিয়ান রেকর্ড গড়ে। নিজের সেই সেরা টাইমিংটা ধরে রাখতে রাখতে পরেননি রিও গেমসে। আর সেটা অক্ষুণœœ রাখতে পারলে অবধারিত স্বর্ণপদক। চ্যাম্পিয়ন এ্যালেইন টম্পসন ২১ দশমিক ৭৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়ে নিলেন ২০০ মিটারসহ টানা দুই স্বর্ণপদক গলায় ঝুলিয়ে। আর নিজের টাইমিংয়ের চেয়ে ২৫ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে টম্পসনের ঠিক পেছনে পড়ে রইলেন শিপার্স। ২০১০ বিশ্ব জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হ্যাপ্টথলনে সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে শিপার্সের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। আর ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান জুনিয়র এ্যাথলেটিক্সের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সাফল্য আর সাফল্য। পরের বছর কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ডাচ রেকর্ড ভেঙ্গে জয় করেন সোনার পদক। ৪ল্প১০০ মিটার রিলেতেও একই সাফল্য, স্বর্ণ। ২০১৩ সালে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে মস্কো বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে। হ্যাপ্টাথলনে স্বর্ণপদকের পরিবর্তে ব্রোঞ্জ। স্প্রিন্টও ভাল করতে পারেননি। কিন্তু নিজেকে ফিরে পান ২০১৪ ইউরোপিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপে। এই আসরে রীতিমতো বাজিমাত করেন ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের সোনার পদক জিতে। ফের ঘুরে গেল খেলোয়াড়ি জীবনের মোড়। প্রাদপ্রদীপের আলোয় চলে এলেও ২০০৪ এ্যাথেন্স অলিম্পিকে তার স্বপ্ন কেড়ে নেয় ইনজুরি। ২০০৮ লন্ডন অলিম্পিকেও প্রত্যাশিত দ্যুতি ছড়াতে পারেননি। কিন্তু পরের বছর ২০১৫ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এবং ২০১৬ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতে রিও অলিম্পিকসের মূল ফোঁকাসে চলে আসেন। কিন্তু যা তিনি করতে চেয়েছিলেন সেটা পারলেন না।
×